মালদহের মাটিতে এ যেন মুখ্যমন্ত্রীর মাতৃ আরাধনা!
সংখ্যালঘুরা যে জেলায় সংখ্যাগুরু, সেখানে দাঁড়িয়ে বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী আগাগোড়া বোঝাতে চেয়েছেন, তাঁরও হিন্দুত্বে খামতি নেই। কিন্তু সেই হিন্দুত্ব বিজেপির মতো বিভেদকামী নয়, বরং সবাইকে নিয়ে চলার মাধ্যম। এ দিন মঞ্চে দাঁড়িয়ে একের পর এক মন্ত্র-স্তোত্র বলে গিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হাততালিতে ফেটে পড়েছে সভা।
মমতার এ হেন আচরণে অবশ্য কিছুটা সংশয়ে তৃণমূলের একাংশ। তাঁদের মতে, এর ফলে দলের অন্যতম ভোট ব্যাঙ্ক সংখ্যালঘুদের মনে দ্বিধা তৈরি হতে পারে। মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ মহলের অবশ্য দাবি, তিনি যা বলেছেন ভেবেচিন্তেই বলেছেন। কারণ, এ বার রামনবমী, হনুমান জয়ন্তীতে মালদহের বিভিন্ন স্থানে বেশ লোক সমাগম হয়েছিল। ওই জেলার সংখ্যালঘু ভোট বরাবরই কংগ্রেস এবং তৃণমূলের মধ্যে ভাগাভাগি হয়। ফলে হিন্দু ভোট এককাট্টা হলে তার ফায়দা নিতে পারে বিজেপি। সেই সম্ভাবনাই ঠেকাতে চেয়েছেন মমতা।
প্রসঙ্গত মালদহে এ বার বিধানসভা ভোটে কোনও আসনই জিততে পারেনি তৃণমূল। উল্টে গত বারের দুই মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী এবং সাবিত্রী মিত্র হেরে যান। বাম-কংগ্রেসের ঝুলিতে যায় এগারোটি আসন। একটি জেতে বিজেপি।
বিজেপি অবশ্য পাল্টা কটাক্ষ করেছে মমতাকে। কৈলাস বিজয়বর্গীয় বলেন, ‘‘ভোটব্যাঙ্কের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সারা দিন ইনশাল্লা বলে বেড়াতেন। পশ্চিমবঙ্গবাসীকে ধন্যবাদ, তাঁরা তাঁকে সংস্কৃত শ্লোক বলতে বাধ্য করেছেন।’’
হিন্দুত্বের কথা বলতে গিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘অপপ্রচারের’ প্রসঙ্গও এ দিন টেনে আনেন মমতা। তাঁর অভিযোগ, ‘‘সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব ছড়ানো হচ্ছে। বাংলাদেশের ঘটনাকে বাংলার বলে দেখানো হচ্ছে। সব ভুয়ো প্রোফাইলে অ্যাকাউন্ট খুলে কুমন্তব্য করা হচ্ছে।’’
আসলে সোশ্যাল মিডিয়ার অপপ্রচারের জেরেই গত মাসে পুরীতে জগন্নাথ দর্শনে গিয়ে পাণ্ডাদের একাংশের বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয় মমতাকে। সে সময় তিনি জোর গলায় বলেছিলেন, ‘‘আমি সাচ্চা হিন্দু।’’ মালদহেও মমতা বললেন, ‘‘আসল হিন্দু আছে বাংলায়!’’
যা শুনে কৈলাসের প্রশ্ন, ‘‘ভোটের লোভে আপনি মহরমের শোভাযাত্রার জন্য দুর্গাপুজোর বিসর্জন বন্ধ করে দিয়েছিলেন। বাংলা কি দুর্গাপুজোর জন্য বিখ্যাত, নাকি মহরমের জন্য?’’