Advertisement
২৩ মে ২০২৪

নেতা বদলে রাগ, সোমেনকে নিশানা করে ই-মেল রাহুলকে

 মঙ্গলবার রাতেই রাহুল গাঁধীকে এই ই-মেল পাঠানো হয়। সেখানে সোমেন মিত্রের দলের প্রতি দায়বদ্ধতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। তবে চিঠির প্রেরকের নাম দেওয়া হয়নি।

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র। —ফাইল চিত্র

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র। —ফাইল চিত্র

সুস্মিত হালদার
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:১০
Share: Save:

জেলা সভাপতি পরিবর্তন করা হতেই প্রকাশ্যে চলে এক কংগ্রেসের চিরাচরিত গোষ্ঠী কোন্দল। প্রদেশ সভাপতির বিরুদ্ধে একধিক অভিযোগ তুলে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধীর কাছে ই-মেল পাঠালেন নদিয়ার কংগ্রেস কর্মীদের একটি অংশ। নতুন সভাপতির দায়বদ্ধতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। এর পিছনে সদ্য পদচ্যুত জেলা সভাপতির হাত আছে বলে অনেকে সন্দেহ করলেও তিনি তা অস্বীকার করেছেন।

মঙ্গলবার রাতেই রাহুল গাঁধীকে এই ই-মেল পাঠানো হয়। সেখানে সোমেন মিত্রের দলের প্রতি দায়বদ্ধতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। তবে চিঠির প্রেরকের নাম দেওয়া হয়নি।

অধীর চৌধুরী প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি হওয়ার পরে ২০১৪ সালে নদিয়া জেলা সভাপতি করা হয়েছিল অসীম সাহাকে। দলের জেলা কমিটির পাশাপাশি প্রদেশ কংগ্রেস সদস্য করা হয় অধীর অনুগামীদের। তাঁরা অসীম সাহার নেতৃত্বে বিধানসভা থেকে শুরু করে গত পঞ্চায়েত নির্বাচন পর্যন্ত লড়াই করে এসেছেন। কিন্তু লোকসভা নির্বাচনের আগে সভাপতি রদবদল কর্মীদের মধ্যে প্রভাব ফেলেছে। দলের একাংশ এই বদল মানতে পারছেন না। তাঁদের ধারণা, সোমেনের লোক না হওয়াতেই অসীমকে সরানো হয়েছে।

রাহুল গাঁধীর উদ্দেশে পাঠানো ই-মেলে তাই সরাসরি নিশানা করা হয়েছে সোমেনকেই। দলের প্রতি তাঁর দায়বদ্ধতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। অভিযোগ করা হয়েছে, সোমেন সব সময়ে দলের ভিতরে বিভাজন করে এসেছেন। এক সময়ে প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সী প্রদেশ সভাপতি হলে কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে গিয়ে আলাদা দল তৈরি করেছিলেন সোমেন। শুধু তা-ই নয়, পরে তৃণমূলে যোগ দিয়ে নিজে সাংসদ ও তাঁর স্ত্রী শিখা মিত্র বিধায়ক হয়েছেন। অধীর প্রদেশ সভাপতি থাকাকালীন সোমেন তাঁর সঙ্গে অসহযোগিতা করেছেন, তাঁকে পদ থেকে হটানোর চেষ্টাও চালিয়ে গিয়েছেন বলে ওই চিঠিতে অভিযোগ করা হয়েছে।

সেই সঙ্গে দাবি করা হয়েছে, অসীম সাহাই যোগ্য জেলা সভাপতি। ২০১৪ সালে তিনি দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র দু’বছরের মাথায় বিধানসভা নির্বাচনে জেলায় তিনটি আসনে জয়ী হয়েছিল কংগ্রেস। ১৯৯৯ ও ২০০৪ সালে দলের অত্যন্ত খারাপ সময়েও তিনি লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। উল্টো দিকে, প্রশ্ন তোলা হয়েছে নতুন সভাপতি জ্যোর্তিময় ভট্টাচার্যের দায়বদ্ধতা নিয়ে। চিঠিতে দাবি করা হয়েছে, তিনি নিজের স্বার্থের ব্যাপারে আগ্রহী, দলের উন্নতি নিয়ে নন। এমনটা চলতে থাকলে লোকসভা নির্বাচনের আগেই নদিয়ায় দল ভেঙে যেতে পারে ই-মেলের দাবি।

এই ই-মেল কে বা কারা রাহুলকে পাঠিয়েছেন, তা গোপন রাখা হলেও জেলার কিছু নেতা অসীমের হয়ে সরব হয়েছেন। হরিণঘাটার বাসিন্দা, প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির সদস্য অনিল ঘোষের দাবি, “লোকসভা ভোটের আগে আসীম সাহাকে দুম করে সরিয়ে দিয়ে ঠিক করলেন না সোমেনবাবু। এই মুহূর্তে উনিই যোগ্য সভাপতি। এতে দলের ক্ষতি হবে।” আবার তেহট্টের কানাইনগরের বাসিন্দা, পিসিসি সদস্য আনসারুল হকের দাবি, “দলের প্রতি অসীমবাবুর দায়বদ্ধতা নিয়ে কোনও প্রশ্নই নেই। তিনি দলটাকে গুছিয়ে তুলছিলেন। বিধানসভা ভোটে তার ফলও আমরা পেয়েছি। তাঁকে সরিয়ে রেখে দল কতটা শক্তিশালী থাকবে, সেটা সময় বলবে।”

দলেরই অপর একটা অংশ অবশ্য সন্দেহ করছে, অসীম সাহার ইন্ধনেই এই চিঠি লেখা হয়েছে। যদিও তিনি তা মানতে নারাজ। তাঁর দাবি, ‘‘রাহুল গাঁধীতে মেল করার বিষয়টি আমি শুনেছি মাত্র। দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যায়, এমন কোনও কাজ অতীতেও করিনি, ভবিষ্যতেও করব না।” তা হলে এই চিঠি পাঠাল কে? অসীমের দাবি, “আমি তা জানি না। দলকে যারা ভালবাসে, যাদের ভাবাবেগে আঘাত লেগেছে, তাদের কেউ করে থাকতে পারে। আমি এ নিয়ে ভাবতে চাই না।”

নতুন জেলা সভাপতি জ্যোর্তিময় ভট্টাচার্য বলছেন, “এই চিঠি সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। সেই কারণে কোন মন্তব্যও করব না। তা ছাড়া, প্রদেশ নেতৃত্ব আমায় দায়িত্ব দিয়েছে। তাই তাঁরাই যা বলার বলবেন।” সেই সঙ্গেই তিনি যোগ করেন, “সকলেই আমার সঙ্গে থাকবেন, বিশ্বাস করি।”

অধীর চৌধুরী এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চান নি। সোমেন মিত্র বলেন, “রাহুল গাঁধী আমাদের নেতা। তাঁর কাছে কেউ অভিযোগ করতেই পারে। উনি যদি আমাকে এ নিয়ে প্রশ্ন করেন, নিশ্চয়ই উত্তর দেব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Congress Somen Mitra Rahul Gandhi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE