‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রকল্পে একাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের ট্যাব কেনার জন্য ১০ হাজার টাকা এখনও অধিকাংশ পড়ুয়ার অ্যাকাউন্টে ঢোকেনি। স্কুল শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, প্রতি বার শিক্ষক দিবস অর্থাৎ ৫ সেপ্টেম্বরের আশপাশেই ওই টাকা অ্যাকাউন্টে ঢুকে যায়। গত বছর বহু পড়ুয়ার টাকা তাদের অ্যাকাউন্টে না ঢুকে অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়ে অন্য ব্যক্তির অ্যাকাউন্টে চলে গিয়েছিল। শিক্ষা দফতর জানিয়েছে, এ বার তারা অনেক বেশি সতর্ক। চলতি বছর থেকে কিছু নতুন নিয়ম তাই চালু করেছে শিক্ষা দফতর। অভিযোগ, তথ্য যাচাইয়ের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সতর্কতা থেকেই ওই টাকা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, পড়ুয়াদের তথ্য যাচাই কেন আগে থেকে করা হল না?
নতুন নিয়মে আরও একবার পড়ুয়াদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর-সহ প্রয়োজনীয় তথ্য নির্দিষ্ট ফর্মে স্কুলে জমা দিতে হবে। স্কুল সেই তথ্য যাচাই করবে। তারপর ফের তা পড়ুয়াদের কাছে পাঠাবে। পড়ুয়ারা মুচলেকা দিয়ে জানাবে যে সব তথ্য ঠিক। পড়ুয়ারা মুচলেকা না দেওয়া পর্যন্ত টাকা দেওয়ার প্রক্রিয়াই শুরু হবে না।
বিভিন্ন স্কুলের প্রধান শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, পড়ুয়াদের তথ্য যাচাইয়ের ক্ষেত্রে ভুলভ্রান্তি ধরা পড়ছে। আগে শুধু পড়ুয়াদের অ্যাকাউন্ট নম্বর ঠিক আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হত। এখন পড়ুয়াদের আধার কার্ডে থাকা নামের বানানের সঙ্গে স্কুলে নথিভুক্ত নামের বানান সহ নানা খুঁটিনাটি পরীক্ষা করতে হচ্ছে। ডোমজুড়ের কেশবপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক দীপঙ্কর দাস বলেন, ‘‘আমাদের স্কুলে ১৩২ জন পড়ুয়ার মধ্যে এখনও পর্যন্ত ৩৯ পড়ুয়াকে আবার তথ্য সংশোধন করতে বলা হয়েছে। ওদের আধার কার্ডের নামের সঙ্গে স্কুলের বাংলা শিক্ষা পোর্টালের নামের বানানে গোলমাল আছে। অনেক ক্ষেত্রে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পড়ুয়াদের নামের সঙ্গে স্কুলে থাকা নামের বানান মিলছে না। আধার কেন্দ্রে গিয়ে তা সংশোধন করতে হবে।’’
বেলগাছিয়া মনোহর অ্যাকাডেমির প্রধান শিক্ষক উৎপল চক্রবর্তী বলেন, ‘‘নতুন পদ্ধতিতে পড়ুয়াদের অ্যাকাউন্ট হ্যাকিংয়ের ঝুঁকি নেই। তবে তথ্য যাচাইয়ের প্রক্রিয়া জটিল। এই তথ্য যাচাই একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির সময়েই করিয়ে নিলে এখন এত দেরি হত না।’’ বাঙুরের নারায়ণ দাস মেমোরিয়াল মাল্টিপারপাস স্কুলের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় বড়ুয়া বলেন, ‘‘পড়ুয়ার তথ্য যাচাই করার পরে যে ওটিপি পাঠানো হবে সেটা পড়ুয়াদের মোবাইলে আসবে। অভিভাবকের মোবাইলে ওটিপি গেলে সেটা বাতিল। অনেক পড়ুয়ার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে তার অভিভাবকের ফোন নম্বর দেওয়া আছে। ফলে পড়ুয়াদের ফোন নম্বর পাল্টাতে বলতে হচ্ছে।’’ কয়েক জন পড়ুয়া আবার জানিয়েছে, আধার কার্ড সংশোধনের জন্য আধার কেন্দ্রে গিয়ে বারবার ফিরে আসতে হয়েছে। বেশির ভাগ সময়েই আধার কেন্দ্রের কর্মীরা বলছেন, লিঙ্ক নেই। যদিও শিক্ষা দফতরের দাবি, প্রকল্পকে সুরক্ষিত করতেই এই সব পদক্ষেপ করা হয়েছে। নিয়ম মেনে ফর্ম পূরণ করলে দ্রুত টাকা পড়ুয়াদের অ্যাকাউন্টে ঢুকে যাবে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)