Advertisement
০৮ মে ২০২৪

একটিই ঠিকানায় ৪৩টি লাইসেন্স কেন, চিঠি পুরসভাকে

একটা-দু’‌টো নয়। কলকাতা পুরসভা বেহালার একটি ঠিকানায় সারদা গোষ্ঠীর ৪৩টি সংস্থার নামে ট্রেড লাইসেন্স দিয়েছিল বলে অভিযোগ। শেক্সপিয়র সরণিরও একটি ঠিকানায় দেওয়া হয়েছিল একাধিক ট্রেড লাইসেন্স। সিবিআই সূত্রের খবর, কী ভাবে সারদা গোষ্ঠী এত লাইসেন্স পেয়েছিল, তা জানতে চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে পুরসভাকে। চিঠিতে আগামী ১৫ জুনের মধ্যে এই সংক্রান্ত সব তথ্য সিবিআইয়ের অফিসে জমা দিতে বলা হয়েছে।

সোমবার সিবিআই দফতরে প্রকাশ উপাধ্যায়। — নিজস্ব চিত্র

সোমবার সিবিআই দফতরে প্রকাশ উপাধ্যায়। — নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৫ ০৩:৪৮
Share: Save:

একটা-দু’‌টো নয়। কলকাতা পুরসভা বেহালার একটি ঠিকানায় সারদা গোষ্ঠীর ৪৩টি সংস্থার নামে ট্রেড লাইসেন্স দিয়েছিল বলে অভিযোগ। শেক্সপিয়র সরণিরও একটি ঠিকানায় দেওয়া হয়েছিল একাধিক ট্রেড লাইসেন্স। সিবিআই সূত্রের খবর, কী ভাবে সারদা গোষ্ঠী এত লাইসেন্স পেয়েছিল, তা জানতে চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে পুরসভাকে। চিঠিতে আগামী ১৫ জুনের মধ্যে এই সংক্রান্ত সব তথ্য সিবিআইয়ের অফিসে জমা দিতে বলা হয়েছে।
মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় অবশ্য সিবিআইয়ের এই চিঠির কথা উড়িয়ে দিয়েছেন। ‘‘সোমবার অফিস বন্ধ হওয়া পর্যন্ত এ-রকম কোনও চিঠি পুরসভায় আসেনি,’’ বলেছেন মেয়র।
সারদা কেলেঙ্কারি নিয়ে হইচই শুরু হওয়ার পরে একই ঠিকানায় এই বিপুল সংখ্যক ট্রেড লাইসেন্স দেওয়ার বিষয়টি প্রকাশ্যে আনেন কংগ্রেস কাউন্সিলর প্রকাশ উপাধ্যায়। তিনি সিবিআইয়ের তদন্তকারীদের কাছে গিয়ে এই বিষয়ে অভিযোগ জানান। পুরসভায় লাইসেন্স-দুর্নীতির অভিযোগ তুলে কিছু তথ্যও জমা দিয়েছিলেন তদন্তকারীদের কাছে। এ দিন সল্টলেকে সিবিআইয়ের আঞ্চলিক অফিসে দাঁড়িয়ে ওই চি‌ঠির একটি প্রতিলিপি সাংবাদিকদের দেখান উপাধ্যায়। পরে তিনি বলেন, ‘‘সিবিআই বিষয়টি নিয়ে নাড়া দেওয়ায় অনেক দুর্নীতি সামনে আসবে।’’ উপাধ্যায়ের দেখানো ওই চিঠির বিষয়ে মেয়রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘‘একটি সংস্থা অন্য একটি সংস্থাকে চিঠি দিল। যাকে চিঠি দেওয়া হল, সে চিঠি পাওয়ার আগেই তা বাইরে বেরিয়ে গেল! ঘটনাটি রহস্যজনক এবং দুর্ভাগ্যের।’’

লাইসেন্সের বিষয়টি তদন্তকারীদের সামনে ধোঁয়াশা তৈরি করেছে বলে সিবিআইয়ের সূত্রের খবর। সেই ধন্দ কাটাতেই সিবিআইয়ের স্পেশ্যাল ক্রাইম ব্রাঞ্চের অতিরিক্ত এসপি ফণিভূষণ কর্ণ গত ৪ জুন কলকাতা পুরসভার লাইসেন্স বিভাগের চিফ ম্যানেজারের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন।

কী আছে ওই চিঠিতে?

সিবিআইয়ের এক পদস্থ অফিসার জানান, একই ঠিকানায় সারদা গোষ্ঠীর একাধিক সংস্থাকে কী ভাবে লাইসেন্স দেওয়া হল, ওই চিঠিতে তা জানাতে বলা হয়েছে। সংস্থাগুলির দেওয়া ট্রেড লাইসেন্সের প্রতিলিপিও চাওয়া হয়েছে পুরসভার কাছে। লাইসেন্সের জন্য সারদা যে-আবেদনপত্র জমা দিয়েছিল এবং তার ভিত্তিতে পুরসভা যে-ভেরিফিকেশন রিপোর্ট তৈরি করেছিল, তা-ও জমা দিতে বলেছেন তদন্তকারীরা। ট্রেড লাইসেন্সের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বরো অফিসের সুপারিশপত্রও জমা দিতে বলা হয়েছে। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, সারদার কাছ থেকে লাইসেন্স ফি বাবদ পুরসভা কত টাকা নিয়েছিল, তা বিস্তারিত ভাবে জানাতে হবে। এ ছাড়াও ডায়মন্ড হারবার রোড ও শেক্সপিয়র সরণির ওই দু’টি ঠিকানায় অন্য যে-সব সংস্থাকে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে, তদন্তকারীরা তাদের মালিকানা ও ব্যবসা সংক্রান্ত সবিস্তার তথ্যও চেয়েছেন পুরসভার কাছে।

সিবিআইয়ের একটি সূত্র বলছে, সারদার এই লাইসেন্স-রহস্য নিয়ে এক দফা তদন্ত চালানো হয়েছে। তাতে জানা গিয়েছে, ডায়মন্ড হারবার রোডের ওই ঠিকানায় সারদা গার্ডেনের জমি ব্যবসার অফিস খোলা হয়েছিল। সারদা অর্থ লগ্নির ব্যবসা শুরু করার পরে একের পর এক কোম্পানির নামে ট্রেড লাইসেন্স দেওয়া হয়। সিবিআইয়ের এক কর্তার কথায়, ‘‘৪৫৫ ডায়মন্ড হারবার রোডের অফিসেও ট্রেড লাইসেন্স আছে আবার একই কোম্পানির নামে বিধাননগর পুরসভাতেও ট্রেড লাইসেন্স রয়েছে— এমন উদাহরণও মিলেছে।’’ গোয়েন্দা সূত্রের বক্তব্য, কলকাতা পুরসভার লাইসেন্স সংক্রান্ত তথ্য খতিয়ে দেখার পরে বিধাননগর পুরসভার কাছেও এমন তথ্য চাওয়া হতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE