খাতড়ার সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বাঁকুড়ার সভা থেকে কেন্দ্র এবং বিজেপি-র বিরুদ্ধে আক্রমণের সুর চড়ালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আলু-পেঁয়াজের আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধি থেকে এনআরসি— সোমবার একাধিক ইস্যুতে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেছেন তৃণমূল নেত্রী। কেন্দ্রের নয়া কৃষি আইনের জেরেই আলু-পেঁয়াজের দাম বাড়ছে বলে অভিযোগ করেন মমতা। যদিও তার জবাবে পাল্টা রাজ্য সরকারের ঘাড়েই দায় ঠেলেছেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ।
প্রসঙ্গত, মমতা যখন নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির জন্য নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারকে দায়ী করেছেন, তার ২৪ ঘন্টা পরেই তাঁর মোদীর সঙ্গেই এক আলোচনায় যোগ দেওয়ার কথা। করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে ওই আলোচনায় যোগ দিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা-সহ একাধিক মুখ্যমন্ত্রীকে আহ্বান জানিয়েছেন।
আলুর কিলো হাফ সেঞ্চুরির পথে। পেঁয়াজ ৭০ থেকে ৮০ টাকা কিলো। বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, বাজারের এই অগ্নিমূল্যের জন্য দায়ী কেন্দ্রের নয়া আইন। সংসদের বিলম্বিত বাদল অধিবেশনেই তিনটি কৃষি বিল পাশ হয়ে আইনে পরিণত হয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইনে সংশোধন। চাল, ডাল, আলু, পেঁয়াজের মতো খাদ্যপণ্যকে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। ফলে এই সব পণ্যের মজুতে আর কোনও সরকারি বিধিনিষেধ নেই। তৃণমূল নেত্রীর তোপ, ‘‘কেন্দ্রের এই নয়া আইনের জন্যই লাফিয়ে বাড়ছে আলু-পেঁয়াজের দাম।’’
খাতড়ার সভায় জনতার ভিড়।
আরও পড়ুন: পাঁচতারা হোটেলের লোকদেখানো খাবার, বাঁকুড়ায় অমিতকে কড়া মমতা-কটাক্ষ
মমতা বলেন, ‘‘আলু, পেঁয়াজ, চাল, ডাল— এগুলো অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইনের আওতায় ছিল। কিন্তু কেন্দ্র সেই আইন তুলে দিয়েছে। এরা চাষিদের সব কেড়ে নেবে! আলু লুটে নিয়েছে। পেঁয়াজ লুটে নিয়েছে। দু’-তিন মাস যদি কোনও ব্যবস্থা না নেয়, তা হলে পেঁয়াজ-আলুর দাম কোথায় গিয়ে পৌঁছবে দেখবেন।’’ দিলীপ অবশ্য পাল্টা বলেছেন, ‘‘আলু তো এই রাজ্যের হুগলি-বর্ধমানেই সবচেয়ে বেশি হয়। এর নিয়ন্ত্রণ তো রাজ্য সরকারের হাতে। টিএমসির লোকেরাই স্টোরে মজুত করছে। দাম বাড়িয়ে নির্বাচনের তহবিল তৈরির চেষ্টা চলছে। মোদী সরকারের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে উনি পার পাবেন না।’’
আরও পড়ুন: ডিসেম্বরে ‘দুয়ারে দুয়ারে সরকার’, নয়া প্রকল্পের ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর
ভোট যত এগোচ্ছে, তত বিজেপি তথা কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সুর চড়াচ্ছে তৃণমূল। মমতা বলেন, ‘‘এরা সকলের সব কেড়ে নেবে। আর ক্ষমতায় এলেই বলবে এনআরসি চাই!’’ বিজেপির বিরুদ্ধে টাকা ছড়ানোর অভিযোগ তুলে মমতা বলেন, ‘‘ভোটের সময় দেখবেন অনেকেই আসবে টাকা নিয়ে। টাকা নেবেন। কিন্তু ভোট দেবেন না। কারণ যে টাকা দিতে আসবে, ওই টাকাটা আপনাদেরই টাকা।’’ পরিযায়ী শ্রমিক ইস্যুতে মমতা বলেন, ‘‘আমরা ৩০০-রও বেশি ট্রেন চালিয়ে পরিযায়ী শ্রমিকদের ফিরিয়ে নিয়ে এসেছি। কেন্দ্র এক জনের ভাড়াও দেয়নি।’’
মঙ্গলবার বাঁকুড়া থেকেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে টিকা নিয়ে ভার্চুয়াল বৈঠকের আগের দিনও টিকা ইস্যুতে কেন্দ্রকে তোপ দাগতে ছাড়েননি মমতা। তিনি বলেন, ‘‘এই বলছে এখনই টিকা দিয়ে দিচ্ছি! কিন্তু আসতে আসতে ৬ মাস, ৮ মাস পেরিয়ে গেল। আমাদের রাজ্য সরকার তৈরি আছে। কার কাছ থেকে নিতে হবে বলুন। আমরা নিয়ে সব টিকা দিয়ে দেব।’’ অর্থাৎ, তাঁর রাজ্য প্রশাসন যে টিকার বন্টনের ব্যবস্থাপনায় তৈরি, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের আগেই সেই বার্তা দিয়ে রাখলেন মমতা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy