রাজ্য সরকারের প্রস্তাবিত তাজপুর বন্দর নির্মাণে অংশীদার হতে চায় কেন্দ্রীয় সরকার। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার এতে রাজি না হলে সাগরে ‘ভোরসাগর’ বন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা থেকে কেন্দ্র নিজেদের সরিয়ে নিতে পারে। মঙ্গলবার কলকাতায় মার্চেন্ট চেম্বার অব কমার্সে এক আলোচনায় এ কথা জানান কলকাতা বন্দরের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এম টি কৃষ্ণবাবু।
কেন তিনি এ কথা বলছেন, তার ব্যাখ্যাও দেন কৃষ্ণবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘সাগর বন্দরের আলাদা করে কোনও ভবিষ্যৎ নেই। এই বন্দর লাভজনক হবে না। কেন্দ্র-রাজ্য যৌথ ভাবে তাজপুর বন্দর তৈরি করলেই সাগর বন্দরের ভবিষ্যৎ তৈরি হতে পারে।’’
এ বিষয়ে নবান্নের এক কর্তার বক্তব্য, রাজ্য সরকার যে তাজপুরে বন্দর নির্মাণ করবে, সেই সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। সমুদ্রের ১৭ কিলোমিটার গভীরে নির্মিত এই প্রস্তাবিত বন্দরে ১৫ থেকে ১৮ মিটার নাব্যতা রয়েছে। ফলে বড় জাহাজ অনায়াসে নোঙর করতে পারবে। দরপত্রের মাধ্যমে এই বন্দর নির্মাণের ভার কোনও বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া হবে। এর সঙ্গে সাগর বন্দরের যোগসূত্র নেই।
প্রশ্ন উঠেছে, পৃথক বন্দর হিসেবে সাগর কেন লাভজনক হবে না? কলকাতা বন্দরের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বক্তব্য, সাগর বন্দরের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হল, দীর্ঘ পথে রেল-রাস্তা যোগাযোগের পরিকাঠামো তৈরি করা। যেমন, জোকা থেকে কাকদ্বীপ পর্যন্ত জাতীয় সড়কের চার লেনে সম্প্রসারণ দরকার। এর জন্য এশীয় উন্নয়ন ব্যাঙ্ক থেকে ৪০০০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার কথা কেন্দ্রীয় সরকারের। আবার, ডানকুনি থেকে কাশীনগর, কাশীনগর থেকে কাকদ্বীপ এবং কাকদ্বীপ থেকে বন্দর পর্যন্ত রেল যোগাযোগ গড়তে লাগবে আরও ৬০০০ কোটি টাকা। তার পর মুড়িগঙ্গা নদীর উপর রেল-কাম-রোড সেতু তৈরিতে খরচ পড়বে আরও অন্তত ২৫০০ কোটি টাকা। এই বিপুল অঙ্কের টাকা খরচ করে পরিকাঠামো তৈরির পরেও রয়েছে সাগরে বন্দর নির্মাণের খরচ।
তার পরেও কেন প্রস্তাবিত সাগর বন্দর লাভজনক হওয়া নিয়ে ঘোরতর সংশয় রয়েছে, তা ব্যাখ্যা করে কৃষ্ণবাবু জানান, এখানে নদীর মূল নাব্যতা রয়েছে ৯ মিটার। ড্রেজিং করলে তা আরও দেড়-দু’মিটার বাড়তে পারে। ড্রেজিং করার আবার বাড়তি খরচ রয়েছে। এর পরেও যে পণ্য সাগরে খালাস হবে, তা কলকাতা ও হাওড়ার মতো দুই জনবহুল শহরের সড়কপথের যানজট পেরিয়ে দেশের অন্য প্রান্তে পরিবহণ করতে হবে, যা এক রকম অসম্ভব। ‘‘তাই সাগর আর তাজপুর একসঙ্গে নির্মাণ করতে পারলে তবেই লাভ, না হলে সাগরের ভবিষ্যৎ নেই’’— মন্তব্য কৃষ্ণবাবুর।
ভারপ্রাপ্ত বন্দর-চেয়ারম্যানের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্যের ওই কর্তা বলেন, ‘‘সাগর বন্দর ঘোষণা করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। যখন তা ঘোষিত হয়, তখন রসুলপুরে বন্দর নির্মাণের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছিল রাজ্য। এখন তাজপুরের কথা জেনে কেন্দ্র পিছিয়ে যাচ্ছে কেন?’’
এরও ব্যাখ্যা দিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত বন্দর-চেয়ারম্যান। তিনি জানান, ভোরসাগর বন্দরের ৭৬ ভাগ অংশীদারিত্ব কেন্দ্রের, ২৪ ভাগ রাজ্যের। এই বন্দর নির্মাণে কেন্দ্র আগ্রহী বলেই পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট বোর্ড ৫১৫ কোটি টাকা অনুদান ঘোষণা করেছে। এ ছাড়া, রাজ্যের থেকে ১১ একর জমিও কেনা হয়েছে সাড়ে ৫ কোটি টাকায়। তাঁরা চান, তাজপুরের ক্ষেত্রেও রাজ্য এই মডেল অনুসরণ করুক।
তাতে সুবিধে কী হবে?
কৃষ্ণবাবু জানান, সে ক্ষেত্রে সাগর আর তাজপুরের মধ্যে পণ্য খালাস ভাগাভাগি করে নেওয়া যাবে। যে পণ্য কলকাতায় আসবে, সেগুলি সাগরে নামানো যেতে পারে। আর যে পণ্য দেশের অন্যত্র যাবে, তা খালাস হতে পারে তাজপুরে। এতে দুই বন্দরই লাভে চলবে। তাঁর আশঙ্কা, কোনও বেসরকারি হাতে তাজপুর চলে গেলে সেই সংস্থা শুধু নিজেদের লাভের কথাই ভাববে। এতে মার খাবে সরকারি উদ্যোগের সাগর বন্দর। এই কারণেই তাজপুর ছাড়া সাগর বন্দর নির্মাণের যৌক্তিকতা থাকবে না বলে মনে করেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy