ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) প্রক্রিয়াকে কেন্দ্র করে রবিবার পশ্চিমবঙ্গে রাজনীতির স্বর আরও চড়ল। আবার এক কোটি নাম বাদ যাওয়ার সম্ভাবনার কথা বলে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ‘অনুপ্রবেশ-তত্ত্বে’ শাণ দিয়েছেন। উল্টো দিকে, নাগরিক এবং বুথ লেভল অফিসারদের (বিএলও) উপরে ‘এসআইআর-চাপে’র কথা বলে নির্বাচন কমিশনকে ফের নিশানা করেছে তৃণমূল কংগ্রেস।
বিরোধী নেতা শুভেন্দু এ দিন পূর্ব মেদিনীপুরের মুগবেড়িয়ায় বলেছেন, “এক কোটি ভোটারের নাম বাদ যাবে। মৃত, একাধিক জায়গায় থাকা এক নাম, অনুপ্রবেশকারীদের নাম ভোটার তালিকায় থাকবে না। অনুপ্রবেশকারীদের বলব, তাড়াতাড়ি পালাও। না হলে অসম, উত্তরপ্রদেশে যা হয়েছে, তা-ই হবে এখানেও।” তৃণমূলের ভোট-কৌশলী সংস্থা ‘কারিকুরি’ করলেও, কিছু করতে পারবে না বলেও দাবি করেছেন তিনি। তৃণমূল নেতৃত্বের উদ্দেশে শুভেন্দুর সংযোজন, “আর কয়েক দিন ফরফরানি করে নিন। ১৫ ফেব্রুয়ারির পরে কোথায় থাকেন দেখব। সবাই চেনেন, আমি কেমন।”
পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল কমিশন ও দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারকে (সিইসি) নিশানা করা অব্যাহত রেখেছে। তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় শ্রীরামপুরে বলেছেন, “নির্বাচন কমিশনার বিএলও-দের উপরে অসম্ভব চাপ তৈরি করছেন। এখনও পর্যন্ত ৪৩ জন চাপের শিকার, যার মধ্যে ২০ জন আত্মঘাতী হয়েছেন। বৈধ ভোটারদের উপরেও চাপ তৈরি করা হচ্ছে।” পাশাপাশি, জ্ঞানেশের উদ্দেশে কল্যাণ বলেছেন, “দিল্লিতে ঠান্ডা ঘরে বসে না-থেকে পশ্চিমবঙ্গের গ্রামে ঘুরুন! ঠান্ডা ঘরে বসে জ্ঞান দেওয়া যায়।” এর সঙ্গেই গত বারের এসআইআর ২০০২-এর তালিকাকে ভিত্তি-বর্ষ ধরে এ বারের এসআইআর করাটাকে ‘বেআইনি’ বলে দাবি করেছেন আইনজীবী-সাংসদ। এসআইআর সংক্রান্ত কাজের চাপে কৃষ্ণনগরে যে বিএলও-র অপমৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে, এ দিন তাঁর বাড়িতে গিয়ে ওই ঘটনার জন্য কমিশনকে দায়ী করেছে সিপিআই (এম-এল) লিবারেশনের প্রতিনিধি দল। নদিয়ার জেলাশাসক তথা জেলা নির্বাচনী আধিকারিকের কাছে আজ, সোমবার দাবিপত্র দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন লিবারেশনের জেলা সম্পাদক জয়তু দেশমুখ।
এসআইআর নিয়ে সরব হয়েছে বিভিন্ন নাগরিক সংগঠনও। ‘এসআইআর বিরোধী গণ-আন্দোলন’ নামে একটি মঞ্চ আয়োজিত সভায় যোগ দিয়ে রাজনীতিবিদ যোগেন্দ্র যাদবের অভিযোগ, “সাধারণ মানুষের থেকে যে সব নথি কমিশন চাইছে, তা নেওয়ার পরে যাচাইয়ের নির্দিষ্ট পদ্ধতি নেই। এটা বিপজ্জনক।” মানবাধিকার কর্মী সুজাত ভদ্র প্রশ্ন তুলেছেন, “প্রতি বছরের মতো, ২০২৪-এ লোকসভা ভোটের পরে কমিশন তিনটি রাজ্য বাদে বিশেষ সংক্ষিপ্ত সংশোধন (এসএসআর) করেছে। তা হলে, এখন এসআইআর কেন? নাগরিকত্ব যাচাইয়ের ক্ষমতাও কমিশনের নেই।”
বিএলও-‘চাপে’র প্রশ্নে তৃণমূল, বিজেপি, কমিশন সবাইকেই এক পঙ্ক্তিতে বসিয়ে সরব হয়েছে সিপিএম। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর দাবি, “কমিশনের অপদার্থতায় বিএলও-দের উপরে মারাত্মক চাপ তৈরি হয়েছে। বিজেপি বলছে, ভুল হলে জেলে ভরব। আবার তৃণমূলের চাপ যে, কারও নাম বাদ গেলে জবাই, গুলি করে দেব! বিএলও-দের চিঁড়ে-চ্যাপটা অবস্থা।” কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য অধীর চৌধুরীর প্রশ্ন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সব আধিকারিককে এই প্রক্রিয়া থেকে তুলে নিচ্ছেন না কেন? আপনি (মমতা) কলকাতার নগরপালকে বাঁচাতে রাত জেগে আন্দোলন করেছিলেন। বিএলও-রা আপনার কর্মচারী। তাঁদের জন্য আন্দোলন করতে পারছেন না? কমিশন বলছে রাজ্য তার ভূমিকা পালন করছে না। রাজায়-রাজায় যুদ্ধে উলুখাগড়াদের প্রাণ যাচ্ছে!”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)