Advertisement
০৭ মে ২০২৪
Rahul Gandhi

কী ভাবে ভাঙল রাহুলের গাড়ির কাচ? হামলা না কি দুর্ঘটনা? নানা ভাষা নানা মতামত কংগ্রেসের মধ্যেই

রাহুল গান্ধীর গাড়িতে হামলা হয়েছে নাকি তা দুর্ঘটনা, তা নিয়ে এখনও এক মত নয় কংগ্রেস। এই ‘ধোঁয়াশা’র মধ্যে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকাশ্য সভা থেকে এ নিয়ে মন্তব্য করেছেন।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০২৪ ১৬:১৫
Share: Save:

একটি ঘটনা। তিনটি ভাষ্য। তিনটিই একটি দলের। কেউ বলছেন দুর্ঘটনা। কেউ বলছেন হামলা। আবার কেউ বলছেন ভালবাসার প্রকাশ। বুধবার ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’য় রাহুল গান্ধীর গাড়ির কাচ ভেঙে যাওয়ার ঘটনায় কার্যত বহুবিভক্ত কংগ্রেস।

বুধবার সকালে কাটিহার থেকে মালদহ যাওয়ার পথে বাংলা-বিহার সীমান্ত এলাকায় দেখা যায় রাহুলের গাড়ির পিছনের কাচ ভাঙা। শুরু হয় শোরগোল। রাহুলের সঙ্গে ওই গাড়িতেই ছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। প্রথমে তাঁর সংক্ষিপ্ত অথচ ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য, ‘‘বুঝে নিন এটা কে করেছে।’’ পরে তিনি অভিযোগ করেন, ‘রাহুলজির’ গাড়ির কাচ ঢিল ছুড়ে ভাঙা হয়েছে। ইশারা তৃণমূলের দিকে। আবার কংগ্রেসের দলেরই এক শীর্ষ নেতার দাবি, রাহুলকে দেখতে এত মানুষ ভিড় করেছেন, তাঁদের চাপে গাড়ির কাচ ভেঙেছে। আর এক মুখপাত্র দাবি করলেন, বাংলার সরকারের বদনাম করতেই এই হামলা হয়েছে।

ওই ঘটনার অব্যবহিত পরে অধীর বলেন, ‘‘কেউ হয়তো পিছন থেকে পাথর ছুড়েছে।’’ তিনি পুলিশের দায়িত্বজ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘‘রাহুলজির মতো এক জন ব্যক্তির বিশাল নিরাপত্তার প্রয়োজন হয়। তাঁর নিরাপত্তায় যদি এমন হয়...’’ এর পর আবারও নাম না করে তৃণমূলকে নিশানা করে তিনি বলেন, ‘‘আমরা মধ্যহ্নভোজনের জন্য একটা জায়গা চেয়েছিলাম। সেটা বাংলার সরকারের। দেওয়া হয়নি আমাদের। তার পর এখানে নিরাপত্তার কোনও বন্দোবস্ত নেই। ওরা চায়, এখানে কোনও না কোনও ঘটনা ঘটুক।’’ পাশাপাশি, রাহুলের গাড়ির কাচ ভাঙার ঘটনাকে ছোট ঘটনা বলে মন্তব্য করেও অধীর আশঙ্কা করেন, অন্য কিছুও ঘটে যেতে পারত।

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির এই মন্তব্যের অব্যবহিত পরেই সাংবাদিক বৈঠক করেন জয়রাম রমেশ এবং কানহাইয়া কুমার। শুরুতেই জয়রাম ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’ নিয়েই বলতে শুরু করেন। রাহুলের গাড়ির উপর ‘হামলা’ নিয়ে কেন কিছু বলছেন না তিনি? এই কৌতূহল জোরালো হচ্ছে যখন, জয়রাম মাইক এগিয়ে দেন কানহাইয়ার দিকে। এর পর বিহারের কংগ্রেস নেতা কানহাইয়া মোদী সরকারের ‘অপশাসন’ নিয়ে বলতে শুরু করেন। তিনি প্রশ্ন তোলেন মোদী জমানার বেকারত্ব নিয়ে। কিন্তু রাহুলের গাড়ির কাচ ভাঙা নিয়ে কোনও বিবৃতি নেই? সাংবাদিকদের বারংবার প্রশ্নের মধ্যে জয়রাম ইন্ডিয়া নিয়ে বলা শুরু করেন। তিনি জানান, ‘ইন্ডিয়া’য় মতবিরোধ আছে এবং থাকবে। কিন্তু ইন্ডিয়া মজবুত। ইন্ডিয়া থেকে ইনসাফ বাদ দিলে ইনডিএ। আর ইন্ডিয়া তৈরি হয়েছে লোকসভা ভোটকে সামনে রেখে। অধীর যখন কার্যত তৃণমূলের মুণ্ডপাত করছেন, তখনও রমেশের গলায় ভিন্ন সুর। তিনি তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসা করেন। এমনকি, একই দিনে মালদহে রাহুলের কর্মসূচির সঙ্গে সঙ্গে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর পদযাত্রা এবং সভা করার মধ্যে কোনও সংঘাত দেখছেন না। কংগ্রেসনেতা বলেন, ‘‘উনি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর রাজ্যে মানুষ কেমন আছেন, তিনি তো সেটা সমীক্ষা করে দেখবেনই।’’ ইন্ডিয়া নিয়ে আরও একপ্রস্ত কথাবার্তা বলার পর রমেশ যেন বাধ্য হয়ে গাড়ি-প্রসঙ্গে মুখ খোলেন। তার পর তিনি যা বললেন, তার সঙ্গে অধীরের মন্তব্যের বৈপরীত্য স্পষ্ট। জয়রাম জানান, রাহুলের গাড়ির কাচ ভাঙার ঘটনায় কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে চিঠি দিয়েছেন। তাতে তিনি লিখেছেন, ‘‘কেউ হয়তো শয়তানি করতে পারেন। যাতে বাংলার সরকারের বদনাম হয়।’’ জয়রাম এ-ও বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেশের সম্মাননীয় নেত্রী। তিনি আগে কংগ্রেসে ছিলেন। আমরা মমতাজির কাছ থেকে প্রেরণা নিই।

এর মধ্যেই রাহুলের গাড়ির ঘটনা নিয়ে সমাজমাধ্যমে কলম ধরেন কংগ্রেসের অন্যতম মুখপাত্র সুপ্রিয়া শ্রীনতে। সেখানে তাঁর ‘ব্যাখ্যা’ সম্পূর্ণ ভিন্ন। এক্স হ্যান্ডলে সুপ্রিয়া লেখেন, ‘‘মিথ্যা খবরের ব্যাখ্যা দরকার। রাহুলজির সঙ্গে দেখা করতে প্রচুর মানুষ এসেছিল। হঠাৎ একজন মহিলা তাঁর (রাহুলের) সঙ্গে দেখা করতে এগিয়ে এলে গাড়িটি হঠাৎই থামাতে হয়। নিরাপত্তা বলয়ে ব্যবহৃত দড়ির কারণে গাড়ির পিছনের কাচ ভেঙে যায়। রাহুলজি নিরলস ভাবে ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই করছেন এবং এই দেশ শুধু তাঁর পাশেই নয়, তাঁকে নিরাপদও রাখবে।’’

কংগ্রেসনেতার গাড়িতে হামলা হয়েছে না কি সেটা দুর্ঘটনা, তা নিয়ে এখনও একমত নয় কংগ্রেস। এর মধ্যেই বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকাশ্য সভা থেকে রাহুলের গাড়ি প্রসঙ্গে মন্তব্য করেছেন। তিনি জানান, রাহুলের গাড়ির কাচ ভেঙেছে বিহারে। ওই অবস্থায় গাড়িটি বাংলায় ঢুকেছে। তাঁর সংযোজন, ‘‘বিহারে সবে নীতীশ কুমারের দল বিজেপির দিকে ঝুঁকছে। এক হচ্ছে। ওদের রাগ আছে। তাই এ সব ঘটতে পারে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rahul Gandhi Congress TMC Mamata Banerjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE