Advertisement
E-Paper

জেসপের আগুনে অন্তর্ঘাত, ইঙ্গিত সিআইডি তদন্তে

জেসপ কারখানার অগ্নিকাণ্ডে অন্তর্ঘাতের দিকেই ইঙ্গিত করল সিআইডি। প্রাথমিক তদন্তের পরে বুধবার তাদের একটি সূত্র জানিয়েছে, আগুন ধরিয়ে দেওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। অন্তর্ঘাতের অভিযোগে এ দিন কারখানার মালিক পবন রুইয়ার দিকে আঙুল তুলেছেন শ্রমিকেরাও।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০১৬ ০১:০৫
শ্রমিকদের সভা। বুধবার, জেসপে। —নিজস্ব চিত্র।

শ্রমিকদের সভা। বুধবার, জেসপে। —নিজস্ব চিত্র।

জেসপ কারখানার অগ্নিকাণ্ডে অন্তর্ঘাতের দিকেই ইঙ্গিত করল সিআইডি। প্রাথমিক তদন্তের পরে বুধবার তাদের একটি সূত্র জানিয়েছে, আগুন ধরিয়ে দেওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। অন্তর্ঘাতের অভিযোগে এ দিন কারখানার মালিক পবন রুইয়ার দিকে আঙুল তুলেছেন শ্রমিকেরাও। একই দিনে খোদ দমকলমন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়েরও দাবি, পবন রুইয়াকে গ্রেফতার করা উচিত। সোমবার অগ্নিকাণ্ডের রাতেই ঘটনার পিছনে নাশকতার অভিযোগ তুলে পবনের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছিলেন তিনি। সেই মতো দমকল দফতর ও পুলিশ একযোগে জেসপ মালিকের বিরুদ্ধে এফআইআর করে। স্বতঃপ্রণোদিত মামলাও রুজু হয়েছে।

এ দিন শোভনবাবু বলেন, ‘‘আমি মনে করি পবন রুইয়াকে হেফাজতে নেওয়া হোক। ওঁর বক্তব্য উনি আদালতেই জানান।’’ পবন রুইয়ার বিরুদ্ধে মঙ্গলবারই দু’টি মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। জেসপের ভিতরেও বসানো হয়েছে পুলিশ পাহারা। দমকলমন্ত্রীর মন্তব্য,‘‘ পবন রুইয়ার বিরুদ্ধে সিআরপিসিতে মামলা করা হোক। ওই এলাকা ঠিকমতো দেওয়াল দিয়ে ঘিরে আলোকিত করার কথা ছিল ওঁর। তা না করায় ওই জায়গাটি সমাজবিরোধীদের আখড়া হয়ে গিয়েছে।’’

রাতে রুইয়া দমকলমন্ত্রীর বাড়ি গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন। তার পরেও নিজের অবস্থান থেকে সরেননি শোভনবাবু। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আইন মেনে তদন্ত চলছে। মামলা হয়েছে। আইনত যা হওয়ার, তা-ই হবে। বিষয়টি কারও ব্যক্তিগত ইচ্ছা-অনিচ্ছার উপরে নির্ভর করে না। আমি পবন রুইয়াকে স্পষ্টভাবে সেটাই জানিয়ে দিয়েছি।’’

এ দিন ব্যারাকপুরের ডেপুটি শ্রম কমিশনার আশিস সরকার জেসপের কর্মীদের তিনটি সংগঠনের সঙ্গে কারখানার ১২ নম্বর গেটের শেডে আলোচনায় বসেন। সেখানেই ঠিক হয়, আগামী ২৫ তারিখ থেকে কর্মীরা প্রতিদিন কারখানায় হাজিরা দেবেন। শ্রম কমিশনারের সেই নির্দেশে অবশ্য সায় দিয়েছে তিনটি শ্রমিক সংগঠনই। তবে কর্মী সংগঠনগুলির দাবি, বেকার কর্মীদের অনেকেই সরকারের অনুদান পাওয়ার আগে থেকে রোজগারের জন্য অন্যত্র কাজকর্ম করছেন। সে সব কাজ ছেড়ে তাঁরা কারখানায় হাজিরা দেবেন। ফলে সরকার যেন তাঁদের রোজগারের দিকটিও খতিয়ে দেখেন।

গত ফেব্রুয়ারিতে বিধানসভায় জেসপ অধিগ্রহণের বিল পাশ হয়ে যাওয়ার পরে সেখানকার ৪৯৬ জন কর্মচারীর জন্য রাজ্য সরকার প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে অনুদান বরাদ্দ করেছে। ইতিমধ্যে সেই অনুদান দেওয়া চালুও হয়ে গিয়েছে। সেই অনুদান সত্যিই জেসপ কর্মীদের ঘরে পৌঁছচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখার কাজ এ দিনই শুরু করেছে সরকার।

রাজ্য সরকার আগেই ক্ষোভপ্রকাশ করেছে, জেসপ অধিগ্রহণ বিলটির অনুমোদন এখনও কেন্দ্রের বিবেচনাধীন। সে প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ এ দিন নয়াদিল্লিতে জানান, আজ, বৃহস্পতিবার বিষয়টি নিয়ে অফিসারদের সঙ্গে কথা বলবেন। তবে মন্ত্রীর মতে, ‘‘অধিগ্রহণ ও ডানলপ-জেসপ বন্ধ থাকার সঙ্গে আগুনের ঘটনা এক করে দেখা ঠিক নয়। দু’টি আলাদা বিষয়।’’

অন্য দিকে, মমতা-সরকারের বক্তব্য, রাজ্যের শিল্প পরিস্থিতির উন্নতিসাধন করতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু কোনও ব্যবসায়ী কর্মী-বিরোধী অবস্থান নিলে বা আচমকা কারখানা বন্ধ করে দিলে শ্রমিক স্বার্থের প্রশ্নে কখনওই মালিকের সঙ্গে আপস করেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই যে ভাবে একদা চা বাগানে গোয়েন্‌কাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছিলেন, ঠিক সে ভাবেই পবন রুইয়াদের ক্ষেত্রেও কড়া অবস্থান নিয়ে জেসপ-ডানলপের বিল বিধানসভায় পাশ করান মমতা। এ বার অগ্নিকাণ্ড পরিস্থিতিতে নতুন মোড় এনে দিয়েছে বলে মনে করছে রাজ্য সরকার।

দমদমে জেসপের বন্ধ কারখানায় বারবার আগুন লাগার কারণ খোঁজার পাশাপাশি কারখানার ভিতর থেকে মালপত্র চুরির তদন্তও করছে সিআইডি। চুরির ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে চার দুষ্কৃতীকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। ব্যারাকপুর কমিশনারেটের পুলিশ সুপার তন্ময় রায়চৌধুরী জানান, ধৃতদের নাম সুমিত ভট্টাচার্য, পালান অধিকারী, ছোট্টু রায় ও প্রশান্ত মণ্ডল। সুমিতের বাড়ি মধ্যমগ্রামে। পালান বিমান বন্দর এলাকায় থাকে। ছোট্টুর বাড়ি কৈখালিতে এবং প্রশান্ত মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা। তারা এলাকার বাসিন্দা নয়। কেন তারা সেখানে এসেছিল বা কারখানার মাল চুরির জন্য তাদের কেউ ভাড়া করে এনেছিল কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে সিআইডি সূত্রের খবর।

তবে আগুন লাগার ঘটনায় বেশ কয়েক জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও বুধবার রাত পর্যন্ত ওই মামলায় গ্রেফতারের সংখ্যা শূন্য বলে সিআইডির দাবি। সিআইডি সূত্রের খবর, বারবার ওই কারখানায় আগুন লাগার ফলে সেখানে থাকা বহু দামি যন্ত্রপাতি ও মালপত্র নষ্ট হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছিল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। কারখানার গেট-সহ এলাকায় নিরাপত্তারক্ষী থাকা সত্ত্বেও বারবার এমন ঘটতে থাকায় এর পিছনে অন্তর্ঘাতও রয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ, কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও কারখানার ভিতরে থাকা মালপত্র রক্ষায় ব্যবস্থা নেয়নি তারা।

ওই অভিযোগ ওঠার পরেই রাজ্য সরকারের তরফে সিআইডিকে ঘটনার তদন্তভার দেওয়া হয়। তার আগেই অবশ্য দমদম থানা পবন রুইয়ার বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট ভাবে ওই অভিযোগে মামলা করে। শুধু পুলিশ নয়, দমকলের মানিকতলা কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিকও জেসপ কারখানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। দমকলের অভিযোগের ভিত্তিতে বিস্ফোরক ও দাহ্য পদার্থ মজুত রেখে ক্ষয়ক্ষতি ঘটানোর অভিযোগের ধারায় মামলা রুজু করে তদন্ত করছে সিআইডি।
দু’টি মামলার তদন্তই একসঙ্গে সিআইডি করেছে বলে ভবানী ভবন সূত্রে খবর।

প্রাথমিক তদন্তের পরে সিআইডি-র একটি সূত্র জানায়, কারখানার ভিতর বিদ্যুৎ সংযোগ না-থাকা সত্ত্বেও যে ভাবে গুদামের ক়়ড়িবরগা আগুনে পুড়ে গিয়েছে, তাতে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। জেসপের মালিকানা পবন রুইয়ার হাতে থাকায় তিনি আগুন লাগার দায় এ়ড়াতে পারেন না। সেই কারণে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠাবেন তদন্তকারীরা। এক তদন্তকারী জানান, প্রাথমিক ভাবে ওই কারখানা চত্বরে আগুন লাগার পিছনে গাফিলতির একাধিক প্রমাণ মিলেছে। মালিককে ডেকে পাঠিয়ে ওই গাফিলতির কারণ জানতে চাওয়া হবে।

বুধবার জেসপের কর্মীরাও পবন রুইয়ার বিরুদ্ধে অন্তর্ঘাতের অভিযোগ তুলেছেন। জেসপের তৃণমূল পরিচালিত কর্মী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন জানান, জেসপ নিয়ে মালিক না হয়েও সব ধরনের বেআইনি কাজ করেছেন রুইয়া। তাঁর অভিযোগ, ২০০৯ সালে কেন্দ্র জেসপ চালানোর জন্য রুইয়ার লাইসেন্স পুনর্নবীকরণ করেনি। কারণ কেন্দ্রীয় সরকারের দেওয়া ৩৬৩ কোটি টাকা তছরুপ করেছিলেন রুইয়া। তিনি কেন্দ্রীয় সরকারকে কারখানা পুনরায় হস্তান্তর করেননি। উল্টে কেন্দ্রীয় সরকারের ১০ টাকা দামের শেয়ার ২ টাকা দরে বেচার চেষ্টা করেছিলেন। কর্মচারীরা তা আটকে দেন। বর্তমানে রাজ্য সরকারের পরিকাঠামো ও পুনর্গঠন দফতরের অধীনে কারখানা রয়েছে।

CID suspected sabotage Jessop fire
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy