Advertisement
০৭ মে ২০২৪
Nabanna

অফিসার চাই, রাজ্যকে বার্তা পাঠাল কেন্দ্র

কোনও আইএএস অফিসারের কর্মজীবন ১৬ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে অন্তত দু’বছরের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরি করা নিয়ে আগের নির্দেশিকা কার্যত কঠোর ভাবে প্রয়োগ করতে চাইছে কেন্দ্র।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

চন্দ্রপ্রভ ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০২২ ০৭:১৯
Share: Save:

কেন্দ্রের আইএএস-আইপিএস ক্যাডার আইন সংশোধন করতে চাওয়া নিয়ে বিতর্ক চরমে পৌঁছেছিল এ বছরের গোড়ায়। রাজ্যগুলির আপত্তি থাকলেও কেন্দ্র যে সেই পথেই হাঁটতে চায়, তা তাদের মনোভাবে স্পষ্ট ছিল বলেই মনে করেন প্রবীণ আমলারা। সাম্প্রতিক একটি বৈঠকে কেন্দ্রের আরও জোরদার মনোভাবের আঁচ পাওয়া গিয়েছে বলে খবর। প্রশাসন সূত্রের দাবি, কিছু দিন আগে পশ্চিমবঙ্গ-সহ সব রাজ্যের সঙ্গে হওয়া একটি বৈঠকে কেন্দ্র ফের ইঙ্গিত দিয়েছে, রাজ্যগুলিকে নির্ধারিত সংখ্যায় আইএএস-আইপিএস অফিসার কেন্দ্রে পাঠাতেই হবে।

কেন্দ্রের মনোভাব নিয়ে প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকদের অনেকে মনে করছেন, কোনও আইএএস অফিসারের কর্মজীবন ১৬ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে অন্তত দু’বছরের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরি করা নিয়ে আগের নির্দেশিকা কার্যত কঠোর ভাবে প্রয়োগ করতে চাইছে কেন্দ্র।

দিল্লিতে বৈঠকটি হয়েছিল সব রাজ্যের কর্মিবর্গ ও প্রশাসনিক সংস্কার দফতরের আধিকারিকদের নিয়ে। ছিলেন কেন্দ্রের কর্মিবর্গ মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহও। বৈঠকে কেন্দ্র বুঝিয়েছে, তাদের অফিসারের সংখ্যায় প্রবল ঘাটতি। কারণ, রাজ্যগুলি যথাযথ পরিমাণে আইএএস-আইপিএস অফিসারদের কেন্দ্রীয় ডেপুটেশনে পাঠাচ্ছে না। কেন্দ্রের চাকরিতে অফিসারদের ঘাটতি মেটাতে আরও বেশি সংখ্যায় আইএএস এবং আইপিএস অফিসারদের ছাড়তে হবে বলেও সেই বৈঠকে জানানো হয়। কেন্দ্রীয় সরকারের এক অফিসারের কথায়, “১৮০ জন অফিসারকে ইতিমধ্যেই নিয়োগ করা হয়েছে। ৪৩৪টি শূন্যপদ পূরণ করা আশু প্রয়োজন।”

রাজ্য প্রশাসনের প্রবীণ কর্তাদের অনেকেরই অনুমান, কেন্দ্রের এমন ইঙ্গিত খুব তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় আলোচনার তত্ত্ব ধরলে কেন্দ্র প্রতিটি রাজ্যকে নিজেদের অবস্থান পুনরায় স্পষ্ট করে দিয়েছে ওই বৈঠকের মাধ্যমে। তার পরেও রাজ্যগুলি সেই আবেদনে সাড়া না দিলে বরং কেন্দ্র তাদের ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে। তখন রাজ্যগুলি সরব হলেও, তাতে হয়ত আমল না-ও দিতে পারে কেন্দ্র।

প্রশাসনিক কর্তাদের অনেকেই জানাচ্ছেন, কেন্দ্রীয় সরকারের যুগ্মসচিব, অতিরিক্ত সচিব স্তরের অফিসার-সংখ্যা কম থাকলেও, উপ-সচিব অথবা ডিরেক্টর পর্যায়ে কাজ করার জন্য নবীন অফিসারদের ঘাটতিই এখন প্রবল হয়ে দেখা দিয়েছে।

প্রসঙ্গত, কয়েক বছর আগেই কেন্দ্র নির্দেশিকা দিয়ে জানিয়েছিল, ২০০৭ ব্যাচ থেকে অফিসারদের কর্মজীবন ১৬ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে কেন্দ্রের চাকরিতে দু’বছর কাটাতেই হবে। না-হলে কেন্দ্রের চাকরিতে পদোন্নতির পরবর্তী সুযোগগুলি থেকে বঞ্চিত হতে পারেন সংশ্লিষ্ট অফিসার। তার পরেও রাজ্যগুলির তরফে তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ। প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, “রাজ্য ক্যাডারে যোগ দেওয়ার আগে মাস-তিনেকের জন্য কেন্দ্রের ডেপুটেশনে থাকতে হয় জুনিয়র আইএএস অফিসারদের। কিন্তু সেই সময়সীমা এবং অফিসারদের অভিজ্ঞতা যথেষ্ট নয়। তাই রাজ্য ক্যাডারে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকা জুনিয়র অফিসারদের বেশি করে পেতে চাইছে কেন্দ্র।”

প্রশাসনিক কর্তাদের অনেকেই মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ক্যাডার আইন সংশোধনের ক্ষেত্রে কেন্দ্রের মূলত তিনটি প্রস্তাব ছিল। এক, রাজ্য থেকে কেন্দ্রের ডেপুটেশনে যে সংখ্যায় অফিসার পাঠানোর রীতি, তা বজায় রাখতেই হবে। দুই, তা না-হলে, রাজ্যের সঙ্গে কথা বলে অফিসার বা অফিসারদের ডেপুটেশনে চাইবে কেন্দ্র। রাজ্য আপত্তি করলেও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট অফিসার বা অফিসারদের কেন্দ্রের ডেপুটেশনে টেনে (স্ট্যান্ড রিলিভড) নেওয়া হবে। তিন, তার বাইরেও কোনও অফিসারকে নির্দিষ্ট কোনও পদে বসাতে চাইলে রাজ্যকে কেন্দ্রের প্রস্তাব মেনে নিতে হবে।

প্রবীণ আমলাদের অনেকেই জানাচ্ছেন, যে অফিসারেরা কেন্দ্রের চাকরির স্বাদ পেতে চান, তাঁদের এতে কিছুটা সুবিধা হবে। কিন্তু কেন্দ্রের কড়াকড়ির পরেও রাজ্য না-ছাড়লে তাঁরা সমস্যায় পড়তেও পারেন। এক কর্তার বক্তব্য, “২০০৭ ব্যাচ থেকে দু’বছরের কেন্দ্রীয় ডেপুটেশনে না গেলে কোনও অফিসারের পদোন্নতি বন্ধের শাস্তি হবে কি না, তা বোঝা যাবে আগামী বছর থেকে। কারণ, ওই অফিসারদের চাকরি জীবনের ১৬ বছর পূর্ণ হবে ২০২৩ সালে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Nabanna IAS IPS
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE