Advertisement
১৬ মে ২০২৪

বাড়ি ফিরতেই পুলিশি কব্জায় লগ্নি-মালকিন

যাদবপুরের একটি বাড়ির সামনে এসে থামল দু’টি এসইউভি গাড়ি। নামলেন চার মহিলা-সহ ১২ জন। কলিং বেল বাজালেন। দরজা খুলে দিলেন বাড়ির এক বাসিন্দা। ভিতরে ঢুকে গেলেন বারো আগন্তুক।

ব্যারাকপুর আদালতে অভিযুক্ত কণিকা মাইতি। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়।

ব্যারাকপুর আদালতে অভিযুক্ত কণিকা মাইতি। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:৩৪
Share: Save:

যাদবপুরের একটি বাড়ির সামনে এসে থামল দু’টি এসইউভি গাড়ি। নামলেন চার মহিলা-সহ ১২ জন। কলিং বেল বাজালেন। দরজা খুলে দিলেন বাড়ির এক বাসিন্দা। ভিতরে ঢুকে গেলেন বারো আগন্তুক। কিছু ক্ষণের মধ্যেই ভিতর থেকে এক মহিলাকে সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে এসে ফের জোড়া গাড়িতে রওনা দিলেন তাঁরা।

সিআইডি-র কর্মী-অফিসারেরা বৃহস্পতিবার সকালে ওই বাড়ি থেকে এ ভাবেই গ্রেফতার করেন বেআইনি অর্থ লগ্নি সংস্থা আইকোরের ম্যানেজিং ডিরেক্টর অনুকূল মাইতির স্ত্রী কণিকা মাইতিকে। তিনি ওই সংস্থার অন্যতম ডিরেক্টর। দুপুরে পুলিশের গাড়িতে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় ব্যারাকপুর আদালতে। তাঁর পরনে ছিল সাদা-সবুজ সালোয়ার-কামিজ, শান্তিনিকেতনি ওড়না। তাঁকে কাঠগড়ায় তোলা হয়নি। সরকারি আইনজীবী আবেদন জানান, ধৃত লগ্নি-কর্ত্রীকে সিআইডি-র হেফাজতে রাখা হোক। কণিকার জামিনের আর্জি জানান তাঁর আইনজীবী। ধৃতকে সাত দিন সিআইডি-র হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক।

সিআইডি-র খবর, আইকোরের কর্ণধার অনুকূলকেও গত ১৬ এপ্রিল যাদবপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়। তখন থেকেই পলাতক ছিলেন কণিকা। পলাতক অবস্থায় চেন্নাই-সহ দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন শহরে আশ্রয় নিয়েছিলেন ওই মহিলা। বুধবার রাতেই তিনি যাদবপুরের বাড়িতে ফেরেন। খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় ওই বাড়িতে হানা দেয় ১২ জন গোয়েন্দার একটি দল।

ভবানী ভবন সূত্রের খবর, কণিকা পলাতক থাকার সময়েই তাঁর বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছিল সিআইডি। অনুকূল এবং তাঁর স্ত্রী ছাড়াও কবীর হোসেন, স্বপন রায়, পুলক রায়, অতনু হালদার, চিলেন দত্ত, সমর মুস্তাফি ও অরিজিৎ মালাকারের নাম ছিল সেই চার্জশিটে। কণিকা ছাড়া সকলকেই আগে গ্রেফতার করেছেন গোয়েন্দারা।

গত বছর জুনে বেলঘরিয়া থানায় আইকোরের বিরুদ্ধে ছ’লক্ষ টাকার প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেন এক আমানতকারী। সিবিআই-কে সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারির তদন্তভার দেওয়ার সময় সুপ্রিম কোর্ট অন্যান্য লগ্নি সংস্থার বিষয়েও খোঁজখবর নিতে বলে। সেই নির্দেশ অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গ এবং অন্যান্য রাজ্যে লগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযানে নামে সিবিআই এবং এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি। নভেম্বরে আইকোরের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত শুরু করে সিআইডি। তদন্তে গোয়েন্দারা জানতে পারেন, বেলঘরিয়া থানায় অভিযোগকারীর সঙ্গে প্রতারণা করে মোট ১০ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এবং সেই প্রতারণা হয়েছে আইকোর ই-সার্ভিসের নামে। আইকোর গোষ্ঠীর আওতায় ১৯টি সংস্থা রয়েছে। সব ক’টিরই ম্যানেজিং ডিরেক্টর অনুকুল।

সিআইডি-র দাবি, আইকোর গোষ্ঠীর ১২ জন ডিরেক্টরের মধ্যে ন’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ওই গোষ্ঠীর অধীনে আরও ১৯টি সংস্থা সিকিওরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অব ইন্ডিয়া বা সেবি-র অনুমতি ছাড়াই ২০১০ সাল থেকে মাল্টি ইনভেস্টমেন্ট সিস্টেম, ডিবেঞ্চার, ফিক্সড ডিপোজিট ইত্যাদির মাধ্যমে কয়েক হাজার কোটি টাকা তুলেছিল বলে গোয়েন্দাদের অভিযোগ।

তদন্ত সংস্থা ভিন্ রাজ্যে তল্লাশি চালিয়ে আইকোরের কয়েক কোটি টাকার সম্পত্তির হদিস পেয়েছে। চলতি মাসের প্রথম দিকে গোয়েন্দারা উত্তরপ্রদেশের মোগলসরাই এবং হিমাচলপ্রদেশের সালোনে হানা দেন। এক তদন্তকারী অফিসার জানান, মোগলসরাইয়ে আইকোরের একটি সিমেন্ট কারখানা-সহ কয়েক লক্ষ টাকার সম্পত্তি মিলেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Chit fund Chit fund owner Jadavpur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE