Advertisement
০২ মে ২০২৪

বিশ্বসাথেই মুক্তি খুঁজছেন নিহত ব্লগারের স্ত্রী

তিন বছর আগের সেই দিনটাতেই বন্ধুর ডাকে ঢাকা থেকে কলকাতায় আসার কথা ছিল তাঁদের। শরীর সামান্য বেহাল থাকায় শেষ পর্যন্ত পরিকল্পনা বদলান তাঁরা।

বন্যা আহমেদ। —নিজস্ব চিত্র।

বন্যা আহমেদ। —নিজস্ব চিত্র।

ঋজু বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৮ ০৩:২৪
Share: Save:

তিন বছর আগের সেই দিনটাতেই বন্ধুর ডাকে ঢাকা থেকে কলকাতায় আসার কথা ছিল তাঁদের। শরীর সামান্য বেহাল থাকায় শেষ পর্যন্ত পরিকল্পনা বদলান তাঁরা।

বাংলাদেশে মৌলবাদের বিরুদ্ধে মুক্তচিন্তার লড়াই নিয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শনের ফাঁকে বলছিলেন বন্যা আহমেদ। সেটা ছিল ঢাকার একুশে বইমেলার শেষ সন্ধ্যা। সেখানেই আততায়ীর চাপাতিতে নিহত হন বন্যার জীবনসঙ্গী, মৌলবাদ-বিরোধী ব্লগার অভিজিৎ রায়। ক্ষতবিক্ষত হয়েও কোনও মতে বেঁচে যান বন্যা।

বাংলাদেশে মৌলবাদী হামলার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর একটি মুখ এখন তিনি নিজেও। বিজ্ঞান ও সমাজচেতনা বিষয়ে বিশিষ্ট ব্লগার বন্যা দীর্ঘদিনের আমেরিকা-প্রবাসী। বলছিলেন, ‘‘সে-বার ঢাকায় ফেরার ইচ্ছেই ছিল না। অভির আবদারে কেন যে রাজি হলাম! কেন যে সে-দিন কলকাতায় গেলাম না!’’ আক্ষেপের মধ্যেও মিশে থাকে অন্য জীবনবোধ। বন্যা স্মিত হাসেন, ‘‘কেন এমন ঘটল, সেটা আর ভাবি না! বিশ্ব জুড়ে নানা ধরনের মৌলবাদী জুলুমের শিকার লাখো লোক! আমরাই বা রেহাই পাব কেন, বলুন!’’ তিন বছর আগেকার ব্যক্তিগত বিপর্যয়কে বিশ্বজনীন এক সমগ্রের আলোয় দেখার স্থিতি ও অনুভব খুঁজে পেয়েছেন তিনি।

এত দিনে নিজের জীবনের রক্তাক্ত অধ্যায় এবং তার পরের অভিঘাত নিয়ে বই লিখছেন বন্যা। তবে নিছক স্মৃতিকথা নয়। ‘‘আমার জন্ম বাংলাদেশের স্বাধীনতার তিন বছর আগে। আর অভি তো মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ক্যাম্পে ভূমিষ্ঠ হয়েছিল। আমার জীবন আর বাংলাদেশের কয়েক দশকের যাত্রা বা গোটা বিশ্ব-পরিস্থিতিই মিশে যাবে বইটায়!’’ বন্যার বইয়ে তাই ছাপ ফেলছে, নব্য উদারবাদী অর্থনীতি, সাম্রাজ্যবাদ, কর্পোরেট পুঁজি, ধর্মীয় মৌলবাদ থেকে উগ্র জাতীয়তাবাদ পর্যন্ত সমকালের হরেক প্রবণতার স্বাক্ষর। টেক্সাসের অস্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামি মৌলবাদের উত্থান নিয়ে গবেষণারত বন্যা। নতুন বইটি লিখছেন ইংরেজিতে। লন্ডন স্কুল অব ইকনমিক্সের মানবাধিকার কেন্দ্রের সাহায্যে কাজটি করছেন তিনি।

অভিজিতের মৃত্যু নানা ভাবে বদলে দিয়েছে বন্যা এবং তাঁর মেয়ে তৃষাকে। জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের স্নাতক তৃষা কাজ করছেন আমেরিকার সংখ্যালঘুদের মধ্যে। চলাফেরায় এখনও পদে পদে নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কা জেগে থাকে বন্যার মনে। কলকাতায় ঝটিকা সফরের আগে নেপালে ট্রেকিংয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু এফবিআই-এর নিষেধ, অন্তত তিন মাস আগে না-জানিয়ে জন্মভূমি বাংলাদেশে যাওয়া যাবে না। তাঁর সঙ্গে যা হয়েছে, তার জন্য কাউকে ঘৃণা করতে রাজি নন বন্যা। বলছেন, ‘‘স্রেফ ইসলামি মৌলবাদ নয়! রাজনীতি-অর্থনীতির ঝাপটা, সামাজিক দুরবস্থা, বেকারত্ব সব জড়িয়ে আছে আমাদের উপরে হামলায়।’’ সম্প্রতি টেড টকেও বন্যা জানিয়েছেন, গভীর ব্যক্তিগত শোকেও তাঁর জীবনের সঙ্গে জট পাকানো জটিল বিশ্ব-পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টাই তাঁকে শান্তি দিয়েছে।

সোমবার ‘আমরা এক সচেতন প্রয়াস’ মঞ্চের উদ্যোগে বন্যার টেড টক এবং ঢাকার চিত্রপরিচালক রাকিবুল হাসানের তথ্যচিত্র ‘আলো হাতে আঁধারের যাত্রী’ দেখল যাদবপুর। ঘটনাচক্রে ওই দিনটাতেই ছিল পুণের হিন্দু মৌলবাদীদের হাতে গোবিন্দ পানসারের খুনের পাঁচ বছর পূর্তি। সময়বৃত্তে একই সূত্রে যেন মিলে যাচ্ছে গোটা উপমহাদেশ!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE