জাল নোট ঠেকাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পাঁচশো-হাজার বাতিল করেছেন মঙ্গলবার। পর দিনই জাল নোট চক্রে জড়িত অভিযোগে কালিয়াচকের আসাদুল্লা বিশ্বাসের বিরুদ্ধে বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইন (ইউএপিএ) প্রয়োগ করল সিআইডি। গত সেপ্টেম্বরে থানা ভাঙচুরের ঘটনায় আসাদুল্লাকে গ্রেফতার করা হয়। তখন সে কালিয়াচক পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল সদস্য। তবে তাকে ইতিমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে শাসকদল সূত্রের খবর।
গত জানুয়ারি মাসে মালদহের কালিয়াচকে হাঙ্গামা ও থানা ভাঙচুর হয়েছিল। তাতে আসাদুল্লার নাম জড়ায়। সে ফেরার হয়ে যায়। সেপ্টেম্বর মাসেই মালদহেই তাকে জালে ফেলে জেলা পুলিশ।
তদন্তকারীরা দাবি করেছেন, আসাদুল্লাকে জেরা করে আঁচ মিলেছিল, তার সঙ্গে আন্তর্জাতিক জাল নোট চক্রের নিবিড় যোগসাজস আছে। এমতাবস্থায় সিআইডি তদন্তভার নেয়। গোয়েন্দারা আসাদুল্লাকে নিয়ে কালিয়াচকের মোজমপুরে তার বাড়িতে হানা দেয়। সেখান থেকে দেড় লাখ টাকার জাল নোট উদ্ধার করেন।
এর পরেই আসাদুল্লাকে ইউএপিএ’র শিকলে বাঁধার তোড়জোড় শুরু করা হয়েছিল। সিআইডি-সূত্রের খবর: আসাদুল্লার বিরুদ্ধে ইউএপিএ’তে মামলা রুজু করতে চেয়ে বুধবার মালদহের অতিরিক্ত বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে আবেদন করেছিলেন তদন্তকারীরা। বিচারক তা মঞ্জুর করেছেন।
প্রসঙ্গত, জাল নোটের ‘হাব’ হিসেবে কালিয়াচক এমনিতেই দেশে কুখ্যাত। গোয়েন্দা-সূত্রের বক্তব্য, ওখানকার দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা আসাদুল্লা যে বিভিন্ন অপরাধে যুক্ত, সে খবর আগেই ছিল। তবে সে যে জাল নোটেরও মস্ত ব্যাপারি, তা জানা ছিল না। ‘‘ঢোঁড়া খুঁজতে গিয়ে শঙ্খচূড়ের খোঁজ পেয়েছিলাম। এ বার তার বিষদাঁত উপরোনোর প্রক্রিয়া শুরু হল।’’— মন্তব্য করেছেন এক সিআইডি-কর্তা। যদিও মঙ্গলবারের মোদীর ঘোষণার সঙ্গে এই পদক্ষেপের কোনও যোগাযোগের কথা তাঁরা মানতে চাননি।
আসাদুল্লার ‘ট্র্যাক রেকর্ড’ কী?
গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, গোবেচারার মুখোশ পরা আসাদুল্লাকে দেখে ওর আসল চেহারার আন্দাজ পাওয়া খুব শক্ত। খুন, বোমাবাজি, অবৈধ অস্ত্র মজুতের পুরোনো ছ’-ছ’টা মামলা ঝুলছে আসাদুল্লার নামে। পাশাপাশি সে মাদকের কারবারও চালাত চুটিয়ে। আফিম পাচারের অভিযোগে নার্কোটিক কন্ট্রোল ব্যুরো (এনসিবি)-র খাতায় আসাদুল্লার নামও রয়েছে। কলকাতা ও লখনউয়ে এনসিবি’র দু’টি মাদক-মামলায় অভিযুক্ত সে।
এবং সিআইডি-র দাবি, সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশেও আসাদুল্লার নেটওয়ার্ক ছড়ানো রয়েছে। গত ডিসেম্বর মাসে তার এক বাংলাদেশি দোসর হিলি সীমান্তে গ্রেফতার হয়। তার কাছে থেকে বিস্তর জাল নোট উদ্ধার হয়। ‘‘আমরা জানতে পেরেছি, আসাদুল্লা বাংলাদেশ থেকে জাল নোট আমদানি করত। এজেন্ট মারফত নকল নোটের কনসাইনমেন্ট ছড়িয়ে দিত আগরা, দিল্লি, হায়দরাবাদ, দেহরাদূন, ইলাহাবাদের মতো শহরে শহরে।’’— বলেছেন এক তদন্তকারী। সিআইডি-র দাবি, এমন দশ জন এজেন্টের নাম জানতে পারা গিয়েছে। এজেন্টদের নীচের স্তরে কাজ করত সাব-এজেন্টরা।
বস্তুত কালিয়াচক-সহ মালদহ জুড়ে জাল নোটের রমরমা প্রশাসনের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। এই পরিস্থিতির মোকাবিল করার জন্য রাজ্য সরকার বিশেষ ভাবে উদ্যোগী হয়েছে। যে কারণে ‘বিশেষ’ দায়িত্ব বর্তেছে সিআইডি-র উপরে। নবান্ন-সূত্রের খবর: ওই তল্লাটে জাল নোট ও অন্যান্য দেশবিরোধী কার্যকলাপে বাঁধ তুলতে সিআইডি-তে ‘স্পেশ্যাল সুপার’ পদ বানিয়ে তাঁর নেতৃত্বে বিশেষ দল গঠন করা হয়েছে।
এই মুহূর্তে সিআইডি’র ওই স্পেশ্যাল সুপার পদটি অবশ্য ফাঁকা পড়ে রয়েছে। তবে ভবানী ভবনের নেতৃত্বে ‘স্পেশ্যাল টিম’ পুরোমাত্রায় সক্রিয় বলে সিআইডি-কর্তারা দাবি করেছেন। তাঁদের কথায়, ‘‘আসাদুল্লার মতো জাল নোট কারবারের মহাগুরুকে আইনের প্যাঁচে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলাটা টিমের বড় সাফল্য সন্দেহ নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy