Advertisement
E-Paper

মেধাকে অগ্রাধিকার দিতে গিয়ে বিরোধের মুখে

অচলায়তন ভাঙতে গিয়ে বিপাকে বিশ্বভারতী। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরে ছাত্রভর্তির ক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের প্রথা ভেঙে মেধাকে অগ্রাধিকার দিতে চাইছে বিশ্বভারতী। আর তা করতে গিয়েই তুমুল বিরোধিতার মুখে পড়েছে ওই কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়। ‘কোটা’ তুলে দেওয়ার প্রতিবাদে ১০ দিন ধরে দফায় দফায় ক্লাস বয়কট করছে পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের পড়ুয়ারা।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:৩৫

অচলায়তন ভাঙতে গিয়ে বিপাকে বিশ্বভারতী।

স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরে ছাত্রভর্তির ক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের প্রথা ভেঙে মেধাকে অগ্রাধিকার দিতে চাইছে বিশ্বভারতী। আর তা করতে গিয়েই তুমুল বিরোধিতার মুখে পড়েছে ওই কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়। ‘কোটা’ তুলে দেওয়ার প্রতিবাদে ১০ দিন ধরে দফায় দফায় ক্লাস বয়কট করছে পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের পড়ুয়ারা। নজিরবিহীন ভাবে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির স্কুলপড়ুয়ারা বৃহস্পতিবার বিশ্বভারতীর উপাচার্য সুশান্ত দত্তগুপ্তের কুশপুতুল পর্যন্ত পুড়িয়েছে।

প্রশ্ন উঠেছে, মেধাকে অগ্রাধিকার দেওয়ায় ভুল কোথায়?

বিশ্বভারতী এর আগেও ছাত্র-আন্দোলন দেখেছে। কিন্তু, সে সবই স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরের ছাত্রছাত্রীদের। উপাচার্যদের কুশপুতুল পোড়ানোটাও নতুন নয় বিশ্বভারতীতে। কিন্তু, যে ভাবে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা এ দিন এই কাণ্ড ঘটিয়েছে, তা বিশ্বভারতীর ইতিহাসে প্রথম। পরীক্ষা না দিয়ে, পড়াশোনা বন্ধ রেখে ওই পড়ুয়াদের আন্দোলন চালানোটা ভাল ভাবে নিতে পারছেন না অনেকেই। পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের একাধিক প্রাক্তনীও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের মতে, এটা অরাজকতা।

কিন্তু কেন এই আন্দোলন?

এত দিন পাঠভবন ও শিক্ষাসত্র থেকে উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ ছাত্রছাত্রীদের বিশ্বভারতীর স্নাতক স্তরে ভর্তির জন্য অভ্যন্তরীণ সংরক্ষণ (কোটা) ছিল। সেই সুবাদে ওই দুই স্কুলের বহু ছাত্রছাত্রীই (কর্তৃপক্ষের বেঁধে দেওয়া ন্যূনতম নম্বরের ভিত্তিতে) সরাসরি স্নাতক স্তরে ভর্তি হতে পারত। বস্তুত, বিশ্বভারতী তৈরি হওয়ার সময় থেকেই এই কোটা প্রথা রয়েছে। কিন্তু গত ২২ নভেম্বর বিশ্বভারতীর শিক্ষাসমিতির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে এই নিয়ম তুলে দেওয়া হবে। স্নাতক স্তরে ভর্তি হতে গেলে তা সর্বভারতীয় মেধা তালিকার ভিত্তিতে হবে। এ ক্ষেত্রে ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টক্যাল ইনস্টিটিউট এবং আইআইটি-র ভর্তি প্রক্রিয়ার সঙ্গে সাযুজ্য রাখা হবে। তা জানিয়ে নোটিসও দেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এর প্রতিবাদেই ২৪ নভেম্বর থেকে আন্দোলন চালাচ্ছে পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের পড়ুয়ারা। আন্দোলনকারীদের প্ররোচিত করা এবং সংবাদমাধ্যমে মুখ খোলার জন্য জনা সাতেক সিনিয়র পড়ুয়াকে সাসপেন্ড করেছেন কর্তৃপক্ষ। তাঁদের এ দিন ডেকে পাঠায় বিশ্বভারতীর তদন্ত কমিটি।

চিত্রশিল্পী যোগেন চৌধুরী বলেন, “এখানকার কর্মী এবং শিক্ষকদের সন্তানরাই বিশ্বভারতীর অধিকাংশ আসন ভর্তি করে দেয়। এই প্রথার ফলে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে তাঁদেরও একটা নির্ভরতা তৈরি হয়েছে। এটা চালিয়ে না গিয়ে, সারা ভারতের পড়ুয়াদের সঙ্গে সমান সুযোগ পাওয়াটা তাদের মেনে নেওয়া উচিত।” একই সঙ্গে তিনি বলেন, পাঠভবন থেকে পাশ করে যারা এখানেই পড়তে চায়, তাদের জন্য আলাদা কলেজের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। বিশ্বভারতীর প্রাক্তন উপাচার্য সুজিত বসু অবশ্য অভ্যন্তরীণ কোটা তুলে দেওয়া সমর্থন করেন না। তিনি বলেন, “আমি যে ভাবে বিশ্বভারতীকে দেখেছি, তাতে বিদ্যালয়-পড়ুয়াদের উচ্চশিক্ষা দিতে পারাটাই তো সবচেয়ে ভাল ফর্মুলা।” কবি শঙ্ঘ ঘোষ বলেন, “কোটা তুলে দেওয়া উচিত কিনা, এই প্রশ্নের উত্তরে এক কথায় হ্যাঁ কিংবা না বলা কঠিন। এক দিকে মনে হতে পারে, বাইরের যে ছাত্ররা যোগ্যতর তারা কেন সুযোগ পাবে না। কিন্তু পাঠভবন-শিক্ষাসত্রে যারা পড়ছে, তাদের পড়ার সুযোগও তো কোথাও থাকতে হবে। বিশ্বভারতীর উপর তাদের অধিকার বোধ তৈরি হয়। তাদের যোগ্য তৈরি করার দায়িত্বও তাদের প্রতিষ্ঠানের।”

এই জটিলতার সামনে প্রশ্ন উঠেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে স্কুল জুড়ে থাকাই কি মূল সমস্যা? এ দেশে খুব কম বিশ্ববিদ্যালয়ই স্কুল চালায়। তা হলে পাঠভবন, শিক্ষাসত্র কেন পৃথকভাবে চলবে না? শঙ্খবাবুর উত্তর, “পাঠভবনকে বিশ্বভারতী থেকে বাদ দিলে রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাচিন্তার মূলকেই আঘাত করা হয়। তাঁর শিক্ষাচিন্তার উপর ভিত্তি করেই এই স্কুলগুলো চলছে। বিশ্ববিদ্যালয় কেন স্কুল চালাবে, প্রশ্ন করলে তাই বলতে হবে, আর পাঁচটা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো হওয়ার কথা নয় বিশ্বভারতীর।”

পাঠভবনের প্রাক্তন অধ্যক্ষ তথা প্রবীণ আশ্রমিক সুপ্রিয় ঠাকুর, শিল্পী যোগেন চৌধুরী, বিশ্বভারতীর অধ্যাপকসভার সাধারণ সম্পাদক রাজেশ কে ভেনুগোপাল-সহ বিশ্বভারতীর সঙ্গে যুক্ত অনেকেই মনে করেন, পাঠভবন-শিক্ষাসত্রকে আলাদা করা চলে না। প্রাক্তন উপাচার্য সুজিতবাবুর প্রশ্ন, “জামিয়া মিলিয়াতেও তো স্কুল স্তর রয়েছে। সেখানে ভাল চলছে। এখানে চলবে না কেন?”

পাঠভবন-শিক্ষাসত্রের সঙ্গে কী সম্পর্ক বিশ্বভারতীর, কতটুকুই বা তাদের প্রতি বিশ্বভারতীর দায়বদ্ধতা, তা নিয়ে নতুন করে চিন্তার সুযোগ তৈরি করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাসমিতির সিদ্ধান্ত। ছাত্রদের মধ্যে তা নিয়ে ক্ষোভও কিছুটা প্রত্যাশিত। তা বলে কুশপুতুল দাহ বা ক্লাস বয়কট করাটা আন্দোলনের সঠিক পথ নয়, তা প্রায় এক সুরে বলছেন সুপ্রিয় ঠাকুর, সুজিত বসু, যোগেন চৌধুরী-সহ প্রায় সকলেই।

Visva-Bharati University Class boycott test boycott Visva protest student students suspended Talent student state news online news
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy