Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

ধনখড়-রক্ষণে পুলিশকেও চায় সিআরপি

দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার চূড়ান্ত প্রস্তুতি সেরে ফেলছেন সিআরপি-কর্তারা।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০১৯ ০৪:০৮
Share: Save:

আপত্তি আছে রাজ্য সরকারের। তা সত্ত্বেও রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের নিরাপত্তার ভার ‘দ্রুত’ নিজেদের হাতে তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিআরপি। নতুন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কোনও নির্দেশিকা না-এলে দু’চার দিনের মধ্যেই তারা ধনখড়ের ব্যক্তিগত নিরাপত্তার ভার নেবে বলে সিআরপি সূত্রে জানানো হয়েছে।

দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার চূড়ান্ত প্রস্তুতি সেরে ফেলছেন সিআরপি-কর্তারা। কেন্দ্রীয় বাহিনীর পশ্চিমবঙ্গ সেক্টরের আইজি রবীন্দ্রন শঙ্করন বলেন, ‘‘রাজ্যপালের নিরাপত্তার ভার আমরা দ্রুত হাতে নেব। ভিআইপি-র নিরাপত্তা অবশ্য কারও একক দায়িত্ব নয়। রাজ্য পুলিশ, কলকাতা পুলিশও আমাদের সাহায্য করবে। রাজ্যপালের নিরাপত্তার মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে সেটা তাদের করতেই হবে।’’

সিআরপি কেন রাজ্যপালের নিরাপত্তার ভার নিচ্ছে, সেই প্রশ্ন তুলেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে চিঠি দিয়েছে নবান্ন। তাতে বলা হয়েছে, শপথের দিন থেকেই রাজ্যপালকে জ়েড ক্যাটিগরির নিরাপত্তা দেওয়া হয়। কোনও রকম আগাম আলোচনা ছাড়া কেন্দ্র একতরফা ভাবে রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধানের নিরাপত্তার ভার নিয়ে নিতে পারে না। এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা হোক।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বক্তব্য, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্প্রতিক অশান্তির পরিপ্রেক্ষিতে নির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে রাজ্যপালের নিরাপত্তায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। দেওয়া হয়েছে জ়েড ক্যাটেগরির নিরাপত্তা। রাজ্যের পুনর্বিবেচনার আবেদন মন্ত্রক বিবেচনা করবে। তবে এক বার নিরাপত্তা বহালের পরে সাত দিনের মধ্যে তা প্রত্যাহার করার সম্ভাবনা নেই বলেই জানাচ্ছেন মন্ত্রকের কর্তাদের একাংশ।

গত সাত দিন ধরে রাজ্যপালের নিরাপত্তা পর্যালোচনা সংক্রান্ত বৈঠক ঘিরে পুলিশের সঙ্গে সি‌আরপি-র টালবাহানা চলছে। সিআরপি-কর্তারা বারবার পুলিশের সঙ্গে যৌথ নিরাপত্তা পর্যালোচনায় বসতে চাইলেও পুলিশকর্তারা তা এড়িয়ে গিয়েছেন। ২১ অক্টোবর বিকেলে বৈঠক চূড়ান্ত হওয়ার পরেও পুলিশকর্তারা হাজির না-হওয়ায় বৈঠক আর হয়নি।

সিআরপি-র বক্তব্য, যৌথ বৈঠকের জন্য অনন্তকাল অপেক্ষা করা যাবে না। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক যে-ভার দিয়েছে, তা রূপায়ণ করা তাদের দায়িত্ব। সেই কাজ করতেই হবে। তবে রাজ্যপালের নিরাপত্তা সিআরপি-র একার দায়িত্ব নয়। সিআরপি মূলত দেহরক্ষীর কাজ করবে। এসকর্ট, পাইলট, রাস্তায় টহল, ট্র্যাফিক, ভিড় সামলানোর কাজ করতে হবে পুলিশকেই। এ ক্ষেত্রে কলকাতা ও রাজ্য পুলিশ, রাজ্য ও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বাহিনীর সঙ্গে রাজ্যপালের সচিবালয়ের সমান দায়িত্ব রয়েছে।

তা হলে যৌথ বৈঠকের কথা বলে এত দিন রাজ্যপালের নিরাপত্তার দায়িত্ব নেওয়া হচ্ছিল না কেন?

সিআরপি-র আইজি বলেন, ‘‘আমরা কয়েক বার ‘আনুষ্ঠানিক’ বৈঠকের চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু এখন আর বৈঠকের প্রয়োজন আছে বলে মনে হচ্ছে না। বৈঠক না-হলেও রাজ্য পুলিশের কর্তারা আমাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। ফলে আমরা দায়িত্ব নিলে নিরাপত্তাজনিত সমন্বয় বজায় রাখা সম্ভব হবে।’’

নবান্ন সূত্রের খবর, রাজ্যপালকে একতরফা ভাবে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা দেওয়ার ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নীতিগত আপত্তি রয়েছে। সেই আপত্তির কথা জানানো হয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে। ফলে সিআরপি-র সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনায় বসা সম্ভব নয়। তবে রাজ্যপালের নিরাপত্তায় যাতে কোনও বিঘ্ন না-ঘটে, পুলিশ তা দেখছে বলে জানান ভিআইপি নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এক কর্তা। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা এখনও আশা করছি, রাজ্যের আপত্তির কথা মেনে নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক রাজ্যপালের নিরাপত্তার দায়িত্ব থেকে সিআরপি তুলে নেবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE