একটি বেসরকারি হোমের শিশু দত্তক দেওয়ার উপযুক্ততা বা যোগ্যতা নেই বলে অভিযোগ তুলেই তাদের দত্তক দেওয়া আটটি শিশু ফেরত চেয়েছিল শিশু কল্যাণ সমিতি। কিন্তু কীসের ভিত্তিতে তাঁরা প্রথমে ওই হোমকে দত্তক দেওয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন, সেই প্রশ্নের যোগ্য জবাব দিতে পারলেন না সমিতির কর্মকর্তারা।
এই অবস্থায় বেসরকারি হোম থেকে দত্তক দেওয়া আটটি শিশুকে তাদের বর্তমান অভিভাবকদের কাছে রেখে দিতে শিশু কল্যাণ সমিতির আপত্তি নেই বলে সংস্থার আইনজীবী আদালতে জানিয়ে দিলেন। অর্থাৎ আপাতত ঠাঁই নাড়া হওয়ার ঝক্কি থেকে রক্ষা পাচ্ছে আট শিশুই।
সোমবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের আদালতে সমিতির আইনজীবী এবং রাজ্যের জিপি (গভর্নমেন্ট প্লিডার) জানান, আইনকানুন মেনে কী ভাবে ওই শিশুগুলিকে দত্তক দেওয়ার যথাযথ পদ্ধতি নির্ধারণ করা যায়, এক সপ্তাহের মধ্যে তাঁরা তা জানাবেন।
ছেলেমেয়ে দত্তক দেওয়ার ক্ষেত্রে কলকাতার বেসরকারি একটি হোমের সঙ্গে রাজ্যের শিশু কল্যাণ সমিতির অসাধু যোগাযোগের অভিযোগ নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে বলে গত ১৬ জুলাই হাইকোর্টে জানিয়েছিলেন সরকারি আইনজীবী। এ দিন সেই অভিযোগের তদন্ত নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে আদালতে একটি কথাও বলা হয়নি।
চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের বেসরকারি হোম কয়েক মাস আগে ওই আটটি শিশুকে আটটি পরিবারের কাছে দত্তক দেয়। হোম-কর্তৃপক্ষের দাবি, নিয়মবিধি মেনে শিশু কল্যাণ সমিতির অনুমতি নিয়েই তাঁরা শিশুগুলিকে দত্তক হিসেবে আটটি পরিবারের হাতে তুলে দিয়েছেন। কিন্তু ওই হোমের দত্তক দেওয়ার যোগ্যতাই নেই, এই অভিযোগ তুলে শিশু কল্যাণ সমিতি গত সপ্তাহে হোমের কাছ থেকে শিশুগুলিকে ফেরত চায়। তার পরেই হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন হোম-কর্তৃপক্ষ। গত ১৬ জুলাই বিচারপতি দত্ত নির্দেশ দেন, মামলার নিষ্পত্তি না-হওয়া পর্যন্ত শিশুগুলি এখনকার অভিভাবকদের কাছেই থাকবে।
অনুমতি দিয়েও সমিতি কেন ফের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে শিশুদের ফেরত চাইছে, সেই প্রশ্ন ওঠে। শুরু হয় নানান জল্পনা। হোমের সঙ্গে সমিতির একাংশের অশুভ আঁতাঁতের অভিযোগও ওঠে। এই টানাপড়েনে শিশুগুলি যে আতান্তরে পড়েছে, তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করে বিভিন্ন শিবির। পুরো বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে বলে জানান সরকারি কৌঁসুলি।
এ দিন সেই মামলার শুনানি ছিল। বিচারপতি দত্ত জিপি-র কাছে বারবার জানতে চান, ওই হোমের যদি দত্তক দেওয়ার যোগ্যতা না-ই থেকে থাকে, তা হলে শিশু কল্যাণ সমিতি হোমটিকে প্রথমে অনুমতি দিয়েছিল কীসের ভিত্তিতে? জিপি-র আইনি ব্যাখ্যায় বিচারপতি দত্ত সন্তুষ্ট হতে পারেননি। শিশু কল্যাণ সমিতির আইনজীবী তখন আদালতে জানান, ওই আটটি শিশুকে তাদের বর্তমান অভিভাবকদের কাছেই রেখে দিতে তাঁদের আপত্তি নেই। ২৮ জুলাই এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে।
কিশোরী নিয়ে টানাপড়েন
শিশু কল্যাণ সমিতির নির্দেশ সত্ত্বেও নিজেদের আশ্রয়ে থাকা কিশোরীকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে হোমে পাঠাল না সল্টলেকের সি-এল ব্লকের একটি আধ্যাত্মিক প্রতিষ্ঠান। পরে সমিতির নির্দেশে পুলিশ ওই প্রতিষ্ঠানে গেল। কিন্তু ফিরে এল খালি হাতে। উত্তর ২৪ পরগনা জেলা শিশু কল্যাণ সমিতি সূত্রের খবর, এক কিশোরীকে জোর করে ওই প্রতিষ্ঠানে আটকে রাখার অভিযোগ এসেছিল। তদন্তের পরেই সমিতি ওই প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ দেয়, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মেয়েটিকে হোমে পাঠাতে হবে। সেই সময় পেরিয়ে গিয়েছে রবিবার বিকেলে। সমিতি তখন মেয়েটিকে ওই প্রতিষ্ঠান থেকে বার করে আনার নির্দেশ দেয় পুলিশকে। পুলিশ গেলে প্রতিষ্ঠান বাধা দেয়। এবং জানায়, তারা কাউকে আটকে রাখে না। মেয়েরা স্বেচ্ছায় ওখানে যায়। পুলিশ খালি হাতে ফেরায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন দত্তাবাদের বাসিন্দারা। তাঁরা দফায় দফায় বিক্ষোভ দেখান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy