নারদ তদন্তে তৃণমূলের চার নেতার নামে চার্জশিট পেশ করার জন্য লোকসভার স্পিকার সুমিত্রা মহাজনের অনুমতি চাইল সিবিআই। নারদ ঘুষকাণ্ড যখন প্রকাশ্যে আসে তাঁরা সে সময় সাংসদ ছিলেন। সেই কারণে স্পিকারের অনুমতি প্রয়োজন। ওই চারজন হলেন কাকলি ঘোষ দস্তিদার, প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়, সৌগত রায় এবং শুভেন্দু অধিকারী। শুভেন্দু এখন রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী। বাকি তিন জন এখনও দলের লোকসভার সাংসদ। প্রত্যেকেই এ বার নির্বাচনেও লড়ছেন। নারদ কাণ্ডের সময় রাজ্যসভার সাংসদ থাকলেও মুকুল রায়ের নামে কিন্তু এখনও ‘প্রসিকিউসন স্যাংশন’ চায়নি সিবিআই। জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে বিচার পর্ব শুরু করতে হলে দুর্নীতি দমন আইনে ১৯ ধারা অনুযায়ী এই ‘স্যাংশন’ নেওয়া আবশ্যিক।
চার্জশিট পেশের আগে সিবিআই কেন বিশেষ কয়েক জনের নামে অনুমতি চাইল, কেনই বা মুকুল রায়কে বাদ দেওয়া হল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। লোকসভা ভোটের ঠিক আগেই বা কেন সিবিআই এমন পদক্ষেপ করল, তা নিয়েও প্রশাসনিক মহলে সংশয় তৈরি হয়েছে।
প্রসঙ্গে সিবিআইয়ের এক মুখপাত্র বলেন, ‘‘কলকাতা হাইকোর্ট বার বার তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছে। দু’মাসের মধ্যে চার্জশিট জমা দেওয়া হবে বলে এ মাসেই আদালতে জানানো হয়েছে। সেই কারণেই স্পিকারের কাছে চার্জশিট পেশের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। আমরা সময়সীমার মধ্যেই প্রথম দফার চার্জশিট পেশ করে দেব।’’ মুকুলবাবুর বিষয়ে কেন অনুমতি চাওয়া হল না, সে বিষয়ে অবশ্য সদুত্তর মেলেনি। মুখপাত্র এ প্রসঙ্গে জানান, পরের দফায় রাজ্যের মন্ত্রী-বিধায়ক, অন্য সাংসদ ও আমলাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশের অনুমতি চাওয়া হবে স্পিকার এবং বিধানসভার অধ্যক্ষের কাছে। নারদ টেপে ধাপে ধাপে যাঁদের দেখা গিয়েছে, তাঁদের সকলের ব্যাপারে তদন্তে কী পাওয়া গিয়েছে তা আদালতে জানাবে সিবিআই।
সিবিআই সূত্রে এ-ও জানা গিয়েছে, চার্জশিট পেশের অনুমতি চাওয়া মানেই কিন্তু সকলের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হবে, তেমন নয়। যদিও কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হয়, তাও স্পিকারের অনুমতি নিয়েই আদালতে জানাতে হবে। তবে এই চারজনের ক্ষেত্রে সংস্থার এক কর্তার কথায়, ‘‘ঘুষের অভিযোগ এনে আদালতে দু’তিন ধাপে চার্জশিট পেশ করা হবে।’’
২০১৬-এর বিধানসভা ভোটের ঠিক আগে নারদ টেপ প্রকাশ্যে আসে। তাতে ১২ জন তৃণমূল নেতার পাশাপাশি এক আইপিএস অফিসারকে দেখা গিয়েছিল। সিবিআই তদন্ত চেয়ে মামলা হয় কলকাতা হাইকোর্টে। ২০১৭ এর এপ্রিলে নারদ মামলা হাতে পায় সিবিআই। ওই বছরের ১৬ এপ্রিল নারদ মামলায় এফআইএর দায়ের করে তারা। এই চার নেতা এবং মুকুলবাবু ছাড়াও নারদ টেপে দেখা গিয়েছিল লোকসভার সাংসদ সুলতান আহমেদ (পরে মারা যান), বিধায়ক ফিরহাদ হাকিম, শোভন চট্টোপাধ্যায়, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, মদন মিত্র, ইকবাল আহমেদ এবং অপরূপা পোদ্দারকে। নারদ টেপ যখন রেকর্ড করা হয়, তখন অবশ্য অপরূপা সাংসদ হননি। এ ছাড়া আইপিএস অফিসার এসএমএইচ মির্জার নামও জড়িয়েছিল নারদ কেলেঙ্কারিতে। সিবিআই জানিয়েছে, যে সব মন্ত্রী-বিধায়ককে টেপে দেখা গিয়েছে, তাঁদের নামে চার্জশিট দিতে হলে বিধানসভার স্পিকারের অনুমতি নিতে হবে। সেই প্রক্রিয়াও শুরু হয়নি। লোকসভার স্পিকার অনুমতি দিলে ধাপে ধাপে এগোতে চায় সিবিআই।
যদি লোকসভার স্পিকার চার্জশিট পেশের অনুমতি না দেন? সংস্থার এক কর্তা জানান, সুপ্রিম কোর্টের এক নির্দেশে বলা আছে, স্পিকার অনুমতি দিন বা না দিন, তা তিন মাসের মধ্যে জানিয়ে দেবেন। যদি অনুমতি না আসে তা হলে কলকাতা হাইকোর্টে জানিয়ে দেওয়া হবে।
নারদের কর্ণধার যে ফোনে
রেকর্ড করেছিলেন, সেটি এখনও পাওয়া যায়নি। মার্কিন সংস্থা সেই ফোনের তথ্যের সত্যতা জানিয়ে এখনও জবাব দেয়নি। তা হলে কেন সিবিআই লোকসভা ভোটের আগে চার্জশিট পেশের তোড়জোড় করছে? সংস্থা সূত্রের দাবি, ‘অরিজিনাল ডিভাইস’ পাওয়া না গেলেও তা তদন্তের পথে বাধা সৃষ্টি করছে না। কারণ, অভিযুক্তদের অনেকেই দাবি করেছেন, ওই অর্থ ভোটের চাঁদা হিসাবে নেওয়া হয়েছিল। যে জায়গায় টাকা দেওয়া হয়েছিল, দু’জন ছাড়া বাকি সবার ক্ষেত্রে তা যাচাই-ও করে এসেছে সিবিআই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy