Advertisement
১৮ মে ২০২৪

জয় তো আপনার, হেরেও শুনলেন কপিল

বৃহস্পতিবার বেলা তখন সওয়া একটা। একটু আগেই মদন মিত্রের জামিনের আবেদন নাকচ করে দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি নিশীথা মাত্রে-র ডিভিশন বেঞ্চ। আদালত কক্ষের বাইরে দাঁড়িয়ে সিবিআই কৌঁসুলি কে রাঘবচারুলু। পরাজিত কপিল সিব্বলও সেই সময় বেরিয়ে এসেছেন সেই আদালত থেকে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কাতা শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০১৫ ০৩:২২
Share: Save:

বৃহস্পতিবার বেলা তখন সওয়া একটা। একটু আগেই মদন মিত্রের জামিনের আবেদন নাকচ করে দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি নিশীথা মাত্রে-র ডিভিশন বেঞ্চ। আদালত কক্ষের বাইরে দাঁড়িয়ে সিবিআই কৌঁসুলি কে রাঘবচারুলু। পরাজিত কপিল সিব্বলও সেই সময় বেরিয়ে এসেছেন সেই আদালত থেকে।

রাঘবচারুলুকে দেখে এগিয়ে গেলেন কপিল সিব্বল। করমর্দনের জন্য হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, ‘‘অভিনন্দন! তোমার জয় হল!’’ ঠোঁটে হাল্কা হাসি নিয়ে রাঘবচারুলুর বিনীত জবাব, ‘‘কী যে বলেন স্যার! এ তো আপনারই জয়!’’

এমন জবাবের জন্য সম্ভবত তৈরি ছিলেন না সিব্বল। রসিক বলে ঘনিষ্ঠ মহলে নাম রয়েছে রাঘবচারুলু-র। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায়, এমনকী সওয়ালের মধ্যেও রসিকতার অভ্যাস রয়েছে তাঁর। কপিল সিব্বলও দেশের নামী আইনজীবী, কেন্দ্রে আইনমন্ত্রী ছিলেন। এমনই নামডাক যে, সওয়াল করার জন্য ভাড়া করা বিমানে দিল্লি থেকে উড়িয়ে আনা হয়েছে তাঁকে। সঙ্গে আরও তিন আইনজীবী। রাঘবচারুলুর প্রতিক্রিয়ায় হকচকিয়ে গিয়ে সিব্বল বললেন, ‘‘সে কী! জিতলেন তো আপনি! আমার জয় হল কী করে?’’

রাঘবচারুলু তখন আরও বিনীত, ‘‘স্যার, ২০১৩ সালের ৬ মার্চ সিবিআই-এর আইনজীবী হিসেবে আমি যখন নিয়োগপত্র পাই, তখন আপনিই দেশের আইনমন্ত্রী। সেই অর্থে আপনার হাতেই আমার নিয়োগ। সেই হিসেবে আজ যদি আমার জয় হয়ে থাকে, তা-ও প্রকারান্তরে আপনারই জয়। ঠিক কি না বলুন!’’

অতঃপর শুকনো হাসি দিয়ে সৌজন্য পর্বে ইতি টানলেন সিব্বল।

তবে তার আগের দু’ঘণ্টায় দুই আইনজীবীর মধ্যে এমন সৌজন্য চোখে পড়েনি। এক জন একটি মন্তব্য করার পরেই পাল্টা যুক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন অন্য জন। বৃহস্পতিবার বেলা ১০টা থেকেই হাইকোর্টের তিন তলায় ১৭ নম্বর আদালতে বিচারপতি মাত্রে-র ডিভিশন বেঞ্চে মদন মিত্রের জামিন মামলার সওয়াল শুনতে ভিড় জমান হাইকোর্টের আইনজীবীরা। ১০টা ২৬ মিনিটে এজলাসে ওঠেন বিচারপতি নিশীথা মাত্রে এবং বিচারপতি আশা অরোরা। মদন-মামলা ছিল তালিকার তিন নম্বরে। সাড়ে ১০টার কিছু পরে আরম্ভ হল শুনানি। শুরুতেই বিতর্কের সৃষ্টি করে সিব্বল বললেন, ‘‘আমার চল্লিশ বছরের আইনি পেশায় এই প্রথম একসঙ্গে দুই মহিলা বিচারপতির মুখোমুখি হলাম।’’ বাক্যটা শেষ হতে না হতেই বিচারপতি মাত্রে-র মন্তব্য, ‘‘মহিলা নয়, আমাদের বিচারপতি হিসেবেই দেখুন।’’ সিব্বল আর কথা না বাড়িয়ে সওয়াল শুরু করতে প্রস্তুত হলেন। তাঁর দিকে কাগজপত্র এগিয়ে দিলেন মদনের এখানকার আইনজীবী নীলাদ্রি ভট্টাচার্য।

আদালতে তখন তিল ধারণের জায়গা নেই। মুহুরি থেকে শুরু করে পাবলিক প্রসিকিউটর অফিসের কর্মী, সাংবাদিক— ভিড়ের চাপে দরজা বন্ধ করা যাচ্ছে না। বাইরে কৌতূহলীদের জটলা আরও থিকথিকে। এতটাই যে এক সাংবাদিক বিশেষ প্রয়োজনে বাইরে বেরিয়ে আর ঢুকতেই পারলেন না। প্রবল চিৎকার-চেঁচামেচি চলছে। বিচারপতি মাত্রে সিব্বলের উদ্দেশে বলে উঠলেন, ‘‘আওয়াজ বন্ধ না হলে সওয়াল করবেন না।’’ ফলে শুরু করেও কিছু ক্ষণ সওয়াল বন্ধ রাখতে হল সিব্বলকে। বেলা পৌনে ১১টা নাগাদ ফের শুরু হল সওয়াল। কিন্তু মিনিট কয়েকের মধ্যেই ভিড়ের চাপে ঝনঝন করে আদালতের একটি আলমারির কাচ গেল ভেঙে। এ বার এজলাস থেকে উঠে গেলেন দুই বিচারপতি। সেই সুযোগে আরও আইনজীবী ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করতে লাগলেন। বাইরে প্রহরারত পুলিশ কর্মীরা ভিড় সামলাতে একেবারে হিমসিম খাচ্ছেন তখন।

বেলা ১১টা ৩ মিনিট। এজলাসে ফিরলেন দুই বিচারপতি। ফের সওয়াল শুরু করলেন সিব্বল। ভিড়ের চাপে আদালতের কাজ ব্যাহত হচ্ছে শুনে তত ক্ষণে ১৭ নম্বর আদালতের সামনে হাজির কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার লক্ষ্মীনারায়ণ মিনা, ডেপুটি কমিশনার (মধ্য) বাস্তব বৈদ্য, ডেপুটি কমিশনার (ইবি) রবীন্দ্রনাথ সরকার। বিধানসভার ৬ নম্বর গেটের সামনে মোতায়েন করা হয় পুলিশ বাহিনী। ১২টা ১০ নাগাদ সওয়াল করতে উঠলেন সিবিআই-এর আইনজীবী রাঘবচারুলু। প্রায় ৩৫ মিনিট ধরে জামিনের বিরোধিতা করে একের পর এক যুক্তি সাজালেন তিনি। পৌনে ১টায় সওয়াল শেষ হওয়ার পরে ২০ মিনিট সময় নিলেন দুই বিচারপতি।

বেলা ১টা ৫। বিচারপতি মাত্রে জানিয়ে দিলেন, মদন মিত্রের জামিনের আবেদন খারিজ। মিনিট দশেকের মধ্যে খালি হয়ে গেল ভিড়ে ঠাসা ১৭ নম্বর কোর্ট।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE