সুশান্ত দত্তগুপ্ত
রাষ্ট্রপতির সম্মতি মিলতেই বিশ্বভারতীর উপাচার্য সুশান্ত দত্তগুপ্তকে কারণ দর্শানোর নোটিস পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিল কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক। আগামী সপ্তাহেই ওই শো-কজ নোটিস পাঠানো হবে। উপাচার্যের বিরুদ্ধে ওঠা নানা অভিযোগের তদন্ত করতে যে অনুসন্ধান কমিটি তৈরি করেছিল মন্ত্রক, তার রিপোর্টের ভিত্তিতে এই পদক্ষেপ। মন্ত্রক জানিয়েছে, সুশান্তবাবুর উত্তর পাঠিয়ে দেওয়া হবে রাষ্ট্রপতি তথা বিশ্বভারতীর পরিদর্শক প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কাছে। তিনি সন্তুষ্ট না হলে সুশান্তবাবুর বিরুদ্ধে পরবর্তী প্রক্রিয়া শুরু করবে মন্ত্রক।
সুশান্তবাবু এখন শান্তিনিকেতনে নেই। সূত্রের খবর, তিনি নাগপুরের বঙ্গ সম্মেলনে রয়েছেন। তবে বিশ্বভারতীর অধ্যাপকদের একাংশ জানান, অনিয়মের অভিযোগের জন্য উপাচার্য মন্ত্রকের থেকে ‘শো কজ’ চিঠি পেলে তা হবে বিশ্বভারতীর ইতিহাসে প্রথম এমন ঘটনা।
সুশান্তবাবুর বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম, ক্ষমতার অপব্যবহার করে পদ সৃষ্টি, মহিলা কর্মীর যৌন হেনস্থার অভিযোগ ধামাচাপ দেওয়ার মতো নানা অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ আসার পরে একটি তদন্ত কমিটি গড়ে স্মৃতি ইরানির মন্ত্রক। সেই কমিটি দফায় দফায় বিশ্বভারতীর নানা মহলের সঙ্গে কথা বলে এপ্রিলে রিপোর্ট দেয়। সূত্রের খবর, রিপোর্ট সুশান্তবাবুর বিরুদ্ধেই গিয়েছে।
উপাচার্য ইতিমধ্যেই মানব উন্নয়ন মন্ত্রকের অনুসন্ধান কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন। তাঁর আবেদনে তিনি জানিয়েছেন, বিশ্বভারতী একটি স্বশাসিত সংস্থা, সেখানে অনিয়মের অভিযোগের তদন্ত করতে নিজস্ব কমিটি রয়েছে। তাই আলাদা কমিটি গঠনের প্রয়োজন নেই। আদালতের কাছে অনুসন্ধান কমিটির কাজে স্থগিতাদেশ চান তিনি। কেন্দ্রের কৌঁসুলি বলেন, রাষ্ট্রপতিই বিশ্বভারতীর পরিদর্শক হিসেবে কমিটি গড়ার অনুমোদন দিয়েছেন। তাই কমিটি বৈধ। হাইকোর্ট পরবর্তী শুনানি ধার্য করে ৭ জুলাই। তার আগেই শোকজ নোটিস আসার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
আজ মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, ‘‘রাষ্ট্রপতি নোটিস দেওয়ার অনুমতি দিয়েছেন। তা থেকে স্পষ্ট, অভিযোগগুলির যথেষ্ট সারবত্তা রয়েছে। তাই আর দেরি না করে কারণ দর্শানোর নোটিস পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’
সুশান্তবাবুর বিরুদ্ধে কী অভিযোগ রয়েছে? সূত্রের খবর, তিনি উপাচার্য হিসাবে বেতন নেওয়ার পাশাপাশি আগের সংস্থা থেকে পেনশনও পাচ্ছেন। একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত একজন ব্যক্তি এ ভাবে পেনশন পেতে পারেন না বলে সংসদে সরব হয়েছিলেন কংগ্রেসের প্রদীপ ভট্টাচার্য। সুশান্তবাবুর যুক্তি ছিল, আইআইএসইআর অধ্যক্ষ পদে থাকার সময়ে তিনি যা বেতন পেতেন এখনও তা পান। যা সরকারি নীতি মেনেই স্থির করা হয়েছিল। একই সঙ্গে অভিযোগ ওঠে, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মের বাইরে গিয়ে কন্ট্রোলার অব এগজামিনেশন-সহ বহু নতুন পদ সৃষ্টি করেন সুশান্তবাবু। যার বিরোধিতা করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনও।
এর আগে তিন জন উপাচার্য তাঁদের পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই পদ ছেড়ে দেন। তাঁরা হলেন কালীদাস ভট্টাচার্য, সব্যসাচী ভট্টাচার্য আর অশীন দাশগুপ্ত। তাঁরা সকলেই ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেছিলেন। তাঁদের নিয়ে বিতর্ক ওঠেনি। এ ক্ষেত্রে যদি শোকজের উত্তরে সন্তুষ্ট না হয়ে রাষ্ট্রপতির সম্মতিক্রমে মন্ত্রক উপাচার্যকে অপসারণ করে, তাহলে তা-ও হবে বিশ্বভারতীর ইতিহাসে প্রথম।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy