Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
কলকাতা ও হলদিয়া বন্দর

কেন্দ্রের নির্দেশে একচেটিয়া বরাতের দিন ফুরোচ্ছে

মোদী সরকারের চাপে অবশেষে পথে আসতে বাধ্য হলেন বন্দর কর্তৃপক্ষ। কলকাতা ও হলদিয়া বন্দরে পণ্য খালাসে এত দিন দু’একটি সংস্থাকে একচেটিয়া বরাত দেওয়ার প্রক্রিয়া বন্ধ করে প্রতিযোগিতার পথ নিতে বাধ্য হচ্ছে পোর্ট ট্রাস্ট। এই কাজে কোনও কোনও সংস্থার একচেটিয়া কারবার ও অনিয়মের অভিযোগ পেয়ে গত ১৭ জুন ১১ দফা প্রশ্ন পাঠিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জবাবদিহি চেয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৪ ০৪:০৭
Share: Save:

মোদী সরকারের চাপে অবশেষে পথে আসতে বাধ্য হলেন বন্দর কর্তৃপক্ষ। কলকাতা ও হলদিয়া বন্দরে পণ্য খালাসে এত দিন দু’একটি সংস্থাকে একচেটিয়া বরাত দেওয়ার প্রক্রিয়া বন্ধ করে প্রতিযোগিতার পথ নিতে বাধ্য হচ্ছে পোর্ট ট্রাস্ট।

এই কাজে কোনও কোনও সংস্থার একচেটিয়া কারবার ও অনিয়মের অভিযোগ পেয়ে গত ১৭ জুন ১১ দফা প্রশ্ন পাঠিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জবাবদিহি চেয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পরের দিনই বন্দর চেয়ারম্যানের জবাব প্রধানমন্ত্রীর দফতরে পৌঁছয়। তার ঠিক ২১ দিনের মাথায় গত ৮ জুলাই জাহাজ মন্ত্রক বন্দর কর্তৃপক্ষকে স্পষ্ট নির্দেশে দিয়েছে এ বার থেকে হলদিয়া ও কলকাতা বন্দরে পণ্য খালাসের বরাত দিতে হবে দরপত্র চেয়ে অথবা নিলা ডেকে।

কেবল নির্দেশ দিয়েই থেমে থাকেনি মন্ত্রক। ওই নির্দেশ অনুযায়ী কাজ শুরু করে ২২ জুলাইয়ের মধ্যে বন্দর কর্তৃপক্ষকে রিপোর্ট পাঠাতে বলেছেন জাহাজমন্ত্রী নিতিন গডকড়ী। মন্ত্রকের সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে আগামী ১৮ জুলাই অছি পরিষদের বৈঠক ডেকেছেন বন্দর চেয়ারম্যান রাজপাল সিংহ কাহাঁলো। বন্দর সূত্রের খবর, পণ্য খালাসে দরপত্র চাওয়া অথবা নিলাম পদ্ধতি চালু করার প্রস্তাব ওই দিনই পাশ হতে পারে। বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, “মন্ত্রকের নির্দেশ অনুসারে অছি পরিষদের বৈঠকে প্রস্তাব পেশ করা হবে। তার পর কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে, দিল্লিকে তা জানিয়ে দেওয়া হবে।”

বন্দর সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই হলদিয়া ও কলকাতা বন্দরের ছ’জন অছিকে সরিয়ে দিয়েছেন জাহাজমন্ত্রী। অপসারিত অছিদের সকলেই পণ্য খালাসে একচেটিয়া কারবারে যুক্ত থাকা সংস্থাগুলির ঘনিষ্ঠ ছিলেন বলে অভিযোগ জমা পড়েছিল মন্ত্রীর কাছে। ফলে নিলাম ডেকে বরাত দেওয়ার প্রস্তাব সর্বসম্মত ভাবে পাশ হবে বলেই মনে করা হচ্ছে।

বন্দর কর্তাদের একাংশ মনে করেন, নয়া ব্যবস্থা কার্যকর হলে পণ্য খালাসে একচেটিয়া কারবারের অবসান ঘটবে। কলকাতা ও হলদিয়া বন্দরে প্রতিযোগিতা শুরু হলে পণ্য খালাসের ফি অনেকটাই কমবে। তার ফলে রুগ্ণ বন্দরে বেশি করে জাহাজ ভেড়ার সম্ভাবনা থাকবে। আবার এখন একচেটিয়া কারবার চালানো সংস্থাগুলির দাবি, নিলামে বরাত দেওয়া হলে পণ্য ওঠানো-নামানোর খরচ বাড়বে। আরও কম জাহাজ ভিড়বে দুই বন্দরে। বতর্মান কারবারিদের আরও যুক্তি, বন্দর দু’টির রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক মারপ্যাঁচ সম্পর্কে তারাই ওয়াকিবহাল। সহজে সমস্যা সামাল দিতে পারে তারা। নতুন কেউ পণ্য খালাসে এলে পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হবে। ফলে শ্রমিক সমস্যাও বাড়তে পারে। ঘন ঘন কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও থাকে। এর আগে নিলামে পণ্য সরবরাহের বরাত পেয়েও হলদিয়া বন্দর ছাড়তে বাধ্য হয় এবিজি সংস্থা। একচেটিয়া কারবার চালানো সংস্থাগুলি গুন্ডা লাগিয়ে তাদের অফিসারদের বন্দরছাড়া করেছে বলে অভিযোগ করে সংস্থাটি।

তবে বন্দর কর্তাদের সিংহভাগ কিন্তু মন্ত্রকের নতুন ব্যবস্থায় আশার আলো দেখছেন। তাঁদের মতে, দরপত্র চেয়ে বা নিলামের মাধ্যমে সংস্থা বাছলে শুধু পণ্য খালাসের খরচই কমবে না, রয়্যালটি বাবদ মোটা টাকা রোজগার হবে বন্দরের। এখন একটি পয়সাও রয়্যালটি জোটে না বন্দরের।

প্রধানমন্ত্রীর কাছে অভিযোগে বলা হয়েছে, কলকাতা ও হলদিয়া বন্দরে স্বচ্ছ ভাবে পণ্য খালাসকারী সংস্থা নির্বাচন হয় না। প্রতিযোগিতা তৈরি করতে না পারায় পুরো কারবার নিয়ন্ত্রণ করে দু’একটি সংস্থা। এই সংস্থাগুলি যেমন যৎসামান্য টাকা জমা দিয়ে বার্ষিক লাইসেন্স জোগাড় করে, তারাই আবার নিয়মকানুনের তোয়াক্কা না করে বন্দরের নির্দিষ্ট করে দেওয়া দরের চেয়ে অনেক বেশি টাকা ফি নিয়ে পণ্য খালাস করছে।

বন্দরের এক কর্তা জানান, নয়া ব্যবস্থায় দর নিয়ন্ত্রক সংস্থার মাধ্যমে হলদিয়া ও কলকাতা বন্দরের পণ্য ওঠানো-নামানোর সর্বোচ্চ দর নির্ধারণ করা হবে। তার পরে দরপত্র চেয়ে বা নিলাম করে বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে জানতে চাওয়া হবে, নিয়ন্ত্রক সংস্থার বেঁধে দেওয়া দর মেনে চলার পাশাপাশি কারা বন্দরকে কত রয়্যালটি দেবে। যে সংস্থা সব চেয়ে বেশি রয়্যালটি দেবে, তাদেরই পণ্য খালাসের লাইসেন্স দেওয়া হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE