আন্দোলন ভাঙতে ধর্না মঞ্চের বিশিষ্ট মুখ ১৩ জন আন্দোলনকারীকে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বাঁকা পথে চাকরির ব্যবস্থা করে দেন বলে আদালতে নথি পেশ করে দাবি করল সিবিআই। এসএসসি-র এক আধিকারিকের লিখিত বয়ান আলিপুর বিশেষ আদালতে সিবিআইয়ের তরফে পেশ করা হয়েছে। আদালতে শিক্ষক নিয়োগ মামলার বিচার প্রক্রিয়াতেই নথি পেশ করেছে সিবিআই।
তদন্তকারীদের দাবি, ২০২০ সালেই চাকরি থেকে বঞ্চিত যোগ্য প্রার্থীরা আন্দোলন শুরু করেছিলেন। দাবি, প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী তখন এসএসসির জরুরি বৈঠক ডাকেন বলে এসএসসি আধিকারিকের বয়ানে উঠে এসেছে। বয়ানের ভিত্তিতে তদন্তকারীদের দাবি, এসএসসি-র বৈঠকে পার্থ দাবি করেন, ১৩ জন প্রার্থীর চাকরির ব্যবস্থা করতে হবে। তদন্তকারীদের আরও দাবি, ওই ১৩ জনের চাকরির ব্যবস্থা যাতে করা হয়, সে জন্য তিনি মুখ্যমন্ত্রীর নামও নিয়েছিলেন। এর পরে তিনি বৈঠকে উপস্থিত শান্তিপ্রসাদ সিংহ এবং বাকি আধিকারিকদের একটি হাতে লেখা তালিকাও ধরিয়ে দেন।
তবে ১৩ জন আন্দোলনকারীর বাঁকা পথে চাকরির ব্যবস্থা করার ক্ষেত্রে নানা অসুবিধা হতে পারে বলে ওই বৈঠকে আশঙ্কা প্রকাশকরেছেন শান্তিপ্রসাদ। তিনি নাকি বলেন, ‘‘ওই ১৩ জন প্যানেলের বাইরের। তাঁদের নম্বর বাড়ানোর সুযোগ নেই। সরাসরি নিয়োগপত্র তৈরি করে বাঁকা পথে চাকরির ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি ওই ১৩ জনের জন্য আলাদা শূন্য পদ সৃষ্টি করতে হবে। কাজটা জটিল।’’
প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী অবশ্য কোনও ওজর-আপত্তি গ্রাহ্য না-করেই জরুরি ভিত্তিতে ওই ১৩ জনের নিয়োগের নির্দেশ দেন বলে দাবি। ওই সাক্ষীর বয়ান, এর পরে ওই ১৩ জনের নামের তালিকা ধরে বিভিন্ন আঞ্চলিক অফিসের মাধ্যমে শূন্য পদ সৃষ্টি করে তাঁদের নিয়োগ করা হয়।
এসএসসি অফিস থেকে ওই ১৩ জন নিয়োগপত্র নিয়ে গিয়েছিলেন বলে লিখিত বয়ানে দাবি করেছেন ওই সাক্ষী। তাঁরা প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী এবং তাঁর ব্যক্তিগত সচিব প্রবীর বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ দিয়েছিলেন বলেও দাবি।
ওই সাক্ষীর লিখিত বয়ানে, ‘বাঁকা পথে’ চাকরি পাওয়া ওই ১৩ আন্দোলনকারীর নামও উল্লেখ করা হয়েছে বলে আদালত সূত্রে খবর। তবে পার্থ মুখ্যমন্ত্রীর নাম করলেও সেই নিয়োগের নেপথ্যে সত্যিই মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ ছিল কি না, সেই বিষয়ে এসএসসির আধিকারিকরাও অন্ধকারে ছিলেন বলে লিখিত বয়ানে দাবি করেছেন ওই সাক্ষী।
তবে সিবিআইয়ের দাবি, যোগ্য প্রার্থীদের আন্দোলন ভেঙে দেওয়া এবং আদালতে যোগ্য প্রার্থীদের মামলার দায়ের করার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টির জন্যই ওই ১৩ জন নেতা-নেত্রীকে বাঁকা পথে চাকরি দিয়ে মুখ বন্ধ করার চেষ্টা করেন পার্থ।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে চাকরি হারানো ২৬ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকাদের তালিকায় ওই ১৩ জনের নাম রয়েছে বলে লিখিতবয়ানে দাবি করেছেন মামলার তদন্তকারী অফিসার।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)