Advertisement
E-Paper

রাজনৈতিক অস্থিরতায় মার খাচ্ছে রক্তদান

গ্রীষ্মের মরসুমে প্রতি বছরই রক্তের অভাব দেখা দেয়। এ বছর দীর্ঘ ভোট প্রক্রিয়ার জন্য সেই অভাবের মাত্রা বেড়েছে। রক্তের ঘাটতি মেটাতে মূলত বিভিন্ন পাড়ার ক্লাবগুলিই ভরসা হয়।

সৌরভ দত্ত

শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০১৯ ০১:১৬

শিবিরের বদলে শিবির কোথায়! লোকসভা ভোটের পরেও রক্তদানের ঘাটতির কারণ জানতে চাইলে এমনই বলছেন রক্তদান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত কর্মীরা।

গ্রীষ্মের মরসুমে প্রতি বছরই রক্তের অভাব দেখা দেয়। এ বছর দীর্ঘ ভোট প্রক্রিয়ার জন্য সেই অভাবের মাত্রা বেড়েছে। রক্তের ঘাটতি মেটাতে মূলত বিভিন্ন পাড়ার ক্লাবগুলিই ভরসা হয়। পুর এলাকায় শিবিরের আয়োজনে কাউন্সিলরদেরও সক্রিয় ভূমিকা প্রয়োজন। কিন্তু ভোটের ব্যস্ততার জন্য এত দিন সেটা সম্ভব হয়নি। স্বাস্থ্য দফতর এবং রক্তদানের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিনিধিদের আশা ছিল, ভোট শেষে পরিস্থিতির বদল ঘটবে। বাস্তব অভিজ্ঞতা ভিন্ন। রক্তদান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত কর্মীরাই বলছেন সে কথা। তাঁদের বক্তব্য, ভোটের ফল বেরোনোর পরে যে ভাবে ‘কে আছে, কে নেই’, তার টানাপড়েন শুরু হয়েছে, তাতে শিবির আয়োজনে আর আগ্রহ নেই পাড়ার দাদাদের।

এ দিকে, শিবির না হওয়ায় রক্তের ঘাটতির সূচক ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী। ফলে ব্লাড ব্যাঙ্কগুলিতে রক্তের হাহাকার দেখা দিয়েছে। যজ্ঞেশ্বর যাদব, মহম্মদ সিরাজ, গীতশ্রী দাসের অভিজ্ঞতাই বলছে সে কথা। গীতশ্রীর মা স্বপ্না দাস ব্রড স্ট্রিটের এক বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ‘ও পজিটিভ’ গ্রুপের রক্ত পাওয়ার জন্য বৃহস্পতিবার দিনভর রিকুইজিশন স্লিপ হাতে তিনি হন্যে হয়ে ঘুরেও রক্ত জোগাড় করতে পারেননি।

গীতশ্রীর কথায়, ‘‘সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্ক রিকুইজিশন স্লিপ জমা নিয়েও ফেরত দিয়ে বলল, রক্ত নেই। সকাল আটটা থেকে বিকেল পর্যন্ত একাধিক ব্লাড ব্যাঙ্কে ঘুরেছি। কোথাও রক্ত নেই।’’ গীতশ্রীর মতো থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত ছেলের রক্তের জোগাড় করতে গিয়ে হিমশিম অবস্থা পেশায় রাজমিস্ত্রি যজ্ঞেশ্বর যাদবের। হাতিবাগানের বাসিন্দা যজ্ঞেশ্বরের ১৩ বছরের সন্তান মুন্নার হিমোগ্লোবিনের মাত্রা চারে নেমে গিয়েছে। তাকে অবিলম্বে ‘ও পজিটিভ’ গ্রুপের রক্ত দেওয়া প্রয়োজন। যজ্ঞেশ্বর বলেন, ‘‘ছেলেকে কী করে বাঁচাব বুঝতে পারছি না। মাসে দু’বার রক্ত দিতে হয়। কখনও এমন অসুবিধার মুখে পড়িনি।’’ জয়নগরের বাসিন্দা মহম্মদ সিরাজের ভাই মহম্মদ পাপ্পু এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ৩৫ বছরের ওই যুবকের ‘ও নেগেটিভ’ গ্রুপের রক্তের প্রয়োজন। সিরাজ বলেন, ‘‘এসএসকেএম ব্লাড ব্যাঙ্ক দেড় ঘণ্টা অপেক্ষা করানোর পরে জানাল, রক্ত নেই। কোথাও রক্ত পাচ্ছি না। হোয়াটসঅ্যাপে সাহায্যের জন্য আর্জি করেছি। দেখি কী হয়!’’

এই ছবির উল্টো দিকে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলির দাবি, ক্লাবগুলিকে আবেদন-নিবেদন করেও শিবিরের আয়োজনে রাজি করানো যাচ্ছে না। এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্ণধার জানান, গত বছর এপ্রিল থেকে জুনে কলকাতা এবং দুই ২৪ পরগনায় ১১টি রক্তদান শিবিরের আয়োজন করেছিল তৃণমূল। শিবিরগুলিতে গড়ে রক্তদাতার সংখ্যা ছিল নব্বইয়ের বেশি। এ বছর সেই ১১টির মধ্যে মাত্র একটি শিবির হয়েছে।

কেন্দ্রীয় সরকারের স্বেচ্ছায় রক্তদান পরামর্শদাতা কমিটির সদস্য অপূর্ব ঘোষ বলেন, ‘‘গত জুনে ৩১টি শিবির করেছিলাম। তাদের এ বছরও ফোন করে শিবির আয়োজনের চিঠি পাঠাতে বলা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত ১৬টি চিঠি পেয়েছি।’’ এই পরিস্থিতির জন্য রাজনৈতিক অস্থিরতাকেই দায়ী করে তিনি বলেন, ‘‘নির্বাচনে জয়ী সাংসদদের উচিত নিজেদের এলাকায় রক্তদান শিবির করা।’’ রক্তদান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত কর্মী দীপঙ্কর মিত্র বলেন, ‘‘নৈহাটি, ভাটপাড়া ছেড়ে দিন। দলবদলের উচাটনে কলকাতাতেও শিবির আয়োজনে বেগ পেতে হচ্ছে। কার মন জুগিয়ে চলতে হবে, তা নিয়ে বিভ্রান্তিতে পাড়ার ক্লাব সংগঠকেরা। কেউই ঝুঁকি নিতে নারাজ।’’ এক বেসরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্ণধার ডি আশিস বলেন, ‘‘শিবির আয়োজনে পরিবেশ-পরিস্থিতি গুরুত্বপূর্ণ। ভোটের ফল প্রকাশের পরে এখন অনেক জায়গায় সেই পরিস্থিতি নেই।’’

স্বাস্থ্য ভবনের কর্তারা অবশ্য বলছেন, ভোট প্রক্রিয়া সবে মিটেছে। ধাতস্থ হতে একটু সময় লাগছে, এই যা। এক কর্তার কথায়, ‘‘স্বাস্থ্যকর্মী, পাড়ার ক্লাবগুলিকে নিয়ে ছোট ছোট শিবির হচ্ছে না, তেমন কিন্তু নয়। ব্লাড ব্যাঙ্কগুলিতে রক্ত কম আছে ঠিকই। তবে অসুবিধা যাতে না হয়, সেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। সামনেই ডেঙ্গির আশঙ্কার কথা মাথায় রাখতে হচ্ছে।’’

Politics Blood Donation Camp
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy