E-Paper

পাহাড়ের মন কি বুঝতে পারেননি, চর্চা

মন্ত্রিসভায় এক সতীর্থ বুদ্ধদেবকে কঠোর সিদ্ধান্ত থেকে বিরত থাকতে পরামর্শ দেন। সেই নেতা জানান, বুদ্ধদেব নাকি রসিকতা করে বলেছিলেন, ‘ঘুড়ির লাটাইয়ের সুতো ছেড়েছি। সময়মতো গুটিয়ে নেব।’ কিন্তু সুতো আর গোটাতে পারেননি।

কৌশিক চৌধুরী

শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০২৪ ০৮:৫৭
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। —ফাইল ছবি।

সালটা ২০০৭, নভেম্বর মাস। গোর্খা লিগ এবং গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার হুমকির জেরে দার্জিলিং জিমখানা ক্লাবে সিপিএমের জেলা সম্মেলন বাতিল করে তা নামিয়ে আনা হল সমতলে। দলের তরফে জেলার দায়িত্বে থাকা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ছিলেন শিলিগুড়ির স্টেট গেস্ট হাউসে। নীচের পুরনো হলঘরে বসে বুদ্ধবাবু বলেছিলেন, ‘‘কাঞ্চনজঙ্ঘায় ঘেরা পাহাড় অপরূপ। সূর্যের ছোঁয়ায় তা আরও সুন্দর হয়। আগামী দিনে যাব।’’

আর পাহাড়ে যাওয়া হয়নি বুদ্ধবাবুর। শেষ বার দার্জিলিং গিয়েছিলেন, ২০০৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে। পার্বত্য পরিষদের ‘কেয়ারটেকার’ চেয়ারম্যান সুবাস ঘিসিংয়ের সঙ্গে বালাসন জল প্রকল্পের কাজের শিলান্যাস করেন। তার পরের বছর পাহাড়ে বিমল গুরুংয়ের উত্থান। ঘিসিং জমানার শেষ লগ্নে বেশ কয়েক বার কলকাতা, শিলিগুড়িতে প্রশাসনিক বৈঠকও করেছিলেন বুদ্ধবাবু। কিন্তু সামাল দিতে পারেননি। গোলমাল শুরু হয় পাহাড়ে।

মন্ত্রিসভায় এক সতীর্থ বুদ্ধদেবকে কঠোর সিদ্ধান্ত থেকে বিরত থাকতে পরামর্শ দেন। সেই নেতা জানান, বুদ্ধদেব নাকি রসিকতা করে বলেছিলেন, ‘ঘুড়ির লাটাইয়ের সুতো ছেড়েছি। সময়মতো গুটিয়ে নেব।’ কিন্তু সুতো আর গোটাতে পারেননি। পাহাড় হাতের বাইরে চলে যায়। সরকারের শেষ দিকে তিনি তা বুঝেওছিলেন। রাজ্যের প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘উনি বলেছিলেন, পাহাড়ে আমি রক্তক্ষয় চাই না। পুলিশ দিয়ে সম্মেলন করব না। আলোচনাতেই সমস্যা মিটবে।’’

সিপিএমের বহু নেতাই মনে করছেন, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য পাহাড় নিয়ে ভাবনাটা ঠিকই ভেবেছিলেন। রাস্তা হয়তো ঠিক ছিল না। তাই ২০১১ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় এসেই পাহাড়ে পার্বত্য পরিষদ সরিয়ে বিমল গুরুংয়ের জিটিএ তৈরি করে তাঁকে দায়িত্বে বসান। সুবাস চলে যান কার্যত অবসরে। পাহাড়ের নেতারা জানাচ্ছেন, পাহাড়ে বুদ্ধবাবু কম আসতেন। তাই হয়তো দূরত্ব বেড়েছিল। দার্জিলিং জেলা সিপিএমের বড় অংশ জানাচ্ছে, দলের নেতৃত্ব এবং সুবাস ঘিসিংয়ের উপর ভরসা বেশি করেছিলেন বুদ্ধবাবু। গুরুংকে আমল দেননি। যার মাসুল গুনতে হয়েছিল। তবে বুদ্ধবাবু থাকাকালীন পাহাড় রক্তাক্ত হয়নি। জ্যোতি বসু বা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলে যেটা দার্জিলিং দেখেছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Buddhadeb Bhattacharjee Death Buddhadeb Bhattacharjee Death

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy