Advertisement
E-Paper

ক্যাম্পাসে গিয়েই জীবনটা চিনে নিন

অক্সফোর্ডের ছাত্র ছিলেন যখন, নিয়মিত বিতর্কে অংশ নিতেন। এখনও সুযোগ পেলেই তিনি যে বিতর্কসভায় নেমে যেতে রাজি, বুঝিয়ে দিলেন বরিস জনসন, ব্রিটিশ বিদেশসচিব। যে যা-ই বলুক, তাঁর মনে হয় পড়াশোনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস খুবই দরকারি, ভবিষ্যতেও সম্ভবত তা-ই থাকবে, ক্যাম্পাসেই তো সমমনস্ক ছেলেমেয়েদের সঙ্গে দেখা হয়, দেওয়া-নেওয়ার সুযোগ ঘটে।

সেমন্তী ঘোষ

শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:০২
তার্কিক। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে বরিস জনসন। ছবি: সুমন বল্লভ।

তার্কিক। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে বরিস জনসন। ছবি: সুমন বল্লভ।

অক্সফোর্ডের ছাত্র ছিলেন যখন, নিয়মিত বিতর্কে অংশ নিতেন। এখনও সুযোগ পেলেই তিনি যে বিতর্কসভায় নেমে যেতে রাজি, বুঝিয়ে দিলেন বরিস জনসন, ব্রিটিশ বিদেশসচিব। যে যা-ই বলুক, তাঁর মনে হয় পড়াশোনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস খুবই দরকারি, ভবিষ্যতেও সম্ভবত তা-ই থাকবে, ক্যাম্পাসেই তো সমমনস্ক ছেলেমেয়েদের সঙ্গে দেখা হয়, দেওয়া-নেওয়ার সুযোগ ঘটে।

প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস জিনিসটা অপ্রয়োজনীয় হয়ে যাবে: এই ছিল বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিরোজিও হলে ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট পার্লামেন্টের বিতর্কের ‘মোশন’। পক্ষে বিপক্ষে দশ-দশ করে কুড়ি জন তুখড় পড়ুয়া। ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, এশিয়া— চার মহাদেশের মানুষ তাঁরা! বিশ্বের পাঁচটি তাবড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে এসেছেন জনা-দশেক, হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি, কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি, লন্ডন স্কুল অব ইকনমিক্স, এমোরি কলেজ এবং সিডনি ইউনিভার্সিটি। তাঁদের সঙ্গে রয়েছেন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়, সেন্ট জেভিয়ার্স, সিকিম মণিপাল ইউনিভার্সিটি, বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটি, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক জন। মিলিয়ে মিশিয়ে তৈরি পক্ষ-বিপক্ষের দল। মঞ্চ আন্তর্জাতিক।

প্রযুক্তি যে ভাবে এগোচ্ছে, তাতে আর ক্যাম্পাসে এসে পড়াশোনার কোনও অর্থ থাকবে না ভবিষ্যতে— এটাই পক্ষবাদীদের বক্তব্য। বিপক্ষবাদীরা ফুৎকারে উড়িয়ে দিলেন এ কথা। ক্লাসের পড়াশোনার মধ্যে দিয়ে যা শেখা যায়, অনলাইনে কি তা যায়? আর ক্যাম্পাসে কি কেবল ক্লাস হয়? কত আড্ডা, বন্ধু, কত রকম সুযোগ, এমনকী বিতর্ক করতে শেখারও সুযোগ! উচ্চশিক্ষা মানে কি কেবল ডিগ্রি? মানুষ হতে শেখাও বটে। সেটার জন্য বাড়ি বসে কম্পিউটার স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকার চেয়ে ক্যাম্পাসে এসে জীবনটাকে চিনে-বুঝে নেওয়া অনেক জরুরি।

এই সুরেই সুর মেলালেন ব্রিটিশ বিদেশসচিব। সেটা তাঁর পক্ষে জরুরিও ছিল, কেননা তাঁর ভারত আসার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য তো দুই দেশের শিক্ষাজগতের সেতুবন্ধন, আরও বেশি সংখ্যক ভারতীয় পড়ুয়াকে যুক্তরাজ্যের

বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আকর্ষণ। ক্যাম্পাস উঠে গিয়ে অনলাইন শিক্ষা হয়ে গেলে সেতুবন্ধনটাও যে অন্য রকম হয়ে যাবে!

দু’দেশের দীর্ঘ মেধা-বিনিময়ের ইতিহাসের কথা বলে বরিস জনসন যখন সেই বিনিময় আরও বাড়ানোর জন্য জোরালো সওয়াল করছেন, বিতর্ক-তুখড় ছাত্রছাত্রীরা কিন্তু তাঁকে ছাড়লেন না। তাঁদের প্রশ্ন— ব্রিটেনে এই মুহূর্তে যে রকম প্রবল অভিবাসী-বিরোধী হাওয়া, বিদেশি ছাত্রছাত্রীদের উপর হাজার বিধিনিষেধ, তাতে কী ভাবে তিনি আশা করেন বিদেশি, এবং ভারতীয়, ছাত্রছাত্রীরা বেশি করে যাবেন সেখানে?

প্রশ্ন শুনে বরিস জনসন প্রায় লাফিয়ে উঠে দাঁড়ালেন। বললেন, ‘‘আমার মন বলছিল, এ কথাটা আমায় শুনতে হবে এখানে।’’ তাঁর যুক্তি, শিক্ষাভিলাষী ছাত্রছাত্রীদের বিষয়ে আগের মতোই উৎসাহী ব্রিটেন। শিক্ষার আদানপ্রদানের ক্ষেত্রে কোনও নীতির আঁচই পড়বে না। তাঁর হিসেব বলছে, ইতিমধ্যেই ভারতীয় ছাত্রছাত্রীদের আবেদন-পত্রের সংখ্যা বাড়ছে। বর্তমান বিদেশি পড়ুয়াদেরও এক বড় অংশই ভারতীয়।

হল-ভর্তি সদ্য কৈশোর-উত্তীর্ণ ছাত্রছাত্রী, তাই প্রশ্নবাণে তীক্ষ্ণতার সঙ্গে নিখাদ কৌতূহলও। দর্শকাসন থেকে জিজ্ঞাসা: তিনি তো এক কালে লন্ডনের দক্ষ মেয়র ছিলেন, কলকাতা বিষয়ে তাঁর কোনও প্রস্তাব আছে? বরিস জনসনের চটজলদি উত্তর— ‘‘নিশ্চয়ই। এত প্রাণবন্ত শহরে রাস্তায় রাস্তায় সাইকেল চলাচলের জন্য আলাদা ‘লেন’ হবে না কেন? পরিবেশের দিক দিয়েও ভাল, মানুষেরও সুবিধে!’’ এই একটু আগেই তো পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে প্রস্তাবটা দিয়ে এসেছেন তিনি!

বিতর্কের ফল? শ্রোতাদের ভোটে বিপুল ভাবে জিতে গেল ‘মোশন’-এর বিপক্ষ দল— ক্যাম্পাসের পক্ষে যারা! বরিস নির্ঘাত খুশি হলেন।

Presidency University boris Johnson
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy