সচেতনতা তিমিরেই। আলোচনাসভা-পদযাত্রা-শিবির করে বাড়ানো যায়নি কন্যাসন্তানের অনুপাত।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা স্বাস্থ্য দফতরের উদ্যোগে রবিবার সন্ধ্যায় মেদিনীপুরের ‘ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন সভাকক্ষে’ (আইএমএ)-র সভাকক্ষে ‘কন্যা সন্তান বাঁচাও’ শীর্ষক এক আলোচনাসভা হয়। সভায় কন্যা ভ্রূণ হত্যার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হয়। ছিলেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) গিরীশচন্দ্র বেরা, ডেপুটি সিএমওএইচ সৌম্যশঙ্কর ষড়ঙ্গী, রবীন্দ্রনাথ প্রধান প্রমুখ। ছিলেন আইএমএ- র কর্মকর্তারাও। সভায় সকলেই কন্যা ও পুত্র অনুপাত কমতে থাকা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
ছবিটা ঠিক কী রকম?
জেলা স্বাস্থ্য দফতরে এক সূত্রে খবর, এখন পশ্চিম মেদিনীপুরে প্রতি এক হাজার পুত্র সন্তান পিছু কন্যা সন্তানের সংখ্যা ৯৬৩। রাজ্যে গড় ৯৫৬। রাজ্যের মধ্যে আবার গ্রামাঞ্চলে এই সংখ্যাটা ৯৫৯। শহরাঞ্চলে ৯৪৭। ঠিক কী হারে কমছে কন্যার সংখ্যা? ১৯৬১ সালে গোটা দেশে ১ থেকে ৬ বছর বয়সী প্রতি এক হাজার পুত্র সন্তানপিছু কন্যা সন্তানের সংখ্যা ছিল ৯৭৬। ৫০ বছর পরে ২০১১ সালে এই সংখ্যাটা কমে হয় ৯১৯। ১৯৬১ সালে এ রাজ্যে ১ থেকে ৬ বছর বয়সী প্রতি এক হাজার পুত্র সন্তানপিছু কন্যা সন্তানের সংখ্যা ছিল ১০০৮। আর ৫০ বছর পরে ২০১১ সালে এই সংখ্যাটা কমে হয় ৯৫৬।
জেলার সিএমওএইচ গিরীশচন্দ্র বেরা বলেন, “কন্যা ভ্রূণ হত্যার প্রতিরোধে আলোচনার পাশাপাশি গ্রামে গ্রামেও ব্যাপক প্রচার চালাতে হবে।” জেলা স্বাস্থ্য দফতর নানা ধরনের সচেতনতামূলক প্রচার কর্মসূচি করে বলেও দাবি সিএমওএইচের। জেলার এক স্বাস্থ্য- কর্তা বলেন, “এটা সামাজিক এবং মানসিক সমস্যা। এটা আমাদের সকলের কাছেই লজ্জার বিষয় যে ২০১৬ সালে দাঁড়িয়ে কন্যা সন্তান বাঁচানো নিয়ে আলোচনা করতে হচ্ছে। সমস্যার সমাধানে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।”
নারীদের উপর অত্যাচারের ঘটনা বাড়ছে বলে অভিযোগ। মেদিনীপুরের এক চিকিত্সকের কথায়, “গোটা দেশেই কন্যা ভ্রুণ হত্যা দিনে দিনে বেড়ে চলেছে। আসলে প্রত্যেক নারীর মধ্যে ছেলের মা হওয়ার একটা স্বপ্ন থাকে। কিন্তু এটা বেড়ে চলতে থাকলে আমরা তো মা পাবো না, বোন পাবো না।” তাঁর মতে, “লিঙ্গ অনুপাত কমে যাওয়ার ফলে কী হতে পারে? নারীদের উপর অত্যাচারের ঘটনা আরও বাড়বে। নারী পাচার বেড়ে যাবে। মেয়েদের লড়াই করার ক্ষমতা কমে যাবে।”
জেলার এক স্বাস্থ্য- কর্তার কথায়, “ছোটবেলা থেকে মেয়েদের শিক্ষা দিতে হবে যে আমিও ছেলেদের থেকে কোনও কিছুতে কম নয়। এই নিয়ে সর্বত্র সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। একজন দশ জনকে বোঝাবে। সেই দশ জন আরও একশো জনকে বোঝাবে। তবেই কন্যা ভ্রূণ হত্যার ঘটনা কমবে।” হরিয়ানা, দিল্লি, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যে কন্যার সংখ্যা কমছে। তবে কেরলে কিন্তু এখনও পুত্র সন্তানের থেকে কন্যা সন্তানের অনুপাত বেশি।
পরিসংখ্যান বলছে, গ্রামাঞ্চলের থেকে কন্যা সন্তানের অনুপাত বেশি কমছে শহরাঞ্চলে। অনেকের মতে, জেলার ‘ইউএসজি ক্লিনিক’গুলোতে নিয়মিত পরিদর্শন করা উচিত। গত তিন মাসে জেলায় হাতেগোনা কয়েকটি ‘ক্লিনিক’-এ পরিদর্শন হয়েছে। সংখ্যাটা ১০- এর নীচে! জেলার এক স্বাস্থ্য- কর্তার অবশ্য দাবি, “ইউএসজি ক্লিনিকগুলোয় নিয়মিতই পরিদর্শন হয়। এ জন্য জেলায় ‘ডিস্ট্রিক্ট ইন্সপেকশন অ্যান্ড মনিটরিং কমিটি’ (ডিআইএমসি) নামে এক কমিটিও রয়েছে।” পাশাপাশি তাঁর বক্তব্য, “সবস্তরে সমান সচেতনতাই পারে কন্যা ভ্রূণ হত্যা রোধ করতে। কম বয়সে বিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে এখন অনেক মেয়েরাই এগিয়ে আসছে। বলছে, কম বয়সে বিয়ে করব না। সচেতনতা বাড়ার ফলেই এটা সম্ভব হয়েছে। এ ক্ষেত্রেও প্রচার গড়ে তুলতে হবে। সর্বত্র সচেতনতামূলক কর্মসূচি করতে হবে। তবেই পরিস্থিতি বদলাবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy