Advertisement
E-Paper

আমডাঙায় অবরোধের রাস্তাতেই রান্না হল খিচুড়ি, খেলেন পুলিশ থেকে আটকে পড়া চালকও

ঘটনাস্থলে মোতায়েন পুলিশ কর্মীরাও অবাক হয়ে যান। তাঁরাও বুঝতে পারছিলেন না কী হতে চলেছে। তারপর বিক্ষোভকারীদেরই একাংশ রাস্তার পাশে উনুন খুঁড়ে হাঁড়ি চাপিয়ে শুরু করে দেন রান্নার কাজ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৯:০১
জাতীয় সড়কের উপরেই লম্বা জায়গা তড়িঘড়ি পরিষ্কার করে পাত পেড়ে খাওয়া হল খিচুড়ি। নিজস্ব চিত্র।

জাতীয় সড়কের উপরেই লম্বা জায়গা তড়িঘড়ি পরিষ্কার করে পাত পেড়ে খাওয়া হল খিচুড়ি। নিজস্ব চিত্র।

রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে যখন সংশোধিত নাগরিকত্ব বিল নিয়ে প্রতিবাদ বিক্ষোভ ঘিরে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের একের পর এক খবর আসছে, তখন বিক্ষোভেরই অন্য এক ছবি দেখালেন উত্তর ২৪ পরগণার আমডাঙা-কামদেবপুরের বাসিন্দারা।

যদিও ছবিটা বাকি রাজ্যের মতোই ছিল শনিবার রাত বা রবিবার সকালেও। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক লাগোয়া আমডাঙা-আওয়ালসিদ্দি-কামদেবপুরে শনিবার থেকেই চলছে দফায় দফায় বিক্ষোভ। রাজ্যের অন্য এলাকার মতোই রবিবার সকালেও গাছের গুঁড়ি জ্বালিয়ে জাতীয় সড়ক অবরোধ করা হয়। তবে অবরোধকারীরা কখনোই মারমুখী ছিলেন না। অবরোধে আটকে প়ড়ে কয়েকশো ট্রাক, বাস, গাড়ি।

দুপুর গড়ানোর আগেই হঠাৎ দেখা যায় মোটর ভ্যানে চাপিয়ে কয়েক ডজন বিরিয়ানি তৈরি করার বিশাল বিশাল হাঁড়ি চলে আসে কামদেবপুরের মোড়ে, জাতীয় সড়কের উপরে। খানিকক্ষণের মধ্যেই ভ্যানে করে আনা হয় বেশ কয়েক বস্তা মিষ্টি কুমড়ো, ফুলকপি, মূলো,সিমের মতো আনাজ।

আরও পড়ুন: শান্তির পথে আন্দোলন হোক, চান বিশিষ্টরা

ঘটনাস্থলে মোতায়েন পুলিশ কর্মীরাও অবাক হয়ে যান। তাঁরাও বুঝতে পারছিলেন না কী হতে চলেছে। তারপর বিক্ষোভকারীদেরই একাংশ রাস্তার পাশে উনুন খুঁড়ে হাঁড়ি চাপিয়ে শুরু করে দেন রান্নার কাজ। একদিকে যেমন সংশোধিত নাগরিকত্ব বিলের বিরুদ্ধে রাস্তা অবরোধ করে চলতে থাকে স্লোগান, তখন অন্যদিকে বিক্ষোভকারীদের অন্য একটা অংশ ব্যস্ত আলু, কুমড়ো ছাড়িয়ে কাটাকুটিতে। কেউ বা চাল-ডাল ধুতে।

বিক্ষোভকারীদেরই একাংশ রাস্তার পাশে উনুন খুঁড়ে হাঁড়ি চাপিয়ে শুরু করে দেন রান্নার কাজ

বিক্ষোভকারীদের মধ্যে নেতৃস্থানীয় মুজাফ্ফর সর্দার। তাঁকে প্রশ্ন করা হলে মুচকি হেসে বলেন,‘‘একটু অপেক্ষা করুন।” এ দিকে ততক্ষণে কয়েক ডজন হাঁড়ি থেকে বেরচ্ছে শীতের আনাজ দেওয়া খিচুড়ির গন্ধ। শীতের দুপুরে খিচুড়ির গন্ধ ছড়িয়ে পড়তে রাস্তায় বসে থাকা অবরোধেও একটু উসখুস ভাব। তার পরেই ডাক এল।

আরও পড়ুন: বিক্ষোভ, অশান্তি অব্যাহত রাজ্যে, জেলায় জেলায় মিছিল, অবরোধও

জাতীয় সড়কের উপরেই লম্বা জায়গা তড়িঘড়ি পরিষ্কার করে মুখোমুখি দুটি পংক্তি বসানোর ব্যবস্থা। অবরোধকারীরাই হাতে হাতে বিলি করলেন থার্মোকলের থালা। শুধু বিক্ষোভকারীরাই নন। খিচুড়ির ভাগ পৌঁছল অবরোধে আটকে পড়া ট্রাক বা গাড়ির চালকদের কাছেও। বাদ যাননি পুলিশ কর্মীরাও। শীতের দুপুরের রোদ পিঠে লাগিয়ে তখন জাতীয় সড়কের উপরে চলছে রীতি মতো চড়ুইভাতি।

অবরোধে-বিক্ষোভে প্রথম সারিতে ছিলেন অশোকনগর কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ওবাইদুল্লা মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘‘ আমরা সরকারের নীতির বিরোধিতা করি। কেন্দ্রীয় সরকার এই সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন এনে গোটা দেশে ধর্মের ভিত্তিতে মানুষের মধ্যে বিভেদ আনতে চাইছে। আমরা সেই বিভেদের বিরুদ্ধে।”

খিচুড়ির ভাগ পৌঁছল অবরোধে আটকে পড়া ট্রাক বা গাড়ির চালকদের কাছেও

ওবাইদুল্লার সঙ্গী ইবাদুলের কথায়,‘‘সবাই যখন হিংসায় মত্ত, তখন আমরা দেখাতে চাই এ ভাবেও প্রতিবাদ করা যায়। রাস্তায় যাঁরা আটকে পড়েছেন তাঁদের কাছে খাবার পৌঁছে দেওয়াও আমাদের কাজ।” তবে সে সব কিছুর পাশাপাশি, অবরোধ প্রতিবাদের উদ্যোক্তাতারা এটাও মানেন যে, মারামারি না করে, এ ভাবে একটা আমোদ-খাওয়া দাওয়ার আয়োজন রাখলে আন্দোলনে লোকও আসবে বেশি, জোরদার করা যাবে কর্মসূচি। এক পুলিশ কর্তা সব দেখে শুনে বলেন,‘‘সে যাই হোক উদ্দেশ্য, খারাপ তো হচ্ছে না।” বেলা ৩টে নাগাদ খাওয়া দাওয়া পর্ব মেটার পর পুলিশের অনুরোধে উঠে যায় অবরোধ। জাতীয় সড়কের পাশে শুরু হয় প্রতিবাদ সভা। সেখানে উপস্থিত ছিলেন ফুরফুরা শরিফের প্রথম সারির নেতা সানাউল্লা সিদ্দিকী।

NRC CAB Khichudi Police National Highway AamDanga North 24 Pargana
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy