Advertisement
১৭ মে ২০২৪
Mamata Banerjee

বালু নিয়ে আপাতত ‘ধীরে চলো’ নীতিতে এগোতে চায় তৃণমূল, কৌতূহল মন্ত্রিসভা নিয়ে মমতা কী সিদ্ধান্ত নেন

গ্রেফতার হওয়া বালু এই মুহূর্তে হাসপাতালে ভর্তি। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেই তাঁকে যেতে হবে ১০ দিনের ইডি হেফাজতে। এই অবস্থায় তাঁকে কি মন্ত্রিসভায় রাখবেন মমতা? কৌতূহল নানা মহলে।

file image of CM Mamata  Banerjee and Forest Minister Jyotipriya Mallick

(বাঁ দিকে)বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। । — ফাইল ছবি।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০২৩ ১৬:১৬
Share: Save:

রেশন বণ্টন নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগে ইডির হাতে গ্রেফতার হয়েছেন রাজ্যের বনমন্ত্রী তথা প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ওরফে বালু। এই মুহূর্তে তিনি হাসপাতালে ভর্তি। আদালতের নির্দেশ মতো, হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেই তাঁকে যেতে হবে ১০ দিনের ইডি হেফাজতে। এই প্রেক্ষিতে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে, রাজ্য মন্ত্রিসভায় বালুর ভবিষ্যৎ কী হবে সেই প্রশ্ন। শাসকদলের অভ্যন্তরে যা খবর, তাতে বালুকে নিয়ে আপাতত ‘ধীরে চলো’ নীতিই নেবে তৃণমূল। শেষ পর্যন্ত কী হয় তার জন্য সকলের নজর অবশ্য সেই কালীঘাটের দিকেই। কারণ, দলনেত্রী মমতাই এ সম্পর্কিত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।

পুজোর ঠিক আগে, গত ১২ অক্টোবর শেষ বার মন্ত্রিসভার সদস্যদের নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। পরবর্তী বৈঠক কবে তার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হয়নি এখনও। তবে প্রশাসনের একটি সূত্রের খবর, আগামী ৯ নভেম্বর মন্ত্রিসভার পরবর্তী বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে পারে। যদি তা হয়, তবে সেই বৈঠকে হাজির থাকতে পারবেন না জ্যোতিপ্রিয়। এই প্রেক্ষিতে জল্পনা তৈরি হয়েছে, বালুকে নিয়ে কি কোনও সিদ্ধান্ত নেবেন তৃণমূল নেত্রী? পার্থের মতো মন্ত্রিপদ কি খোয়াতে হতে পারে জ্যোতিপ্রিয়কেও? তৃণমূলের সামনের সারির নেতাদের অনেকেই মনে করছেন, পার্থের ক্ষেত্রে যা হয়েছিল, জ্যোতিপ্রিয়ের ক্ষেত্রে তা হওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ, জনমানসে দুই মন্ত্রীর গ্রেফতারির সময়কার অভিঘাত এবং পারিপার্শ্বিক চিত্র একেবারেই ভিন্ন।

২০২২ সালের ২২ জুলাই ইডি হানা দিয়েছিল রাজ্যের তৎকালীন শিল্প এবং বাণিজ্য মন্ত্রী (এবং প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী) পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে। ২৩ তারিখ তাঁকে গ্রেফতার করা হয় নিয়োগ দুর্নীতি মামলায়। সেই মহানাটকীয় গ্রেফতারির কয়েক দিনের মধ্যেই পার্থের মন্ত্রিপদ কেড়ে নিয়েছিলেন মমতা। মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণের পাশাপাশি, দলীয় মহাসচিব পদ, এমনকি দলীয় সদস্যপদও হারিয়েছিলেন পার্থ। সাংবাদিক বৈঠক ডেকে দলীয় সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। জ্যোতিপ্রিয়ের ক্ষেত্রে কী হবে? তৃণমূল সূত্রের খবর, অন্তত এই মুহূর্তে কোনও কড়া পদক্ষেপের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। বরং, জ্যোতিপ্রিয়ের বাড়িতে ইডি তল্লাশি চলাকালীন মমতা নিজে যে ভাবে মুখ খুলেছিলেন, গ্রেফতারির পর রাজ্যের একাধিক জেলায় যে ভাবে মিছিল হয়েছে শাসকদলের, তাতে অন্য ইঙ্গিতই মিলছে।

তৃণমূলেরই অন্দরের একটি অংশ বলছে, পার্থের গ্রেফতারির সঙ্গে জ্যোতিপ্রিয়ের গ্রেফতারির তুলনা হয় না। পার্থের গ্রেফতারের সঙ্গে মিলেমিশে ছিল বান্ডিল বান্ডিল নোট উদ্ধারের হতবাক করে দেওয়া দৃশ্যের সঙ্গে ‘বান্ধবী আবিষ্কারের’ মতো চমকের অভিঘাত। তৃণমূলের অন্দরের হিসাবনিকাশ বলে, যা জনমানসে প্রভাব ফেলেছিল যথেষ্টই। জ্যোতিপ্রিয়ের গ্রেফতারিতে জনমানসে সেই ধরনের কোনও অভিঘাত নেই। একাধিক মামলায় তৃণমূলের আরও অনেক মন্ত্রী ইডি বা সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন নানা সময়ে। চিটফান্ড মামলায় মদন মিত্রকে গ্রেফতার করেছিল সিবিআই। সিবিআই দফতরে হাজিরা দিতে যাওয়ার আগেই তিনি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে যান। কিন্তু গোটা পর্বে দল তাঁর পাশে ছিল। জেলে থাকা অবস্থায় দলের টিকিটে ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে লড়েনও তিনি। তবে হেরে যান। নারদ মামলায় গ্রেফতার হন সুব্রত মুখোপাধ্যায় (বর্তমানে প্রয়াত), ফিরহাদ হাকিম। এঁদের কাউকেই মন্ত্রিসভা থেকে সরাননি মমতা। পার্থ ব্যতিক্রম। জ্যোতিপ্রিয়ের ক্ষেত্রে এমন ব্যতিক্রম হওয়ার কোনও কারণ দেখছেন না তৃণমূলের নেতা-নেত্রীরা।

রাজ্য প্রশাসনের কিছু সূত্র অবশ্য ভিন্ন এক সমস্যার কথা তুলে ধরছেন। তাঁদের কথায়, মদন, সুব্রত বা ফিরহাদ নারদ মামলায় আটক ছিলেন অল্প কিছু দিনের জন্য। কিন্তু মদন বা পার্থের মতো জ্যোতিপ্রিয়কেও যদি বড় সময়ের জন্য হেফাজতে থাকতে হয়, সে ক্ষেত্রে তাঁর দফতরের কাজ দীর্ঘ সময় ধরে পূর্ণমন্ত্রী ছাড়া চালানো সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রীকে বিকল্প কিছু বাছতেই হবে। এই যুক্তি অবশ্য তৃণমূল নেতারা পুরোপুরি উড়িয়ে দিচ্ছেন না। তবে তাঁদের বক্তব্য, জ্যোতিপ্রিয় কত দিন হেফাজতে থাকবেন তা এখনই কী করে ধরে নেওয়া সম্ভব? তিনিও দ্রুত জামিন পেলে এ ধরনের কোনও সমস্যার কথা উঠবে না। তাই তাঁর মন্ত্রিত্ব নিয়ে দ্রুত কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে তৃণমূলের বড় অংশই মনে করছেন না।

জ্যোতিপ্রিয়ের বাড়িতে যখন ইডি তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে, তখনই কালীঘাটে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে কার্যত বালুর পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী। সাফ জানিয়েছিলেন, অসুস্থ বালুর কিছু হয়ে গেলে ইডি এবং বিজেপির বিরুদ্ধে এফআইআর করা হবে। অর্থাৎ, নেত্রী যে বালুর পাশেই আছেন, তাতে সেই বার্তা ছিল স্পষ্ট। পক্ষান্তরে, পার্থের ধরা পড়ার পর বা তাঁর বাড়িতে তল্লাশির সময় একটি কথাও বলেননি মুখ্যমন্ত্রী। শুধু নেত্রীই নন, বালুর হয়ে দলগত ভাবে তৃণমূল পথেও নেমেছে। প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রীর ‘অন্যায়’ গ্রেফতারির প্রতিবাদে মিছিলে পা মিলিয়েছেন বর্তমান খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ। রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজা সাংবাদিক বৈঠক করে জ্যোতিপ্রিয়ের পাশে দাঁড়িয়ে কেন্দ্রীয় সরকার এবং বিজেপিকে আক্রমণ শানিয়েছেন। মধ্যমগ্রামের মিছিলে হাঁটতে হাঁটতে রথীন প্রশ্ন করেছিলেন, ‘‘একশো দিনের কাজ এবং আবাস যোজনা নিয়ে আমাদের নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যে আন্দোলন করছিলেন, তার অভিমুখ ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য কি এই সব গ্রেফতারি?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mamata Banerjee Jyotipriya Mallick TMC Nabanna
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE