Advertisement
E-Paper

কাশ্মীরে জঙ্গিদমনে গিয়ে তুষারঝড়ে মৃত্যু: দুই বাঙালি প্যারা কমান্ডোর দেহ ফিরছে, শোকবার্তা মমতার

শুক্রবার কাশ্মীরের গভীর পাহাড়ি জঙ্গল থেকে সেনার এলিট প্যারা ৭ স্পেশ্যাল ফোর্সের পলাশ ঘোষ এবং সুজয় ঘোষের দেহ উদ্ধার হয়েছিল। পলাশ মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা। আর সুজয় বীরভূমের।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০২৫ ১৪:২৬
কাশ্মীরে জঙ্গিদমন অভিযানে গিয়ে মৃত বাংলার প্যারা কমান্ডো সুজয় ঘোষ (ডান দিকে উপরে) এবং পলাশ ঘোষ (ডান দিকে নীচে)।

কাশ্মীরে জঙ্গিদমন অভিযানে গিয়ে মৃত বাংলার প্যারা কমান্ডো সুজয় ঘোষ (ডান দিকে উপরে) এবং পলাশ ঘোষ (ডান দিকে নীচে)। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

ছুটি শেষে পঞ্চমীর দিনই কাশ্মীর ফিরে গিয়েছিলেন। তবে বিবাহবার্ষিকীতে আবার বাড়ি ফেরার কথা ছিল। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে সমুদ্র সৈকতে ঘুরতে যাওয়ারও কথা ছিল তাঁর। কিন্তু তার আগেই শনিবার বাড়ি ফিরছে মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা, সেনার এলিট প্যারা ৭ স্পেশ্যাল ফোর্সের হাবিলদার পলাশ ঘোষের নিথর দেহ।

শুক্রবার কাশ্মীরের গভীর পাহাড়ি জঙ্গল থেকে পলাশ এবং তাঁর সহকর্মী সুজয় ঘোষের দেহ উদ্ধার হয়েছিল। সুজয় বীরভূমের বাসিন্দা। তিনি এলিট প্যারা ৭ স্পেশ্যাল ফোর্সের ল্যান্স নায়েক। বঙ্গের দুই প্যারা কমান্ডোর মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এক্স হ্যান্ডলে তিনি লিখেছেন, ‘‘জম্মু-কাশ্মীরের অনন্তনাগে জঙ্গিদমন অভিযানে বেরিয়ে চরম আবহাওয়ায় মৃত্যু হয়েছে বাংলার দুই প্যারা কমান্ডোর। ওঁদের পরিবার এবং বন্ধুদের প্রতি আমার আন্তরিক সমবেদনা। এই শোকের মুহূর্তে আমাদের সরকার সব রকম ভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে।’’

পলাশ মুর্শিদাবাদের রকুনপুর ঘোষপাড়ার বাসিন্দা। পরিবার জানিয়েছে, শুক্রবার দুপুর ২টো নাগাদ স্ত্রী বুল্টি ঘোষকে ফোন করে পলাশের মৃত্যুর খবর জানায় সেনা। শনিবার সন্ধ্যায় পলাশের কফিনবন্দি দেহ গ্রামের বাড়িতে ফেরার কথা। ছেলেকে হারিয়ে শোকস্তব্ধ বাবা প্রশান্ত ঘোষ ও মা আদরী ঘোষ। ঘরের এককোণে মাদুরে শুয়ে কাঁদতে কাঁদতে মা বলেন, “দেশ আমার ছেলেকে বীর শহিদ বলে চিনবে, এটা গর্বের কথা। কিন্তু আমার কোল তো ফাঁকা হয়ে গেল!’’

দরিদ্র কৃষক পরিবারে জন্ম পলাশের। স্ত্রী, দুই কন্যাসন্তান, মা-বাবা ছাড়াও দাদা-বৌদি রয়েছেন বাড়িতে। ২০০৮ সালে সেনায় যোগ দেন পলাশ। পরিবার জানিয়েছে, পঞ্চমীতে ছুটি শেষ করে কাশ্মীরে ফিরে যাওয়ার পরেও রোজ কথা স্ত্রী, মেয়েদের সঙ্গে তাঁর কথা হত। ছবিও পাঠাতেন। তবে গত ৬ অক্টোবরের পর থেকে আর কথা হয়নি। পলাশের স্ত্রী বুল্টি বলেন, ‘‘ছুটিতে যাওয়ার আগে বলে গিয়েছিল, বিবাহবার্ষিকীতে এসে সমুদ্রে ঘুরতে নিয়ে যাবে। অপারেশনে যাওয়ার আগে ওর সঙ্গে শেষ কথা হল। তখনই জানিয়েছিল, আগামী কয়েক দিন আর কথা হবে না। ভারতীয় সেনার কোনও বিশেষ অভিযানে যাচ্ছে। ফিরে এসে ও নিজেই ফোন করবে। সেই ফোন আর এল না। এল ওর মৃত্যুর খবর।’’

সেনাবাহিনীর সূত্রে জানা গিয়েছে, কিশতোয়ার রেঞ্জের দুর্গম উঁচু পাহাড়ি এলাকায় বিদেশি জঙ্গিদের উপস্থিতির খবর ছিল। ভারী তুষারপাত পুরো শীতকালের জন্য পথ বন্ধ করে দেওয়ার আগে তাই অভিযান চালানো হয়। সেই অভিযানেই ছিলেন পলাশ এবং সুজয়। গত সোমবার রাতে প্যারা কমান্ডোদের দলটি প্রবল তুষারঝড় মুখে পড়ে অভিযানের মাঝে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় সুজয় এবং পলাশের সঙ্গে। প্রতিকূল আবহাওয়ায় বরফের পুরু আস্তরণের মধ্যে উদ্ধারকাজে বাধা ছিল প্রতি পদে। তারই মধ্যে চার দিনের টানা তল্লাশি শেষে দু’জনেরই দেহ মেলে। শনিবার দুপুরের দিকে বছর সাতাশের সুজয়ের দেহ ফেরার কথা বীরভূমের রাজনগর ব্লকেরকুণ্ডীরা গ্রামের বাড়িতে।

সুজয়ের পরিবারে বাবা, মা, ঠাকুরদা, দাদা এবং ভাই আছেন। কৃষিজীবী পরিবার। বছর সাতেক আগে বাড়ির মেজো ছেলে সুজয় সেনায় যোগ দিয়েছিলেন। শুক্রবার দুপুরে দাদা মৃত্যুঞ্জয় ঘোষের কাছে বাহিনীর থেকে ফোন আসে। প্রথমে তাঁদের বলা হয়েছিল, সুজয়কে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে, তবে পরিস্থিতি ভাল নয়। তার কয়েক ঘণ্টা পরে মৃত্যুর খবর আসে। সুজয়ের দাদু বামাপদ ঘোষ বলেন, “খুবই হাসিখুশি ছেলে ছিল ও। গ্রামে এলেই সকলের সঙ্গে মিশে যেত। এমন পরিণতি মেনে নেওয়া অসম্ভব।”

Kashmir Para Commando
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy