Advertisement
E-Paper

বাহিনী দিচ্ছে না কেন্দ্র, অস্বস্তিতে বিজেপি

কেন্দ্রীয় বাহিনী ছাড়া রাজ্যে অবাধ ও সুষ্ঠু ভোট করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছিল রাজ্য নির্বাচন কমিশন। রাজ্যকে চিঠি দিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়ে দিয়েছে, পুরভোটের জন্য পশ্চিমবঙ্গে আধা-সামরিক বাহিনী পাঠানো যাবে না। কেন বাহিনী দেওয়া যাবে না, তার ব্যাখ্যাও দিয়েছে দিল্লি। কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তে স্বভাবতই অস্বস্তিতে পড়েছে বিজেপি। কয়েক দিন আগে পর্যন্তও বিজেপি নেতৃত্ব দাবি করে আসছিলেন, পুরভোটের জন্য যত কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রয়োজন, তার সবটাই দিতে প্রস্তুত মোদী সরকার।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:৩৯

কেন্দ্রীয় বাহিনী ছাড়া রাজ্যে অবাধ ও সুষ্ঠু ভোট করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছিল রাজ্য নির্বাচন কমিশন। রাজ্যকে চিঠি দিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়ে দিয়েছে, পুরভোটের জন্য পশ্চিমবঙ্গে আধা-সামরিক বাহিনী পাঠানো যাবে না। কেন বাহিনী দেওয়া যাবে না, তার ব্যাখ্যাও দিয়েছে দিল্লি।

কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তে স্বভাবতই অস্বস্তিতে পড়েছে বিজেপি। কয়েক দিন আগে পর্যন্তও বিজেপি নেতৃত্ব দাবি করে আসছিলেন, পুরভোটের জন্য যত কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রয়োজন, তার সবটাই দিতে প্রস্তুত মোদী সরকার। এখন কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবি নাকচ করে দেওয়ায় এক দিকে প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি এ রাজ্যের বিজেপি নেতাদের যুক্তিতে আশ্বস্ত হল না কেন্দ্রীয় সরকার? তেমনই সিপিএম এবং কংগ্রেস অভিযোগ করার সুযোগ পেয়ে গিয়েছে যে, আসলে কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রশ্নে দিল্লির বিজেপি এবং রাজ্যের তৃণমূল সরকারের মধ্যে বোঝাপড়া হয়েছে!

অস্বস্তির মুখে পড়েই বুধবার বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে এ রাজ্যের পর্যবেক্ষক সিদ্ধার্থনাথ সিংহ বলেছেন, ‘‘কলকাতায় সব বুথই সংবেদনশীল। তাই সব বুথেই কেন্দ্রীয় বাহিনী দরকার ছিল। কিন্তু মমতা সরকার আধা-সামরিক বাহিনী চেয়ে দিল্লিতে অনেক দেরিতে আবেদন করেছে। এত কম সময়ের মধ্যে বিভিন্ন রাজ্যের বাহিনীকে একত্রিত করে তাদের পশ্চিমবঙ্গে পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘এটা মমতার ‘আই ওয়াশ’। এক দিকে তিনি দেখাতে চাইলেন কেন্দ্রীয় বাহিনী আনার প্রশ্নে তাঁর কোনও ছুৎমার্গ নেই। আবার এত দেরি করে চাইলেন, যাতে তারা না আসতে পারে!’’ পুরভোটের আগে বাইরে থেকে উত্তর ২৪ পরগনার সীমান্তবর্তী এলাকায় দাগী অপরাধীদের ভিড় বাড়ছে এবং শাসক দল বিরোধীদের ক্রমাগত হেনস্থা করছে বলে এ দিনই জেলার পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ করেছেন রাজ্যে বিজেপি-র একমাত্র বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্য। অথচ এই পরিস্থিতিতেই কেন্দ্রীয় বাহিনী না পাঠানোর সিদ্ধান্ত তাঁদের বিড়ম্বনাই বাড়িয়েছে। শমীক অবশ্য রাজ্য সরকারকেই দায়ী করে দাবি তুলেছেন, ‘‘এই অবস্থায় হয় পুরভোট পিছিয়ে দেওয়া উচিত। অথবা নিরাপত্তার স্বার্থে কয়েক দফায় ভোট করা উচিত।’’

সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সুজন চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘‘রাজ্য সরকার কখনওই কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট করাতে চায়নি। তারা এমন ভাবে এবং এমন সময়ে চিঠি পাঠিয়েছিল যাতে বাহিনী আসলে না আসে। ঠিক যেমন রানাঘাট-কাণ্ডে সিবিআই তদন্ত তারা এমন ভাবেই চেয়েছিল, যাতে সেটা আর না হয়!’’ বিজেপি-র প্রতি তাঁর কটাক্ষ, ‘‘দু’হাতে লাড্ডুর কথা এ রাজ্যের মানুষ আগে শুনেছিলেন। এখন ব্যাপারটা তাঁরা আস্তে আস্তে বুঝতে পারছেন!’’ কংগ্রেস নেতা মানস ভুঁইয়ারও প্রশ্ন, ‘‘কাশ্মীর ছাড়া দেশের অন্য কোথাও এখন এমন কী পরিস্থিতি আছে যে, কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠানো যাবে না? রাজ্য সরকারের বাহিনী চাওয়া এবং কেন্দ্রের তা খারিজ করা, গোটাটাই লুকোচুরি খেলা বলে মনে হচ্ছে!’’

রাজ্য নির্বাচন কমিশন রাজ্য সরকারকে জানিয়েছিল, সুষ্ঠু পুরভোট করতে ১৫০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী দরকার। রাজ্য অবশ্য কেন্দ্রের কাছে চিঠিতে কত বাহিনী দরকার, সে ব্যাপারে কিছু উল্লেখ করেনি। এখন কেন্দ্রীয় বাহিনী পাওয়া যাবে না, এটা বুঝে নিয়েই এ দিন রাজ্য পুলিশের সশস্ত্র বাহিনী দিয়ে ভোট করার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে কমিশন ও নবান্ন। তবে রাজ্য জুড়ে আইনশৃঙ্খলার যা পরিস্থিতি, তাতে কিছু কিছু ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় বাহিনী ছাড়া অবাধ নির্বাচন করা সম্ভব নয় বলে এখনও মনে করেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার সুশান্তরঞ্জন উপাধ্যায়। তিনি এ দিন বলেন, ‘‘কিছু স্পর্শকাতর বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকা উচিত। তাতে মানুষের মনে আস্থা তৈরি হতো।’’ কেন্দ্রের চিঠির প্রেক্ষিতে কমিশনার ঠিক করেছেন, এই মূহুর্তে রাজ্যে মোতায়েন কেন্দ্রীয় বাহিনীকেই ভোটের কাজে লাগানো যায় কি না, তা নিয়ে তিনি নবান্নের শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন। তবে এটা আদৌ সম্ভব কি না, তা নিয়ে নিজেই সংশয় প্রকাশ করেন সুশান্তবাবু। যদিও কমিশনের এই ভাবনা খারিজ করে দিয়েছেন নবান্নের কর্তারা। স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘মাওবাদী-অধ্যুষিত এলাকা থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনী সরালে কোনও অশান্তি হবে না বলে কমিশন যদি দায়িত্ব নেয়, তা হলেই আমরা
সরাতে পারি। তা ছাড়া কোনও ভাবেই সম্ভব নয়।’’

কলকাতা-সহ রাজ্যের ৯২টি পুরসভার ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রয়োজন নেই বলে প্রথম থেকেই দাবি জানিয়ে আসছিল রাজ্য সরকার। তাদের যুক্তি ছিল, রাজ্যের হাতে যে সশস্ত্র পুলিশ রয়েছে, তা দিয়ে অনায়াসে পুর ভোট করা যাবে। কমিশন অবশ্য বলেছিল, ভোটারদের মনে আস্থা জাগাতে কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রয়োজন। কমিশনের ওই বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়েছিল রাজ্যের সব বিরোধী দলই। একমাত্র শাসক তৃণমূলই ছিল সরকারি মতের পক্ষে। কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্ত জানার পরে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, ‘‘আসল কথা বিরোধীরা খড়কুটোর মতো যে কোনও বিষয়কে ধরেই মানুষের সামনে ভেসে থাকতে চান! এঁরা কখনও আদালতের সাহায্য চান, কখনওবা কেন্দ্রীয় বাহিনীর। কিন্তু এঁরা কখনও জনবাহিনীকে চান না।’’

নবান্ন সূত্রের খবর, মঙ্গলবার রাজ্যের কাছে আসা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের চিঠিতে বলা হয়েছে, এই মুহূর্তে মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকা, কাশ্মীর-সহ বিভিন্ন এলাকায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন রয়েছে। পরিস্থিতি যা, তাতে ওই সব এলাকা থেকে বাহিনী সরানো যাবে না। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের চিঠি এ দিন রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে পাঠিয়ে দেয় রাজ্য সরকার। নবান্নের এক কর্তার কথায়, ‘‘এ বার কমিশন যা বলবে, সেই মতো আমরা সিদ্ধান্ত নেব।’’

কেন্দ্রীয় বাহিনী না পেয়ে কমিশন কী আদালতে যাবে? কমিশনারের জবাব, ‘‘কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়ে ২৬ মার্চ এবং ২ এপ্রিল দিল্লিতে চিঠি পাঠিয়েছে রাজ্য সরকার। এই অবস্থায় রাজ্য সহযোগিতা করেনি, তা বলা যাবে না। আবার কেন্দ্রের বিরুদ্ধে মামলার এক্তিয়ারই নেই রাজ্য
নির্বাচন কমিশনের। তাই মামলার প্রশ্ন ওঠে না।’’

election commission municipal election Mamata Bandopadhyay Mamata Banerjee trinamool TMC BJP Kolkata delhi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy