নিজস্ব চিত্র।
অন্য সব দল প্রার্থী ঘোষণা করে প্রচারে নেমে পড়লেও তাঁদের দল নাম জানায়নি। এ নিয়ে হতাশা বাড়ছিল কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে। অবশেষে শিল্পাঞ্চলের তিন কেন্দ্রের জন্য প্রার্থীর নাম জানালেন কংগ্রেস নেতৃত্ব।
বামেদের সঙ্গে আসন সমঝোতায় আসানসোল উত্তর ও কুলটি কেন্দ্র দু’টিতে কংগ্রেস প্রার্থী দেবে তা আগেই জানানো হয়েছিল। দুর্গাপুর পশ্চিম কেন্দ্রে প্রার্থী হিসেবে প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক বিপ্রেন্দু চক্রবর্তীর নাম ঘোষণা করে দিয়েছিল বামেরা। কিন্তু পরে জানানো হয়, সেখানে প্রার্থী দেবে কংগ্রেস। মঙ্গলবার কংগ্রেসের তরফে রাজ্যের যে ক’টি কেন্দ্রের জন্য প্রার্থীর নাম জানানো হয়েছে, তার মধ্যে এই তিন আসন রয়েছে। আসানসোল উত্তরে ইন্দ্রাণী মিশ্র, কুলটিতে অভিজিৎ আচার্য ও দুর্গাপুর পশ্চিমে স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় প্রার্থী হচ্ছেন।
দুর্গাপুরের আইএনটিইউসি নেতা স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় প্রায় দু’দশক ধরে জেলা কংগ্রেসের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক। আইএনটিইউসি-র এ রাজ্যের কার্যকরী কমিটির সদস্য স্বপনবাবু মূলত দুর্গাপুরে পরিবহণ কর্মীদের সংগঠনের নেতা হিসেবে পরিচিত। বহরমপুর কেএন কলেজে পড়ার সময়ে ছাত্র পরিষদ করতেন। ১৯৭৮ সালে দুর্গাপুরে ব্লক যুব কংগ্রেসের সভাপতি হন তিনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন যুব কংগ্রেসের সভানেত্রী ছিলেন তখন ফের দুর্গাপুরে সংগঠনের দায়িত্ব পান স্বপনবাবু। এখন আইএনটিইউসি অনুমোদিত রাজ্য পরিবহণ কর্মী ফেডারেশন এবং সর্বভারতীয় পরিবহণ কর্মী ফেডারেশনের সম্পাদক স্বপনবাবু।
এই আসনে কংগ্রেসকে প্রার্থী দিতে দেওয়া নিয়ে অবশ্য এখনও অসন্তোষ রয়েছে সিপিএমের অন্দরে। বিপ্রেন্দুবাবুর নামে দেওয়াল লিখন শুরু করে দিয়েছিলেন সিপিএম কর্মীরা। সিপিএমের দাবি, বিপ্রেন্দুবাবু প্রাক্তন বিধায়ক, প্রাক্তন মেয়র পারিষদ। দুর্গাপুরের নানা উন্নয়নমূলক কাজে তাঁর নাম জড়িয়ে রয়েছে। তাই তিনি প্রার্থী হলে তৃণমূলের সঙ্গে লড়াইয়ে খানিক সুবিধা পাওয়া যেত। সোমবার দলের জেলা কমিটির বৈঠকেও দুর্গাপুরের সিপিএম নেতারা তাই এই কেন্দ্রে নিজেদের প্রার্থী দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেন। যদিও কংগ্রেস প্রার্থী স্বপনবাবুর আশা, আসন সমঝোতা মেনে নিয়ে সিপিএম এখানে তাঁদেরই সমর্থন করবে। তিনি বলেন, ‘‘ভোটে তৃণমূলের বিরুদ্ধে এককাট্টা হতে হবে। আমাদের আশা, সিপিএম প্রার্থী প্রত্যাহার করে নেবে।’’ সিপিএম প্রার্থী বিপ্রেন্দুবাবু শুধু বলেন, ‘‘দলের উচ্চ নেতৃত্ব যেমন নির্দেশ দেবেন, আমরা সে ভাবে এগবো।’’
কুলটিতে আবার কংগ্রেসকে আসন ছাড়া নিয়ে আপত্তি ছিল ফরওয়ার্ড ব্লকের। দীর্ঘ দিন ধরে এই কেন্দ্রে তাদের প্রভাব রয়েছে। এখানে যাতে তাঁদেরই প্রার্থী দিতে দেওয়া হয় সে জন্য উচ্চ নেতৃত্বের কাছে দরবার করেছিলেন ফরওয়ার্ড ব্লক নেতারা। শেষমেশ অবশ্য আসনটি কংগ্রেসকেই ছাড়া হয়েছে। এখানকার প্রার্থী অভিজিৎ আচার্য কংগ্রেসের আসানসোল লোকসভা এলাকার সভাপতি। গত আসানসোল পুরভোটে ১০৫ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী হয়ে জিতেছেন তিনি। রাজনীতি করছেন ছাত্রাবস্থা থেকে। তৃণমূলের হাত থেকে আসনটি ছিনিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে তাঁরা নিশ্চিত, দাবি অভিজিতের।
যুব কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ইন্দ্রাণী মিশ্রও ছাত্রাবস্থা থেকে রাজনীতিতে রয়েছেন। ২০১১ সালে দেশের সর্বভারতীয় স্তরে যে সাত জন সম্পাদক মনোনীত হন, এ রাজ্য থেকে তার মধ্যে ছিলেন শুধু ইন্দ্রাণীই। বছর দুই পরে তাঁকে সাধারণ সম্পাদক পদ দেওয়া হয়। বাড়তি দায়িত্ব দিয়ে উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে যুব কংগ্রেসের পরিদর্শকও করা হয়। এরই মধ্যে ওড়িশার পরিদর্শকও হয়েছেন। গত লোকসভা ভোটে আসানসোল কেন্দ্রে তাঁকে প্রার্থী করেছিল দল। এ বার আবার আসানসোল উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রে প্রার্থী করা হল। ইন্দ্রাণীর বক্তব্য, ‘‘তৃণমূল ও বিজেপির অপশাসনের বিরুদ্ধে মানুষ আমাদেরই বেছে নেবেন।’’
দেরিতে হলেও প্রার্থীর নাম ঘোষণার পরে স্বস্তিতে কংগ্রেস কর্মীরা। দলের দুর্গাপুরের এক কর্মীর কথায়, ‘‘এ বার আমরাও পুরোদমে দেওয়াল লিখন, প্রচারে নামতে পারব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy