পূর্ব মেদিনীপুরের খেজুরিতে জোড়া মৃত্যুর ঘটনায় এ বার তদন্তকারী আধিকারিকের ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন তুলল কলকাতা হাই কোর্ট। ওই ঘটনায় ময়নাতদন্তের আগে এবং পরে বেশ কয়েক বার চিকিৎসকের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে তদন্তকারী আধিকারিকের। কেন এত বার ফোনে কথা বলতে হল, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলে হাই কোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ। আদালত জানিয়েছে, ওই তদন্তকারী আধিকারিকের ভূমিকা সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয়।
প্রাথমিক ভাবে খেজুরি থানার পুলিশ ওই জোড়া মৃত্যুর তদন্ত চালাচ্ছিল। পরে ঘটনার তদন্তভার যায় সিআইডির হাতে। প্রাথমিক তদন্তের পরে সোমবার সিআইডির বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) হাই কোর্টে রিপোর্ট জমা দেয়। সেখানে তারা জানায়, ময়নাতদন্তের আগে এবং পরে একাধিক বার চিকিৎসকের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে তদন্তকারী আধিকারিকের। ওই রিপোর্ট দেখে বিস্ময় প্রকাশ করে হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। আদালতের মন্তব্য, “তমলুক মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসকের সঙ্গে এত বার তদন্তকারী আধিকারিকের ফোনে কথা হয়েছে! কেন এত বার ফোন করতে হল তদন্তকারী অফিসারকে? তাঁর ভূমিকা সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয়।”
যদিও সিআইডির তরফে আদালতে জানানো হয়, একাধিক বার ফোনে কথা হয়েছে ঠিকই, তবে সন্দেহজনক কিছু এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তবে সিআইডি এখনই কী ভাবে বলে দিচ্ছে যে কিছু পাওয়া যায়নি, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলে আদালত। আগামী সোমবার এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে। তদন্তে এখনও পর্যন্ত কী কী তথ্য উঠে এসেছে, তা ওই দিন রাজ্যকে জানাতে বলেছে হাই কোর্ট।
আরও পড়ুন:
গত ১১ জুলাই খেজুরি থানার ভাঙনমারি গ্রামে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। পরের দিনই ওই অনুষ্ঠানস্থলের অদূরে দুই যুবকের দেহ উদ্ধার হয়। বিজেপির দাবি, মৃতেরা দু’জনেই তাদের দলের কর্মী। ওই জোড়া মৃত্যুর ঘটনায় তমলুক মেডিক্যাল কলেজের ময়নাতদন্তের রিপোর্টের ভিত্তিতে পুলিশ দাবি করেছিল, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে তাঁদের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু পুলিশের ওই দাবি মানতে চাননি রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর দাবি, ওই দু’জনকে খুন করা হয়েছে। একই দাবি করেন মৃতদের পরিবারের সদস্যেরাও। মৃতদের দেহের দ্বিতীয় বার ময়নাতদন্তের দাবি তুলে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন তাঁরা।
পরবর্তী সময়ে এসএসকেএম হাসপাতালে দ্বিতীয় বার ময়নাতদন্ত করা হলে দেখা যায়, মৃতদের দেহে একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। দুই হাসপাতালে ময়নাতদন্তের দু’রকম রিপোর্ট কেন, তা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। এই আবহে ওই জোড়া মৃত্যুর ঘটনায় সিবিআই তদন্তের আর্জি জানিয়ে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয় পরিবার। এর আগে গত ৩ সেপ্টেম্বর এই মামলার শুনানিতে সন্দেহভাজনদের ফোনকলের তালিকা চেয়ে পাঠিয়েছিল হাই কোর্ট। সোমবার সেই তালিকাও আদালতে জমা দেয় সিআইডি।