E-Paper

গোলমালে উত্তেজনা শিবপুরে, ভোগান্তি সেই আমজনতারই

বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রায় তিন ঘণ্টা এবং এ দিন প্রায় আড়াই ঘণ্টা জিটি রোড পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওযায় নাজেহাল হতে হয় বহু মানুষকে। গোলমাল ঠেকাতে শিবপুর থানার জিটি রোড চত্বরে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০২৩ ০৬:৩১
police.

দুষ্কৃতী তাণ্ডবের পরে শিবপুরের জিটি রোডে ১৪৪ ধারা। টহল বাহিনীর। শুক্রবার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

ঘটনার সূত্রপাত বৃহস্পতিবার। শুক্রবার দুপুরে তা ঘিরে ফের উত্তেজনা ছড়াল হাওড়ার শিবপুরের জিটি রোডে। অভিযোগ, এ দিন পুলিশ ও কয়েকটি বহুতল আবাসনকে নিশানা করে দফায় দফায় ইট-পাটকেল ছোড়া হয়। ভাঙচুর করা হয় কয়েকটি দোকানও। বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রায় তিন ঘণ্টা এবং এ দিন প্রায় আড়াই ঘণ্টা জিটি রোড পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওযায় নাজেহাল হতে হয় বহু মানুষকে। ফের গোলমাল ঠেকাতে শিবপুর থানার জিটি রোড চত্বরে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। সূত্রের খবর, ঘটনার তদন্তভার দেওয়া হয়েছে সিআইডি-কে। আইজি পদমর্যাদার এক অফিসারের নেতৃত্বে তা হওয়ার সম্ভাবনা। যদিও এ দিন গভীর রাত পর্যন্ত সরকারি ভাবে এ কথা জানানো হয়নি।

পরিস্থিতি সামাল দিতে এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সিদ্ধিনাথ গুপ্ত, আইজি (এসটিএফ) নিশাত পারভেজ এবং ডিআইজি (মুর্শিদাবাদ রেঞ্জ) রশিদ মুনির খান এবং হাওড়ার পুলিশ কমিশনার প্রবীণকুমার ত্রিপাঠী ঘটনাস্থলে পৌঁছন। বিকাল চারটের পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

প্রশাসনিক সূত্রের খবর, রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। স্বাভাবিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিশ্চিত করতে এবং দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের বার্তা সরকারকে দিয়েছে রাজভবন। মুখ্যমন্ত্রীও গোলমাল ঠেকাতে কড়া পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছেন রাজ্যপালকে। এ দিনই বিকেলে রাজভবনে গিয়ে পরিস্থিতি এবং সরকারি পদক্ষেপ সম্পর্কে রাজ্যপালকে অবহিত করেন স্বরাষ্ট্রসচিব ভগবতীপ্রসাদ গোপালিকা। নবান্ন থেকে মুখ্যসচিব হরি কৃষ্ণ দ্বিবেদী বিকেলে বলেন, “পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে। গাড়ি চলাচল করছে, রাস্তা খুলে গিয়েছে। চিন্তার কোনও কারণ নেই।”

এ দিন সন্ধ্যায় রাজভবন থেকে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘মানুষের সম্পত্তিতে আগুন লাগানো উস্কানিমূলক কাজের পরিচয়। মানবিকতার বিরুদ্ধে থাকা এই অপরাধীদের বিরুদ্ধে বাংলা একজোট হয়ে দাঁড়িয়েছে। সংঘর্ষ পাকানো এবং প্ররোচনাকারীদের তা বোঝানো হবে।’ এ দিন মুখ্যমন্ত্রীও বলেছেন, “মাথা কারা? সেই মাথাদের ধরতে হবে, তারা যে ধর্মেরই হোক। পুলিশের ব্যর্থতা রয়েছে। পদক্ষেপ করা হবে।”

এ দিন সকাল থেকেই শিবপুর থানা এলাকায় জিটি রোডের পরিস্থিতি ছিল থমথমে। অধিকাংশ দোকানপাট ছিল বন্ধ। যানবাহন চলাচল করলেও, রাস্তায় লোকসংখ্যা কমই ছিল। সকাল থেকেই হাওড়া শহর পুলিশের পদস্থ কর্তারা বিশাল বাহিনী, কম্ব্যাট ফোর্স নিয়ে রাস্তায় নামেন। পরে গোলমালের সূত্রপাত হয় জিটি রোডের ফজির বাজার এলাকা থেকে। তা ছড়িয়ে পড়ে পিএম বস্তি এলাকায়। ইট ছোড়ার অভিযোগ তুলে উত্তেজিত কয়েকশো মানুষ পুলিশ ও কয়েকটি আবাসনকে লক্ষ্য করে পাল্টা ইট-পাথর ছোড়া শুরু করেন। ভাঙচুর করা হয় কয়েকটি দোকান। আক্রমণকারীরা শিবপুর থানার দিকে এগোনোর চেষ্টা করলে থানার সামনে ব্যারিকেড তৈরি করে পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়।

তবে প্রায় দেড় ঘণ্টা পরেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় বিশাল পুলিশ বাহিনী, র‌্যাফ ও কম্যান্ডো নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন কলকাতা ও রাজ্য পুলিশের পদস্থ কর্তারা। পৌঁছে যান হাওড়া জেলা পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) স্বাতী ভাঙ্গালিয়াও। বিকেল চারটে নাগাদ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। যান চলাচল স্বাভাবিক করা হয়। এলাকায় উত্তেজনা থাকায় রাতে বিভিন্ন জায়গায় পুলিশি প্রহরার ব্যবস্থা হয়েছে।

গত বছরেও গোলমাল হওয়া এই জায়গায় মিছিল করার অনুমতি পুলিশ দিল কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তবে পুলিশের দাবি, অনুমতি সরকারি ভাবে দেওয়া হয়নি। শর্ত দেওয়া হয়েছিল, মিছিল দুপুরের মধ্যে করতে হবে এবং সেখানে মোটরাইক, অস্ত্র, ডিজে ব্যবহার করা যাবে না। হাওড়া শহর পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘মিছিলকারীরা পুলিশের চিঠির উত্তর দেননি। তাই বলা যায়, তাঁরা মিছিল করার অনুমতি পাননি।’’ কিন্তু তার পরেও মিছিল হল কী ভাবে? ওই কর্তা বলেন, ‘‘কাজিপাড়া থেকে হাওড়া ময়দানযাওয়ার একটাই পথ। সেখান দিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই মিছিল হয়। তাই ওই পথে ধর্মীয় বা রাজনৈতিক মিছিলে সাধারণত আপত্তি করা হয় না।’’ পুলিশের দাবি, ফজির বাজার এলাকায় প্রচুর পুলিশ ছিল। কিন্তু সেখানে তখন লোক বেশি থাকায় প্রথম দিকে তা সামলানো যায়নি বলে তাদের দাবি। এর মধ্যে হাওড়া ও ডালখোলার ঘটনার পরে গুজব ছড়ানো এবং তা থেকে গোলমাল এড়াতে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Howrah Clash Chaos

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy