Advertisement
E-Paper

লোকসভা ভোটের ফলই আশা বিজেপি সভাপতির

গত লোকসভা ভোটে যে বিধানসভা কেন্দ্রে এগিয়ে ছিল গেরুয়া শিবির, সেই খড়্গপুর সদরেই এ বার লড়ছেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। বরাবর কংগ্রেসের ঘাঁটি খড়্গপুর সদরে ‘চাচা’ হলেন ‘মিথ’। তবু ‘মিনি ইন্ডিয়া’য় পদ্ম ফোটানোর চ্যালেঞ্জ নিচ্ছেন দিলীপবাবু।

দেবমাল্য বাগচী

শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৬ ০১:৫৩
দিলীপ ঘোষ।—নিজস্ব চিত্র।

দিলীপ ঘোষ।—নিজস্ব চিত্র।

গত লোকসভা ভোটে যে বিধানসভা কেন্দ্রে এগিয়ে ছিল গেরুয়া শিবির, সেই খড়্গপুর সদরেই এ বার লড়ছেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। বরাবর কংগ্রেসের ঘাঁটি খড়্গপুর সদরে ‘চাচা’ হলেন ‘মিথ’। তবু ‘মিনি ইন্ডিয়া’য় পদ্ম ফোটানোর চ্যালেঞ্জ নিচ্ছেন দিলীপবাবু।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে খড়্গপুর সদরের প্রার্থীকে নিয়ে বিজেপির যুব মোর্চার কর্মীরা রীতিমতো উৎসাহিত। এই শহরে বিজেপি পুরনো দল। ১৯৮০ সাল থেকে মিশ্র সংস্কৃতির এই শহরে বিজেপির কার্যকলাপ চলছে। মোদী হাওয়ায় গত লোকসভা নির্বাচনে খড়্গপুরে প্রথম স্থানে ছিল বিজেপি। প্রায় ৩৪ শতাংশ ভোট পেয়েছিল বিজেপি। আর বামফ্রন্ট ২০ শতাংশ ও কংগ্রেস ১৪ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। খড়্গপুরের ৩৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৯টিতে সে বার ‘লিড’ পেয়েছিল বিজেপি।

তবে গত পুরভোটে চাকা ঘুরে যায়। বিজেপি নেমে আসে প্রায় ২১ শতাংশ ভোটে। আর বাম ও কংগ্রেস পায় প্রায় ৪৭ শতাংশ ভোট। তবু এই কেন্দ্র নিয়ে আশা ছাড়ছে না পদ্ম-শিবির। পুর-নির্বাচনে বিজেপি-র অন্দরের ক্ষোভ ছিল প্রধান কাঁটা। এ বারও সেই সমস্যা রয়েছে। তবু কেন এখানে প্রার্থী করা হল বিজেপি-র রাজ্য সভাপতিকে?

দল সূত্রে খবর, এই শহরে প্রচুর অবাঙালি ভোট। সেই ভোট বিজেপি-র দিকে আসতেই পারে। তার উপর দিলীপবাবু নিজে বাঙালি হওয়ায় বাঙালিদের মধ্যেও প্রভাব পড়বে। তার উপর দিলীপবাবু এই জেলার বাসিন্দা। পুরভোটে বারবার খড়্গপুরে এসেওছেন। দলের এক সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশেই দিলীপবাবু নির্বাচনী ময়দানে পা রেখেছেন। তাঁকে গোপীবল্লভপুর বা খড়্গপুর সদর, দু’টো কেন্দ্রের যে কোনও একটিতে দাঁড়াতে বলা হয়েছিল। গোপীবল্লভপুরে দিলীপবাবুর দেশের বাড়ি। তবে দিলীপবাবু নিজেই খড়্গপুর সদরেই দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। আজ, শুক্রবার মালঞ্চ প্রেমহরি ভবনে কর্মিসভাও করবেন দিলীপবাবু।

বিজেপির কর্মী শৈলেশ শুক্ল বলেন, “অন্য কেউ প্রার্থী হলে ক্ষোভ বাড়ত। কিন্তু দিলীপ ঘোষ প্রার্থী হওয়ায় ক্ষোভ থাকল না। রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতারা আসবেন। এখানে আমরা বাঙালি-অবাঙালি ও তৃণমূলের বিক্ষুব্ধদের ভোট পাব।”দিলীপবাবু নিজে বলছেন, ‘‘খড়্গপুরে চাচা একটি অন্যতম ব্যক্তিত্ব। কিন্তু তাঁর বয়স হয়েছে। চলতে পারেন না। তাছাড়া কংগ্রেসের গলা শুকিয়ে গিয়েছে। তাই কংগ্রেস নয় তৃণমূলের সঙ্গে লড়াই হবে। আমরা জিতব।’’ কিন্তু কোন অঙ্কে জয়ের আশা দেখছেন? দিলীপবাবুর কথায়, “গত লোকসভায় ভাল ফল করেছিলাম। কিন্তু পুরসভায় আমাদের কাউন্সিলরদের বন্দুকের মুখে দলত্যাগ করতে হয়েছিল। একদিকে মাফিয়া ও অন্যদিকে পুলিশকে কাজে লাগিয়েছিল তৃণমূল। মানুষ এগুলি ভাল চোখে নেয়নি। তাই অশুভ শক্তিকে পরাস্ত করতে দল আমাকে এই কেন্দ্রের প্রার্থী করেছে।’’

কিন্তু বিরোধীদের দাবি, সংখ্যালঘু ভোট বিজেপির বিপক্ষে যাবে। এ দিন সিপিএমের জেলা সম্পাদক তরুণ রায় বলেন, “বিজেপির প্রার্থী আরএসএস থেকে এসেছেন। ওই সংগঠন দেশে বিভেদকামী শক্তি হিসেবে পরিচিত। আবার পুরভোটে তৃণমূলের সন্ত্রাস খড়্গপুর শহরের মানুষ দেখেছে। তাই খড়্গপুরের মতো মিশ্র সংস্কৃতির শহরে আমাদের ধর্ম নিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক জোটের জয় নিশ্চিত।’’

এই কেন্দ্রের বরাবরের বিধায়ক যিনি, সেই ‘চাচা’ জ্ঞানসিংহ সোহন পালেরও তেমন মাথাব্যথা নেই। তাঁর কথায়, “এই নির্বাচনে ব্যক্তি কোনও ফ্যাক্টর নয়। আমাদেয় জয় নিশ্চিত।’’ পুরসভার বিরোধী দলনেতা রবিশঙ্কর পাণ্ডের আবার কটাক্ষ, “ভাবতে খারাপ লাগছে শহরে অন্য দলগুলি স্থানীয় প্রার্থী খুঁজে পাচ্ছে না। এটা শহরের অপমান।’’ তবে তৃণমূলের শহর সভাপতি দেবাশিস চৌধুরীর কথায়, “পুরসভা নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটে আমরা প্রথম ছিলাম। এ বার আমাদের ভোট আরও বাড়বে। ’’

এক সময় রাহুল সিংহও মেদিনীপুরে এসে লোকসভা নির্বাচনে লড়েছেন। তবে দাগ কাটতে পারেননি। এ বার দিলীপবাবুর সঙ্গে ভোট ময়দানে নেমে পড়েছেন দলের অন্য সেনাপতিরাও। দলের প্রাক্তন জেলা সভাপতি ধীমান কোলে প্রার্থী হয়েছেন শালবনিতে, প্রাক্তন জেলা সভাপতি অধুনা রাজ্য সম্পাদক তুষার মুখোপাধ্যায় প্রার্থী হয়েছেন মেদিনীপুরে, মহিলা মোর্চার জেলা সভানেত্রী তথা জেলার প্রাক্তন সভাধিপতি অন্তরা ভট্টাচার্য প্রার্থী হয়েছেন পিংলায়। বাম-কংগ্রেস যেখানে হাত ধরাধরি করে এখনও জেলার সব আসনে প্রার্থীর নাম জানাতে পারেনি, সেখানে প্রথম দফার তালিকা প্রকাশের দিনই পশ্চিম মেদিনীপুরের ১৯টি আসনের সবক’টিতে প্রার্থী দিয়েছে বিজেপি। বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়ে গিয়েছে প্রচারও। বিজেপির জেলা সভাপতি ধীমানবাবুর দাবি, “বেশ কয়েকটি আসনে জোর লড়াই হবে। কয়েকটি জিতবও!’’ কিন্তু কোন অঙ্কে? সদুত্তর এড়িয়ে দলের প্রাক্তন জেলা সভাপতি তুষারবাবুর মন্তব্য, ‘‘মানুষ বিজেপিকে চাইছেন! মানুষের কথাই শেষ কথা!”

ইতিমধ্যে দিলীপবাবুকে নিয়ে ক্ষোভ জন্মাতে শুরু করেছে। বিজেপির প্রবীণ নেতা তথা জাতীয় পরিষদ সদস্য প্রদীপ পট্টনায়েক বলেন, “১৯৮০ সাল থেকে অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলায় বিজেপিকে তিল-তিল করে বড় করেছি। কিন্তু দল আমার প্রতি অন্যায় করেছে। দিলীপ ঘোষ ভাল মানুষ। কিন্তু খড়্গপুরের মানুষ স্থানীয় প্রার্থী চেয়েছিলেন।’’ এই শহর থেকে প্রার্থী হিসেবে প্রদীপ পট্টনায়েক ও বিজেপি নেতা প্রেমচাঁদ ঝার নাম গিয়েছিল বলে বিজেপি সূত্রে খবর। কিন্তু এদের কাউকেই দল প্রার্থী করেনি। বৃহস্পতিবার নিজের বাড়িতেই ছিলেন প্রেমচাঁদ। তিনি অবশ্য বলছেন, “আমরা দলকে শহরে এমন মজবুত করেছি যে, দলের রাজ্য সভাপতি আমাদের প্রার্থী হয়েছেন। এটা আমাদের সৌভাগ্য।’’ আর তার সঙ্গেই থাকা দলের শহর সভাপতি গৌতম বেরা বলেন, “আমরা রাজ্য সভাপতিকে জেতানোর জন্য প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছি।’’

dilip ghosh BJP loksabha
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy