Advertisement
০৭ মে ২০২৪
State Hospitals

‘বিশিষ্ট’ অঙ্কে ব্রাত্য বিরোধীরা, তহবিলে বঞ্চিত হাসপাতাল

প্রথম প্রথম এই সব বিরোধী কেন্দ্রের বহু হাসপাতালের সমিতিতে কোনও চেয়ারম্যানই নিয়োগ করা হয়নি। পরে বহু জায়গায় জেলাশাসককে চেয়ারম্যান করা হয়। কিন্তু প্রশাসনিক কাজ সামলে তাঁদের পক্ষে এই দায়িত্ব পালন অসুবিধাজনক।

রাজনীতির টানাটানিতে কি বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ রোগী?

রাজনীতির টানাটানিতে কি বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ রোগী? —ফাইল চিত্র।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০২৩ ১০:৫৮
Share: Save:

বিজেপির জনপ্রতিনিধিদের ব্রাত্য রেখে সরকারি প্রভাব খাটিয়ে তৃণমূলের স্থানীয় নেতাকে সরকারি হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে শাসকদলের বিরুদ্ধে। রাজ্য জুড়েই এই ছবি। এর ফলে অধিকাংশ জায়গায় বিরোধী সাংসদ ও বিধায়ক তহবিলের টাকা রোগীদের পরিষেবা ও হাসপাতালের পরিকাঠামোর কাজে ব্যয় করা যাচ্ছে না। রাজনীতির টানাটানিতে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ রোগী।

এমনিতেই পেয়িং বেড বন্ধ হওয়ায় রোগী কল্যাণ সমিতির সঞ্চয় তলানিতে ঠেকেছে। ফলে, হাসপাতালের পরিকাঠামো উন্নয়ন ও সংস্কার, অ্যাম্বুল্যান্স এবং যন্ত্রপাতি-ওষুধ কেনার ক্ষেত্রে বিধায়ক-সাংসদদের তহবিল বড় ভূমিকা নেয়। তাই স্থানীয় নির্বাচিত প্রতিনিধি অর্থাৎ বিধায়ক বা সাংসদরাই নিজের নিজের এলাকার সরকারি হাসপাতালের সমিতির মাথায় থাকেন। কিন্তু অভিযোগ, তৃণমূলের বিধায়ক ও সাংসদদের ক্ষেত্রে সেই প্রথা মানা হলেও যেখানে বিজেপির জনপ্রতিনিধারা রয়েছেন, সেখানে তা মানা হচ্ছে না।

প্রথম প্রথম এই সব বিরোধী কেন্দ্রের বহু হাসপাতালের সমিতিতে কোনও চেয়ারম্যানই নিয়োগ করা হয়নি। পরে অনেক জায়গায় জেলাশাসককে চেয়ারম্যান করা হয়। কিন্তু প্রশাসনিক কাজ সামলে তাঁদের পক্ষে এই দায়িত্ব পালন অসুবিধাজনক। তখন ২০২১ সালে স্বাস্থ্য দফতর নির্দেশ জারি করে রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান হিসাবে কিছু ‘বিশিষ্ট ব্যক্তি’ বা ‘এমিনেন্ট পার্সন’দের মনোনীত করে। এবং প্রধানত বিরোধী জনপ্রতিনিধিদের এলাকাতেই এঁরা হাসপাতালের সমিতির মাথায় ঠাঁই পান।

রাজ্যে এমন বহু এলাকা রয়েছে যেখানে বিধায়ক এবং সাংসদ দুই-ই বিজেপির। কিন্তু কারওরই এলাকার কোনও হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান পদে ঠাঁই হয়নি। সেই জায়গা পেয়েছেন ‘বিশিষ্ট ব্যক্তি’, যিনি হয় স্থানীয় তৃণমূল নেতা অথবা পরাজিত তৃণমূল প্রার্থী। কার্যত তাঁদের পুনর্বাসন দেওয়া হয়েছে এই পদে। অথচ, যেখানে তৃণমূলের বিধায়ক বা সাংসদ রয়েছেন, সেখানে কিন্তু এমন বিশিষ্টজনেদের প্রয়োজন পড়েনি।

বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর জেলা পূর্ব মেদিনীপুরে আবার রয়েছে অন্য হিসাব। খাতায়কলমে তৃণমূলের দুই সাংসদ শিশির অধিকারী এবং দিব্যেন্দু অধিকারীকে ব্রাত্য রেখে তৃণমূলের স্থানীয় কোনও মাঝারি নেতাকে অথবা জেলাশাসককে হাসপাতালের সমিতির মাথায় রাখা হয়েছে।

কেন বিরোধী এলাকায় এমনটা হচ্ছে?

রাজ্যের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের প্রথম প্রতিক্রিয়া, ‘‘কোন নিয়মে বলা আছে যে, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরই সেখানকার হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান করতে হবে?’’ তা হলে কেন তৃণমূলের বিধায়ক বা সাংসদদের সর্বত্র নিজের এলাকায় সেই পদ দেওয়া হয়েছে? তখন মন্ত্রীর বক্তব্য, ‘‘যাঁকে যেখানে যোগ্য মনে করা হয়েছে রাখা হয়েছে। এ ব্যাপারে আপনারা মাথা ঘামাচ্ছেন কেন?’’ আর স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম জানালেন, ‘‘বিশিষ্টদের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান করার আইন আছে।’’

বিজেপি অবশ্য বিষয়টি নিয়ে সরব। যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতি, চিকিৎসক নেতা ইন্দ্রনীল খানের মতে, ‘‘তৃণমূলের শিক্ষা থেকে স্বাস্থ্য, সর্বত্র দুর্নীতি। স্বাস্থ্যে দুর্নীতি চালাতে হাসপাতালগুলো হাতে রাখতে হবে। তবেই তো দুর্নীতিতে অভিযুক্ত নেতা-মন্ত্রীদের মাসের পর মাস আইসিইউতে রেখে দিতে পারবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Govt Hospitals West Bengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE