রাজ্য এবং রাজভবনের দ্বন্দ্ব অব্যাহত। চিঠির পাল্টা চিঠি, মন্তব্যের পাল্টা মন্তব্য চলছেই!
৫ জানুয়ারি রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির অন্তর্বর্তী উপাচার্যদের চিঠি দিয়েছিল রাজভবন। বলা হয়েছিল, উপাচার্যদের নিয়োগ, পুনর্নিয়োগের ক্ষমতা রাজ্য সরকারের নেই। সে সব ক্ষমতাই রাজভবনের। উচ্চশিক্ষা দফতরের সঙ্গে কথা বলার আগে রাজভবনে কথা বলতেও ‘নির্দেশ’ দিয়েছিল রাজভবন। তার পাল্টা চিঠি দিয়ে রাজভবনকে উচ্চশিক্ষা দফতর জানায়, রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ক্ষেত্রে রাজ্য সরকার এবং উচ্চশিক্ষা দফতরই গুরুত্বপূর্ণ। রাজ্যপালের পদটি নেহাতই সাংবিধানিক এবং আচার্যের পদটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলির বিধিদ্বারা আবদ্ধ।আচার্য হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির নতুন আইন বা বিধি তৈরির এক্তিয়ারও রাজ্যপালের নেই। কীসের ভিত্তিতে রাজ্যপাল বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে চিঠি পাঠিয়েছেন তার জবাব তলব করে উচ্চশিক্ষা দফতর এ-ও বলেছিল যে উত্তর মিললে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।
এই চিঠির দ্বন্দ্বই শনিবার বাগযুদ্ধে পৌঁছেছে। উচ্চশিক্ষা দফতরের চিঠি নিয়ে এ দিন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের বক্তব্য, তিনি কোনও দফতরের প্রশ্নের উত্তর দেন না।রাজ্যপালের সঙ্গে আদান-প্রদান হয় সরকারের। সরকার থেকে চিঠি আসুক তখন উত্তর দেওয়া হবে। রাজ্যপালের মন্তব্য নিয়ে সন্ধ্যায় শিক্ষামন্ত্রী এক্স-হ্যান্ডলে (সাবেক টুইটার) লিখেছেন, ‘‘রাজ্যপাল বলেছেন, তিনি কোনও সরকারি দফতরের প্রশ্নের উত্তর দেন না, সরকারের সঙ্গে আদান-প্রদান হয় মহামান্যের! এখন দু এক কথায় বুঝাইয়া দাও...সরকারের সঙ্গে সরকারি বিভাগ-এর কী পার্থক্য? এত দিন যে চিঠিপত্র উচ্চশিক্ষা বিভাগের সঙ্গে আদানপ্রদান করেছে রাজ্যপালের সচিবালয়, সেগুলির তবে কী হবে? প্রশ্নগুলি সহজ হলেও উত্তরগুলি অজানা।’’
প্রসঙ্গত, রাজ্যপালের সিনিয়র স্পেশাল সেক্রেটারিকে ওই চিঠি দিয়েছিলেন উচ্চশিক্ষা দফতরের স্পেশাল কমিশনার। তাতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ক্ষেত্রে রাজ্যপালের বদলে রাজ্য সরকার এবং উচ্চশিক্ষা দফতরের গুরুত্ব বোঝাতে আট দফা যুক্তি দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, অকারণে দফতর সম্পর্কে অযৌক্তিক শব্দ লেখা হচ্ছে। সংবিধানের ১৬৬ ধারার ৩ নম্বর উপাধারার উল্লেখ করে বলা হয়েছে রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির প্রশাসন ও পরিচালনার ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের একাধিক কর্তব্য ও ক্ষমতা রয়েছে। জানানো হয়েছে, রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আর্থিক সহযোগিতা রাজ্যের থেকেই পায়। তাই টাকা কী ভাবে খরচ করা হচ্ছে সেই খোঁজ নেওয়া যেতেই পারে। এর পাশাপাশি, রাজ্যের আইন অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় যে দফতরের মাধ্যমে আচার্যের সঙ্গে যোগাযোগ করতে ‘বাধ্য’ সে কথাও মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের কথাও স্মরণ করানো হয়েছে ওই চিঠিতে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন কেন বৈধ তারও ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)