Advertisement
E-Paper

মাঠ নেই, বিপাকে শিক্ষার স্বাস্থ্য

দু’পাশে ঘিঞ্জি বসতবাড়ি। স্কুল থেকে বেরিয়েই বড় রাস্তা। আর কিছু দূরেই গঙ্গা। তাই নিরাপত্তার তাগিদে স্কুলের চৌহদ্দি থেকে দূরে যাওয়া বারণ। খেলাধুলোর জন্য এক চিলতে জায়গাও নেই! কখনও কোনও খেলার আয়োজন করলে খুদে পড়ুয়াদের নিয়ে যেতে হয় অন্য থানা এলাকার মাঠে।

সুপ্রিয় তরফদার

শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:৩৬

দু’পাশে ঘিঞ্জি বসতবাড়ি। স্কুল থেকে বেরিয়েই বড় রাস্তা। আর কিছু দূরেই গঙ্গা। তাই নিরাপত্তার তাগিদে স্কুলের চৌহদ্দি থেকে দূরে যাওয়া বারণ। খেলাধুলোর জন্য এক চিলতে জায়গাও নেই! কখনও কোনও খেলার আয়োজন করলে খুদে পড়ুয়াদের নিয়ে যেতে হয় অন্য থানা এলাকার মাঠে। সেটাও ন’মাসে-ছ’মাসে এক বার। প্রায় গোটা বছরই খেলা থেকে বঞ্চিত থাকে পড়ুয়ারা।

অসহায় এই ছবিটা হাওড়ার হাট বাউড়িয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। এবং সর্বশিক্ষা মিশনের রিপোর্ট বলছে, এই অসহায় ছবিটা রাজ্যের অজস্র বিদ্যালয়ের। যেখানে শিক্ষার স্বাস্থ্য রক্ষার আবশ্যিক শর্ত খেলাধুলোর কোনও সুযোগ-সুবিধেই নেই।

আর এখানেই হোঁচট খাচ্ছে শিক্ষাকে শ্রেণিকক্ষের চার দেওয়ালের গণ্ডি ছাপিয়ে মাঠে-ঘাটে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা। মাঠে-ঘাটে নিয়ে যাওয়া মানে সমাজের সর্বস্তরের বাসিন্দার কাছে নিয়ে যাওয়া। প্রকৃতির কাছে নিয়ে যাওয়া। পশুপাখিদের আপন ডেরার কাছে নিয়ে যাওয়া। এবং অবশ্যই আক্ষরিক অর্থে মাঠ অর্থাৎ খেলার মাঠের কাছে নিয়ে যাওয়া। যেটা অধিকাংশ পড়ুয়ার কাছে সব থেকে বড় আকর্ষণ। যেটার অভাব অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীর কাছে সব থেকে বড় হতাশা। খেলার মাঠই যদি না-থাকে, এই বিষয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার মানে কী? প্রশ্ন উঠছে। উত্তর অমিল।

সর্বশিক্ষা মিশনের সম্প্রতি প্রকাশিত রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, রাজ্যের অধিকাংশ স্কুলে খেলার মাঠ নেই। যেখানে খেলার মাঠই নেই, সেখানে শিক্ষাকে মাঠে-ঘাটে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা কী ভাবে রূপায়ণ করা হবে, তা নিয়ে বেজায় ধন্দে পড়ে গিয়েছে স্কুলশিক্ষা দফতরই।

২০১৫-’১৬ বছরে রাজ্যের মোট ৮২,৯৮৫টি সরকারি, সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত, সরকার পোষিত প্রাথমিক, উচ্চ প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে সমীক্ষা চালায় পশ্চিমবঙ্গ সর্বশিক্ষা মিশন। ওই রিপোর্ট বলছে, মাত্র কয়েকটি জেলায় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ স্কুলে খেলার মাঠ আছে। খাস কলকাতায় যত উচ্চ প্রাথমিক স্কুল রয়েছে, তাদের মধ্যে খেলার মাঠ আছে মাত্র ১৪ শতাংশের। জেলার ক্ষেত্রেও হিসেবটা বিশেষ আলাদা নয়। পুরুলিয়ায় মাত্র ১৮.৩০%। হাওড়া জেলায় ২০.৮৩%। এবং মুর্শিদাবাদে ২৮ %।

খেলার মাঠ কেন জরুরি?

বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, খেলাধুলোর অভাব ছাত্রছাত্রীদের শরীরে ও মনে কুপ্রভাব ফেলে। ‘‘স্কুলে পড়ুয়ারা একসঙ্গে মিলে খেলে। এর ফলে মানসিক ভাবে তারা অনেক সুগঠিত হয়। সুসংগঠিত হয়। সমাজের জন্য এটা প্রয়োজন। নইলে ছাত্রছাত্রীদের পূর্ণ বিকাশ হওয়া মুশকিল,’’ বলছেন মনোবিদ জয়রঞ্জন রাম। তাঁর বক্তব্য, মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য শারীরচর্চা যে অপরিহার্য, বিভিন্ন পরীক্ষায় সেটা প্রমাণিত। অধিকাংশ স্কুলে খেলার মাঠ না-থাকায় অপূর্ণ থেকে যাচ্ছে পড়ুয়াদের বিকাশ।

‘‘পড়ুয়াদের সার্বিক বিকাশে খেলাধুলো অবশ্যই প্রয়োজন। নইলে তারা কেউ প্রকৃত সামাজিক হয়ে উঠতে পারবে না,’’ বলছেন বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সহ-সম্পাদক স্বপন মণ্ডল। পাঠ্যক্রমের সঙ্গে সঙ্গে সহ-পাঠ্যক্রমিক কার্যাবলি যে প্রয়োজন, সেই বিষয়ে কারও দ্বিমত নেই। খেলার মাঠ না-থাকলে, শিক্ষার পরিপূরকের ভূমিকায় খেলাধুলো না-থাকলে যে সর্বাঙ্গীণ শিক্ষার উদ্দেশ্য পূরণ হবে না, সেটাও বুঝতে পারছেন সংশ্লিষ্ট সকলে।

প্রতিটি স্কুলের জন্য খেলার মাঠের বন্দোবস্ত কী ভাবে করা যাবে, সেই প্রশ্নটা বড় হয়ে উঠছে বলে স্কুলশিক্ষা দফতরের অন্দরের খবর। সর্বশিক্ষা মিশনের রিপোর্ট প্রকাশের পরে নানা প্রশ্ন উঠছে স্কুলপড়ুয়াদের নিরাপত্তা নিয়েও। নিরাপত্তার তাগিদে স্কুলের সীমানা বরাবর পাঁচিল দেওয়া জরুরি বলে জানিয়েছে শিক্ষা মহল। কিন্তু কলকাতা ছাড়া অন্যান্য জেলায় খুব কম স্কুলেই সীমানা-পাঁচিল আছে। কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ারে পাঁচিল রয়েছে মাত্র ১৬-২০ শতাংশ স্কুলে।

অন্যান্য স্কুলে পাঁচিলের কী হবে?

স্কুলশিক্ষা দফতরের সূত্র জানাচ্ছে, মধ্যশিক্ষা পর্ষদ এবং উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ এই বিষয়ে স্কুলে স্কুলে প্রচার চালায়। ‘‘আগের থেকে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে,’’ দাবি উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের এক কর্তার।

Children School Play Ground
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy