Advertisement
E-Paper

মুকুলে বিদ্ধ কংগ্রেস দিশাহারা সারদায়

নরেন্দ্র মোদী ও তাঁর সরকারের মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়র সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নতুন সমীকরণ আতান্তরে ফেলে দিয়েছে রাজ্য বিজেপি-কে। রাজ্যের আর এক বিরোধী দল কংগ্রেসের অন্দরেও এ বার একই সংশয়ের মেঘ! অধুনা মমতা-বৃত্তের বাইরে থাকা তৃণমূল সাংসদ মুকুল রায়ের সঙ্গে প্রদেশ কংগ্রেস নেতাদের দু’দফার আলোচনা দলের ভিতরে-বাইরে নতুন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৫ ০৪:২০
মোহনবাগানে ভোট দিয়ে বেরোচ্ছেন। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।

মোহনবাগানে ভোট দিয়ে বেরোচ্ছেন। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।

নরেন্দ্র মোদী ও তাঁর সরকারের মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়র সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নতুন সমীকরণ আতান্তরে ফেলে দিয়েছে রাজ্য বিজেপি-কে। রাজ্যের আর এক বিরোধী দল কংগ্রেসের অন্দরেও এ বার একই সংশয়ের মেঘ! অধুনা মমতা-বৃত্তের বাইরে থাকা তৃণমূল সাংসদ মুকুল রায়ের সঙ্গে প্রদেশ কংগ্রেস নেতাদের দু’দফার আলোচনা দলের ভিতরে-বাইরে নতুন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, সারদা-কাণ্ডের প্রতিবাদে আন্দোলনের পরিণতি তা হলে এ বার কী হবে?

সারদা-কাণ্ডে যে মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট, তার মূল হোতা ছিলেন আব্দুল মান্নান। দলের ঝান্ডা ছেড়ে সারদায় প্রতারিতদের নিয়ে পথে নেমে আন্দোলনেও তিনিই প্রধান মুখ। অথচ এখন সেই মান্নানই মুখোমুখি বসেছেন সারদা-কাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত মুকুলের! এবং মান্নানের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন মেরুতে থাকলেও এ ব্যাপারে স্বয়ং প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীও একই পথের পথিক! মুকুলের সঙ্গে বিজেপি-র দহরম মহরমের খবর প্রকাশ্যে আসতে অধীর বলেছিলেন, সিবিআই এক বার জেরা করে তৃণমূলের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদককে ছেড়ে দিয়েছে মানেই তিনি সাধুপুরুষ হয়ে গেলেন— বিজেপি এমন মনে করতে পারে! কিন্তু তাঁরা নন! সেই অধীরই মুকুল-দৌত্যের পরে বলছেন, অভিযুক্ত হলেই কেউ দোষী সাব্যস্ত হয়ে যায় না! সুতরাং, আলোচনা করতে বাধা কোথায়? এর পরে আর কোন মুখে প্রদেশ কংগ্রেস সারদা বা দুর্নীতির প্রশ্নে আন্দোলন করবে, প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে দলের ভিতরে-বাইরে।

প্রদেশ কংগ্রেস নেতা এবং দলের এক বিধায়কের কথায়, ‘‘আলোচনা হয়েছে মানেই মুকুল কংগ্রেসে চলে এসেছেন, তা নয়। কিন্তু রাজনীতি চলে মানুষের ধারণার উপরে। সেই দিক থেকে কংগ্রেস সম্পর্কে জনমানসে ভুল ধারণা তৈরি হওয়ার একটা আশঙ্কা আছেই।’’ সারদায় প্রতারিতদের জন্য সুবিচার চেয়ে মান্নানদের সঙ্গেই পথে বহু বার পা মিলিয়েছেন সিপিএম নেতারা। তাঁদের মধ্যে সব চেয়ে বেশি বার মিছিলে দেখা গিয়েছে সুজন চক্রবর্তীকে। মুকুল-মান্নানদের এক টেবিলে বসা কি তাঁদের যৌথ আন্দোলনের বিশ্বাসযোগ্যতায় চোনা ফেলবে না? সিপিএমের এই রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রবিবার বলেছেন, ‘‘বিষয়টা নিয়ে ভাবতে হবে। মান্নানদা’র সঙ্গে কথা বলব।’’ সিপিএমের অন্দরে অবশ্য আলোচনা হচ্ছে, কংগ্রেস-মুকুলের এই বৈঠক-পর্বে প্রকারান্তরে ভালই হল! কারণ, বিজেপি-তৃণমূল সুসম্পর্কের জেরে সিবিআই গা ছাড়া দিচ্ছে, এই প্রচার ইতিমধ্যেই চলছে। এখন কংগ্রেসের সম্পর্কেও ‘আপসে’র বার্তা গেলে দু়র্নীতি-বিরোধী আন্দোলনে বিশ্বাসযোগ্য শক্তি হিসাবে থেকে যেতে পারবে বামেরাই।

স্বয়ং মান্নানও বুঝতে পারছেন, তাঁরা ‘দ’-এ পড়েছেন! এই বর্ষীয়ান নেতা তাই এ দিন বারবার বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, আন্দোলনের প্রশ্নে তিনি আপস করেননি। তাঁর দাবি, ‘‘সারদা বা চিট ফান্ড নিয়ে মুকুলের সঙ্গে কোনও কথা হয়নি। আন্দোলন যেমন চলছিল, চলবে। মুকুল কথা বলতে চেয়েছিলেন। আমরা শুনতে রাজি হয়েছি।’’ মুকুলকে কংগ্রেসে নেওয়া বা আটকানো— কোনওটারই এক্তিয়ার তাঁদের নেই বলে জানাচ্ছেন মান্নান। কিন্তু হাইকম্যান্ড যদি শেষ পর্যন্ত মমতার একদা দক্ষিণহস্তকে ঘরে তোলে? মান্নানের বক্তব্য, ‘‘আমি আটকাতে পারব না হয়তো। কিন্তু সেটা ঘটলে আমি কী করব, সেটাও ভাবব!’’ এই গোটা পর্ব থেকে সন্তর্পণে দূরে রয়েছেন আর এক বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা মানস ভুঁইয়া। প্রশ্নের জবাবে যিনি শুধু বলেছেন, ‘‘মুকুল কংগ্রেসেরই প্রোডাক্ট। আর আমরা একটি জাতীয় দলের রাজ্য শাখা। এখন মুকুলকে জাতীয় নেতৃত্ব দলে নিতে চাইলে রাজ্য শাখার সভাপতির সম্মতি আছে কি না, তিনিই বলবেন।’’

মুকুল অবশ্য এ দিনও স্বভাবসিদ্ধ কায়দায় যাবতীয় জল্পনায় জল ঢালার চেষ্টা চালিয়েছেন। মোহনবাগান ক্লাবের নির্বাচনে সপুত্র ভোট দিতে গিয়ে মুকুল বলেছেন, ‘‘আগে বলা হচ্ছিল বিজেপি-তে যাবে! এখন বলছে কংগ্রেসে যাবে। মাসির কবে গোঁফ হবে, কবে উনি মেসোমশাই হবেন, এ প্রশ্নের জবাব হয়?’’ তিনি এখনও তৃণমূলের সাংসদ এবং আর অন্য কিছু নিয়ে ভাবছেন না বলেও দাবি করেছেন মুকুল।

তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব এ দিনও এ নিয়ে মুখ খোলেননি। তবে দলের কোনও কোনও প্রথম সারির নেতার প্রশ্ন, ‘‘এক দিকে মুকুল তৃণমূলের সাংসদ। তিনিই আবার অন্য দলের সঙ্গে বসে বলছেন কী ভাবে তৃণমূলের অরাজকতার মোকাবিলা করা যায়! এটা কী করে সম্ভব? উনি কি দলনেত্রীর অনুমোদন নিয়ে এ সব করছেন?’’

congress on mukul roy congress utter confusion mukul roy mukul mannan chemistry mukul adhir chowdhuri meeting mukul congress chemistry abpnewsletters
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy