Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

স্ত্রী আর সন্তান খুনে অভিযুক্ত কনস্টেবল

শনিবার সকালে চুঁচুড়ার রবীন্দ্রনগরের বিস্তারিক পাড়ার বাসিন্দা তনু রায় (৩২) এবং তাঁর ছোট মেয়ে বর্ষার (৬) দেহ এ ভাবে ঘরের মধ্যে পড়ে থাকতে দেখে শিউরে উঠেছিলেন পড়শিরা।

প্রভাত রায়

প্রভাত রায়

নিজস্ব সংবাদদাতা
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০১৭ ০৩:৪৫
Share: Save:

খাটের একপাশে পড়ে একরত্তি শিশুটির দেহ। সারা গায়ে সিগারেটের ছ্যাঁকার দাগ। হাত-পায়ে জমাট বাঁধা রক্ত। পাশেই পড়ে তাঁর মায়ের দেহও। দু’জনেরই মুখে গ্যাঁজলা, রক্ত। ঘরের দরজা ভেজানো। জানলা বন্ধ।

শনিবার সকালে চুঁচুড়ার রবীন্দ্রনগরের বিস্তারিক পাড়ার বাসিন্দা তনু রায় (৩২) এবং তাঁর ছোট মেয়ে বর্ষার (৬) দেহ এ ভাবে ঘরের মধ্যে পড়ে থাকতে দেখে শিউরে উঠেছিলেন পড়শিরা। নিজের বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক নিয়ে টানাপড়েনের জেরেই এই জোড়া খুনের অভিযোগ উঠেছে তনুর স্বামী, পুলিশ কনস্টেবল প্রভাত রায়ের বিরুদ্ধে। তবে, প্রভাতকে পুলিশ ধরতে পারেনি।

প্রভাত কোন থানায় কর্মরত, তা-ও নিশ্চিত ভাবে জানা যায়নি। পাশেই তাঁর ভাই ও বোনের বাড়ি। তাঁদের সঙ্গে প্রভাতের সম্পর্ক ছিল না। পাড়াতেও তিনি বিশেষ মিশতেন না। কর্মস্থল থেকে মাঝেমধ্যে বাড়ি আসতেন। যেমন এসেছিলেন শুক্রবার। ফলে, প্রভাতের কর্মস্থল নিয়ে কেউ দিশা দেখাতে পারেননি।

তদন্তকারীদের অনুমান, তনু এবং তাঁর মেয়েকে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে। খুনের আগে শিশুটিকে সিগারেটের ছ্যাঁকা দিয়ে যন্ত্রণা দেওয়া হয়েছে। চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার পীযূষ পাণ্ডে বলেন, ‘‘সব দিক খতিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অভিযুক্তের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে। তিনি কোন থানায় কর্মরত, জানার চেষ্টা চলছে।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বছর পনেরো আগে তনু-প্রভাতের বিয়ে হয়। তনুর বাপেরবাড়ি ভদ্রেশ্বরে। দম্পতির দুই মেয়ে। বড় মেয়ে, বছর নয়েকের অদিতি কয়েক মাস ধরে ওই পাড়াতেই পিসির কাছে থাকে। বছর সাতেক আগে প্রভাত পুলিশে চাকরি পান। তার পর থেকে বেশির ভাগ সময় কর্মস্থলেই থাকতেন। বাড়ি ফিরে তিনি প্রায়ই স্ত্রী-মেয়েদের মারধর করতেন বলে অভিযোগ। বছর খানেক আগে প্রভাতের সঙ্গে ভদ্রেশ্বরের এক মহিলার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ নিয়ে পরিবারে অশান্তি চলছিল। প্রভাত অত্যাচারের মাত্রা বাড়িয়ে দেন বলে অভিযোগ। সেই কারণে কয়েক মাস আগে প্রভাতের বোন অদিতিকে নিজের কাছে নিয়ে গিয়ে রাখেন।

শুক্রবার রাতে প্রভাতকে বাড়িতে দেখেছেন এলাকার অনেকেই। তাঁদের দাবি, সন্ধ্যায় এক মহিলাকেও প্রভাতের সঙ্গে ওই বাড়িতে দেখা গিয়েছে। ওই মহিলাই প্রভাতের প্রেমিকা বলে মনে করছেন পড়শিরা। ওই পাড়াতেই থাকেন প্রভাতের ভাই সুভাষবাবু। ভাইয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে তিনি বিশেষ কিছু বলতে চাননি। নিহত তনুর দাদা প্রদীপ ব্যাপারীর অভিযোগ, ‘‘প্রথম দিকে বাপেরবাড়ি থেকে টাকা আনার জন্য প্রভাত বোনকে মারধর করত। প্রভাত বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ায় বোন আপত্তি করেছিল। তাতে অত্যাচারের মাত্রা বাড়ে। মেয়েদেরও রেয়াত করত না ও। সংসারে খরচ পাঠানোও বন্ধ করে দিয়েছিল। এ বার খুনই করে ফেলল।’’

প্রদীপবাবুই থানায় প্রভাতের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। এ দিন দেহ দু’টি উদ্ধার করতে গিয়ে পুলিশ প্রথমে বাধা পায়। স্থানীয়েরা অবিলম্বে প্রভাতকে গ্রেফতারের দাবি তোলেন। দেহ দু’টি ময়নাতদন্তের জন্য চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে পাঠানো হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE