Advertisement
০৫ মে ২০২৪
Calcutta High Court

‘কাজ না করলে ফল ভুগতে হবে’, ভুয়ো নথির মাধ্যমে চাকরি মামলায় সিআইডির ভূমিকায় অসন্তুষ্ট হাই কোর্ট

মামলার তদন্তে গঠিত সিটের সাত সদস্যের নাম প্রকাশ্যে আনা হচ্ছে না কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু। রাজ্যের আইনজীবী জানান, সাত জনের পদমর্যাদা উল্লেখ করা হচ্ছে।

Calcutta High Court’s justice Biswajit Basu scolded CID over a probe on recruitment case

কলকাতা হাই কোর্ট। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০২৩ ১৩:২৮
Share: Save:

ভুয়ো নথি দিয়ে চাকরির মামলায় রাজ্যের তদন্তকারী সংস্থা সিআইডির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলল কলকাতা হাই কোর্ট। বৃহস্পতিবার এই মামলার শুনানিতে সিআইডির উদ্দেশে হুঁশিয়ারি দিয়ে বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু বলেন, “কাজ না করলে তার ফল ভুগতে হবে।” তদন্তে রাজ্য কাউকে আড়াল করতে চাইছেন কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। এই প্রসঙ্গে সিআইডির উদ্দেশে বিচারপতির মন্তব্য, “আপনাদের উপর ভরসা রেখে তদন্তের ভার সিবিআইকে না দিয়ে সিআইডিকে দিয়েছিলাম। আপনারা কি আমার সিদ্ধান্তকে ভুল প্রমাণিত করতে চাইছেন?”

বুধবার এই মামলার শুনানিতে মৌখিক ভাবে সিআইডির ডিআইজিকে আদালতে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি বসু। বৃহস্পতিবার অবশ্য ডিআইজি হাই কোর্টে আসেননি। এই মামলার জন্য গঠিত সাত সদস্যের বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট)-এর চার জন উপস্থিত ছিলেন। বুধবারের শুনানিতে সিআইডির তরফে কেউ ছিলেন না। যা নিয়ে উষ্মাপ্রকাশ করেন বিচারপতি। সিটের তত্ত্বাবধায়ক হিসাবে ডিআইজিকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন তিনি।

সিটের সাত সদস্যের নাম প্রকাশ্যে আনা হচ্ছে না কেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি। রাজ্যের আইনজীবী জানান, সাত জনের পদমর্যাদা উল্লেখ করা হচ্ছে। কিন্তু এই বক্তব্যে সন্তুষ্ট হননি বিচারপতি। তিনি জানান, পরবর্তী শুনানির দিন সাত জন তদন্তকারীকেই উপস্থিত থাকতে হবে। উল্লেখ করতে হবে প্রত্যেকের নাম এবং পদমর্যাদা। প্রয়োজনে আদালত তাঁদের প্রত্যেকের কাছ থেকে তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইবে। এই মামলার পরবর্তী শুনানি ১৭ অগস্ট।

ভুয়ো নিয়োগপত্র বানিয়ে নিজের স্কুলেই ছেলেকে চাকরি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল প্রধানশিক্ষক বাবার বিরুদ্ধে। মুর্শিদাবাদের সুতির গোথা স্কুলের ওই ঘটনার তদন্তভার সিআইডিকে দিয়েছিল হাই কোর্ট। ওই মামলার তদন্তে নেমে রাজ্য জুড়ে প্রায় ৩৬ জন শিক্ষকের নাম পায় সিআইডি। যাঁদের মধ্যে ১৮ জন শিক্ষক ভুয়ো নথি ব্যবহার করে চাকরি পেয়েছেন বলে অভিযোগ। ১১ জন শিক্ষকের নিয়োগের নথি পাওয়া যায়নি। তদন্তে আরও উঠে আসে যে, সাত জন শিক্ষক মেধাতালিকায় স্থান পরিবর্তন করে চাকরি পেয়েছেন। মামলাকারীর আইনজীবী ফিরদৌস শামিম এবং গোপা বিশ্বাস জানান, বুধবার এই মামলায় সিআইডির আদালতে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিয়েছে। কিন্তু আদালত সেই রিপোর্টে সন্তুষ্ট হয়নি।

বাবা প্রধানশিক্ষক। আর সেই স্কুলেই শিক্ষকের চাকরির জন্য জোচ্চুরি করছেন ছেলে। শুধু তাই-ই নয়, বিনা নিয়োগপত্রে গত ৩ বছর ধরে বেতনও নিয়েছেন। এমনই অভিযোগ তুলে মুর্শিদাবাদের সুতির গোথা স্কুলের শিক্ষকের বিরুদ্ধে কলকাতা হাই কোর্টে মামলা করেছিলেন সোমা রায় নামে এক চাকরিপ্রার্থী। অভিযোগ উঠেছে ওই স্কুলের কর্মশিক্ষার শিক্ষক অনিমেষ তিওয়ারির বিরুদ্ধে। সেই মামলায় সিআইডিকে তদন্তভার দিয়েছিল হাই কোর্ট।

ওই চাকরিপ্রার্থীর অভিযোগ ছিল, মুর্শিদাবাদের বেলডাঙার একটি স্কুলের ভূগোলের শিক্ষক অরবিন্দ মাইতির নিয়োগপত্রের মেমো নম্বর জাল করে ২০১৯ সালে বাবার স্কুলে চাকরি পান অনিমেষ। এবং সেই নিয়োগের সুপারিশপত্র দেন তৎকালীন জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক পূরবী দে বিশ্বাস। অভিযুক্ত অনিমেষের নিয়োগ প্রসঙ্গে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ তখন জানায়, ওই নামে কোনও নিয়োগের সুপারিশ করা হয়নি। সোমার অভিযোগ, তাঁকে বঞ্চিত করে ওই চাকরি পেয়েছেন অনিমেষ। এর পরই এই মামলায় গত ১৯ জানুয়ারি সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE