E-Paper

মন্ত্রী-ঘনিষ্ঠের বয়ানেই কাঁটা তোলার ছক সিবিআইয়ের

তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি এবং মে মাসে অন্তত দু’দফায় প্রবীরের বয়ান নিয়েছে সিবিআই। তাঁর মোবাইল ফোনের কিছু নথিও গুরুত্বপূর্ণ তথ‍্যপ্রমাণ হিসেবে সংগ্রহ করা হয়েছে।

শুভাশিস ঘটক

শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৭:৩২
প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের প্রতি ‘আনুগত্যে’ খাদ ছিল না তাঁর। তবে সিবিআইয়ের মতে, পার্থের ব্যক্তিগত সচিব প্রবীর বন্দ্যোপাধ্যায় অক্ষরে অক্ষরে মন্ত্রীর আদেশ পালন করলেও ভবিষ‍্যতে বিপদে নিজের পিঠ বাঁচানোর রাস্তাটুকু করে রেখেছিলেন। তাতেই কিছুটা নিস্তার পেয়েছেন তিনি। পার্থের ঘনিষ্ঠ বলয়ের লোক প্রবীর স্কুল সার্ভিস কমিশনের শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় মন্ত্রীর নির্দেশে তৈরি মনিটরিং কমিটিরও সদস‍্য ছিলেন। বিচার পর্বে পার্থ-ঘনিষ্ঠ ওই আধিকারিকের বয়ান পার্থেরই বিরুদ্ধে হাতিয়ার করতে চলেছে সিবিআই। যা ‘কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার’ কৌশল বলে মনে করা হচ্ছে।

তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি এবং মে মাসে অন্তত দু’দফায় প্রবীরের বয়ান নিয়েছে সিবিআই। তাঁর মোবাইল ফোনের কিছু নথিও গুরুত্বপূর্ণ তথ‍্যপ্রমাণ হিসেবে সংগ্রহ করা হয়েছে। সিবিআইয়ের দাবি, প্রবীর বয়ানে জানিয়েছেন যে পার্থ ছোট ছোট কাগজের ‘চিট’ বা টুকরোয় অযোগ্য প্রার্থীদের নাম পাঠাতেন। ভবিষ্যতে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে নিজেকে বাঁচাতেই তিনি ওই সব ‘চিট’-এর নির্দেশ এবং অযোগ‍্য প্রার্থীদের নামের ছবি মোবাইলে তুলে রেখেছিলেন।

এসএসসি-র একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় পার্থ, তাঁর আপ্তসহায়ক সুকান্ত আচার্য, প্রাক্তন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারী ও পরেশকন‍্যা অঙ্কিতাকে বিচারে দোষী সাব‍্যস্ত করতে প্রবীরের বয়ান ও তাঁর কাছ থেকে পাওয়া নথিতে ভরসা করছেন তদন্তকারীরা। আলিপুর সিবিআই বিশেষ আদালতে ওই মামলার চার্জ গঠন হয়ে গিয়েছে। সপ্তাহ খানেকের মধ্যে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হবে।

তদন্তকারীদের কথায়, পার্থের ব্যক্তিগত সচিবের বক্তব্যে ও নথিতে স্পষ্ট হচ্ছে অযোগ্য প্রার্থীদের একাংশকে বাঁকা পথে চাকরি পাইয়ে দিতে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর ভূমিকা। মেধা তালিকার অনেক নীচে থাকা প্রাক্তন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারীর মেয়ে অঙ্কিতাকেও একই ভাবে চাকরি দেওয়া হয়েছিল বলে তদন্তকারীদের দাবি। প্রবীরের বয়ান অনুযায়ী, পার্থের নির্দেশ অনুযায়ী অযোগ‍্যদের নামের তালিকা মন্ত্রীর আপ্তসহায়ক সুকান্ত আচার্য তাঁর হাতে দিয়ে যেতেন। তা এসএসসি-র প্রাক্তন উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিংহের কাছে পৌঁছে দিতে হত। নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে মনিটরিং কমিটি গড়া ও বিকাশ ভবনে তাঁর নিজের ঘরে সেই কমিটির বৈঠকের অভিজ্ঞতাও প্রবীরের বয়ানে স্পষ্ট বলে তদন্তকারীদের দাবি।

সিবিআই সূত্রে প্রকাশ, প্রবীর জানিয়েছেন যে মন্ত্রীর উপস্থিতিতে ওই কমিটির বৈঠকের ধারাবিবরণী লিপিবদ্ধ হত না। তাতে প্রধানত চর্চা হত অযোগ‍্যদের সুযোগ পাওয়ানোর বিষয় নিয়ে। বৈঠকের নামকাওয়াস্তে রিপোর্ট তৈরি করে পরে তা তৎকালীন শিক্ষা সচিবের দফতরে পাঠানো হত। একাদশ-দ্বাদশ বা নবম-দশম শ্রেণিতে নিয়োগের পরে কোনও কোনও অযোগ‍্য শিক্ষক তৎকালীন মন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান বলে বয়ানে দাবি করেছেন প্রবীর।

সিবিআই কর্তাদের দাবি, নিয়োগ দুর্নীতি প্রক্রিয়ার সব কিছু অবগত থাকলেও প্রবীর নিজে তা থেকে লাভবান হননি বলেই তাঁকে সাক্ষী করার কথা ভাবা হচ্ছে। সিবিআইয়ের দাবি, প্রবীর নিজে কোনও অযোগ‍্য প্রার্থীর হয়ে সুপারিশ করেছেন বলে তদন্তে উঠে আসেনি। তবে পার্থের আপ্তসহায়ক সুকান্ত আচার্য দুর্নীতিতে সরাসরি জড়িত বলেই দাবি করেছেন তাঁরা। পার্থের আইনজীবী বিপ্লব গোস্বামী কিন্তু মনিটরিং কমিটির সদস্য হয়েও প্রবীরের ছাড় পাওয়া আইনত ঠিক নয় বলে মামলার চার্জ গঠনের শুনানিতে প্রশ্ন তুলেছেন।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Partha Chatterjee Recruitment Case CBI Investigation CBI

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy