ভরা বসন্তে ছোটনাগপুর মালভূমির চরিত্রটাই যেন বদলে গিয়েছে! মার্চের অর্ধেক পার। এ সময় দক্ষিণের এলোমেলো হাওয়া আরামপ্রদ হলেও দুপুর-রোদের কড়া শাসন শরীরে জ্বালা ধরিয়ে দেয়। এ বার সে সব অনুভূতিকে দূরে সরিয়ে দিনের বেশির ভাগ সময় তাপমাত্রা স্বাভাবিকের উপরেই উঠছে না।
ছবিটা অনেকটা একই গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গেও! সোমবারই ক্যালেন্ডারে চৈত্র শুরু হয়েছে। হাওয়া অফিস বলছে, কয়েক দিনে বেলায় পারদ চড়লেও গভীর রাতে ফিরেছে শীত-শীত ভাব, সঙ্গে দক্ষিণী হাওয়া।
আবহবিদেরা বলছেন, প্রকৃতির নিয়মে মার্চের গরমই কালবৈশাখীর ভিত গড়ে। কিন্তু তার উৎস যে পাথুরে মালভূমি এলাকায়, সেখানে তেমন গরম না পড়ায় বৈকালিক ঝড়ের পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে না। দক্ষিণবঙ্গে আবহাওয়ার এই খামখেয়ালিপনায় প্রভাব পড়ছে জনস্বাস্থ্যেও। বিজ্ঞানীরা বলছেন, মার্চের মাঝামাঝি পেরিয়েও তাপমাত্রা সে ভাবে বাড়তে না থাকায় দাপট বাড়ছে রোগজীবাণুরও। ঘরে-ঘরে সর্দিজ্বর, কাশির মতো রোগের প্রকোপ নজরে আসছে।
আবহবিদেরা বলছেন, ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকেই রাঢ়বঙ্গ এবং বিহার, ঝাড়খণ্ড ও ওড়িশার সংলগ্ন এলাকার মাটি গরম হতে শুরু করার কথা। মার্চের মাঝামাঝি পাথুরে মাটি এতটাই গরম হয় যে বাতাসও গরম হয়ে উপরের দিকে ঠেলা মারতে শুরু করে। পরিণতিতে মাটির কাছাকাছি তৈরি হয় নিম্নচাপ, যা কি না বঙ্গোপসাগর থেকে জলীয় বাষ্প এনে তৈরি করে মেঘ। সেই মেঘ বায়ুমণ্ডলের উপরের দিকে উঠে ঠান্ডা বাতাসের সংস্পর্শে এলেই ঘনীভূত হয়ে তৈরি হয় বজ্রগর্ভ মেঘপুঞ্জ। মেঘপুঞ্জ আসে দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলির দিকে। মেঘপুঞ্জ ভেঙে নামে কালবৈশাখীর ঝড়বৃষ্টি।
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের একটি সূত্র বলছে, মার্চে দু’টো কালবৈশাখী হওয়াটাই দস্তুর। কিন্তু তিন বছর মার্চে কালবৈশাখী মেলেনি। আবহবিদদের একাংশ বলছেন, উত্তর ভারতে শীতের বিদায় পিছিয়ে যাওয়াতেই মার্চের কপালে কালবৈশাখী জুটছে না। মৌসম ভবনের বিজ্ঞানীদের একাংশের মতে, ছোটনাগপুর মালভূমির গরমের সঙ্গে উত্তর ও মধ্য ভারতের আবহাওয়াটা জুড়ে থাকে। ওই এলাকাগুলি তপ্ত না হলে বিহার-ঝাড়খণ্ডের তাপমাত্রাও বাড়তে পারে না।
এ রাজ্যের পরিস্থিতি কী? আলিপুর দফতরের আবহবিদেরা রেডার চিত্রে বিহার-ঝাড়খণ্ডে বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরির চিহ্ন পাননি। মেলেনি কালবৈশাখীর সঙ্কেতও। এ বারও কি মার্চ কালবৈশাখীহীনই থাকবে? তেমন ইঙ্গিতই আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথের। তিনি বলেন, “কালবৈশাখী হওয়ার সম্ভাবনাই আপাতত নেই।” এই অবস্থাটা কয়েক দিন চলবে বলেই ধরে নিচ্ছেন হাওয়া অফিসের কর্তারা।