Advertisement
E-Paper

পুলিশকে ফাঁসানোর ছক! ‘মুকুল-কৈলাসের’ কথোপকথনের টেপ ভাইরাল

সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া একটি অডিয়ো ক্লিপ নিয়ে আলো়ড়ন পড়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। সেই অডিয়ো ক্লিপ একটি টেলিফোন-সংলাপের। এক জনের কণ্ঠস্বর বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা পশ্চিমবঙ্গে দলের পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়র সঙ্গে আপাত ভাবে মিলে যায়। একই ভাবে অন্য জনের গলা শুনে মনে হয়, সেটি মুকুল রায়ের।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০১৮ ০৩:৪৫
মুকুল রায় এবং কৈলাস বিজয়বর্গীয়। ফাইল চিত্র।

মুকুল রায় এবং কৈলাস বিজয়বর্গীয়। ফাইল চিত্র।

সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া একটি অডিয়ো ক্লিপ নিয়ে আলো়ড়ন পড়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। সেই অডিয়ো ক্লিপ একটি টেলিফোন-সংলাপের। এক জনের কণ্ঠস্বর বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা পশ্চিমবঙ্গে দলের পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়র সঙ্গে আপাত ভাবে মিলে যায়। একই ভাবে অন্য জনের গলা শুনে মনে হয়, সেটি মুকুল রায়ের।

আনন্দবাজার পত্রিকা অবশ্য ওই ক্লিপের সত্যতা যাচাই করেনি। তবে মুকুলবাবু মেনে নিয়েছেন, এটা তাঁর সঙ্গে কৈলাসেরই কথোপকথন। তাঁর অভিযোগ, তাঁর ফোনে আড়ি পাতা হচ্ছে এবং এ নিয়ে তিনি ফের আদালতের দ্বারস্থ হবেন।

মিনিট সাতেকের টেলিফোন আলাপে আপাত ভাবে বোঝা যায়, ফোন করেছিলেন কৈলাস। তিনি মুকুলবাবুকে ‘দাদা’ বলে সম্বোধন করে কথা শুরু করেন। কথোপকথনে জানা যায়, মুকুলবাবু তৃণমূলের এক সাংসদকে ‘ভাঙিয়ে’ আনার চেষ্টা করছেন। পাশাপাশি, সিবিআইকে ব্যবহার করে রাজ্যের চার আইপিএস অফিসারকে ‘ভয়’ দেখানোর প্রস্তাবও কৈলাসকে দিয়েছেন মুকুলবাবু।

কথাবার্তার শুরু মতুয়া সমাজের এক মহিলা সাংসদের বিষয়ে কৈলাসের প্রশ্ন নিয়ে। মুকুলবাবু যথেষ্ট দুর্বল হিন্দিতে আগাগোড়া কথা বলে যান। কৈলাসকে তিনি জানান, ‘‘ওই মহিলা মমতা ঠাকুর (তৃণমূল)। তাঁকে ধরার চেষ্টা চলছে।’’ ওই পরিবারেরই শান্তনু ঠাকুর ও সুব্রত ঠাকুর সম্পর্কেও দু’জনের কথা হয়। কৈলাস জানতে চান, শান্তনু মমতার ছেলে কি না। তখন মুকুলবাবু বলেন, ‘‘মমতার প্রয়াত স্বামীর ভাই মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুরের ছোট ছেলে শান্তনু। সে অস্ট্রেলিয়ায় পড়ত। ওঁর সঙ্গে মমতার যোগাযোগ নেই। সম্পর্ক তিক্ত।’’ কৈলাস জানান, শান্তনু তাঁর সঙ্গে দেখা করে বিজেপিতে কাজ করতে চেয়েছেন। কৈলাসের কথায়, ‘‘ও একটা গাড়ি চাইছে। ঘুরে ঘুরে সম্মেলন করতে চাইছে। আমার ছেলেটিকে খুব স্পার্কিং লেগেছে।’’ শুনে মুকুল বলেন, তাঁকে দলে নিলে ভালই হবে। শান্তনুকে নিয়ে পরের পদক্ষেপ কী হবে, সে বিষয়ে মুকুলবাবুর পরামর্শ চান কৈলাস।

শুনুন কী বললেন

মুকুলবাবু বলেন, ‘‘ও কাজ করতে চাইলে সব সাহায্য পাবে। ওকে বলুন, মুকুলদার সঙ্গে কথা বলতে।’’ শান্তনুর সঙ্গে শীঘ্রই কৈলাস দেখা করছেন বলে মুকুলবাবুকে জানান। কথা প্রসঙ্গে মুকুলবাবু কৈলাসকে জানান, শান্তনুর দাদা সুব্রত ২০১৬-র বনগাঁ লোকসভা উপনির্বাচনে বিজেপির প্রার্থী ছিলেন। সুব্রত গরু পাচারে যুক্ত ছিলেন।

শান্তনুর কথা বলার পরেই মুকুলবাবু কৈলাসকে বলেন, শঙ্কর ঠাকুরের প্রভাব মতুয়া সমাজে অনেক বেশি। শঙ্করকে তিনি কৈলাসের সঙ্গে দেখা করিয়েছেন বলেও দাবি করেন মুকুলবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘মঞ্জুলকৃষ্ণের স্ত্রী শঙ্করের মা। তিনিও স্পার্কিং লেডি। ফাইটিং লেডি।’’

কৈলাস জানতে চান, ‘‘অধ্যক্ষজির (অমিত শাহ) কাছে যাচ্ছি। কী কী বলতে হবে?’’ মুকুলবাবুর হিন্দি বয়ান অনুযায়ী, ‘‘চার আইপিএস কো সিবিআই থোড়া নজর ডালনা হোগা। কোই ধ্যান দেঙ্গে তো আইপিএস ডর পা যায়েঙ্গে।’’ আয়করের ডিরেক্টর অব ইনভেস্টিগেশন ও অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর পদে ‘বাছাই’ দুই অফিসারকে নিয়োগেরও প্রস্তাব দেন মুকুলবাবু। কৈলাস তাঁকে দু’জনের নাম পাঠাতে বলেন। তখন সঞ্জয় সিংহ বলে এক জনের নাম উল্লেখ করেন মুকুলবাবু। এর পরেই কৈলাস বলেন, দুই পদের দু’টি প্রস্তাবিত নাম ও এখন তাঁরা কোন পদে আছেন, তা জানিয়ে মুকুলবাবু যেন তাঁকে এসএমএস করে দেন।

এই টেলিফোন সংলাপ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘আমাদের দলের দুই নেতার কথোপকথন হতেই পারে। এতে অন্যায়ের কিছু নেই। যা অবৈধ, তা হল তাঁদের ফোনে আড়ি পাতা।’’ আর মুকুলবাবুর বক্তব্য, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে পুলিশরাজ চলছে। আদালতে গিয়ে আবার বলব, কী ভাবে আমার ফোনে আড়ি পাতা হচ্ছে। এর আগে ওরা মিথ্যে বলেছিল।’’ চার আইপিএস প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘যাঁদের বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্ত করছে, তাঁদের কথাই বলেছি। বলেছি, সিবিআই-এর কাজে একটু গতি দরকার।’’

তৃণমূল এই টেলিফোন-সংলাপ প্রকাশ্যে আসার পিছনে অন্য ‘চক্রান্ত’ দেখছে। দলের এক শীর্ষ নেতার মন্তব্য, ‘‘বিশ্বাসঘাতকদের স্বভাব বদলায় না। কে এই টেলিফোন-সংলাপ ফাঁস করল, তা বিজেপি এ বার তদন্ত করে দেখুক।’’

Kailash Vijayvargiya Mukul Roy BJP TMC মুকুল রায় কৈলাস বিজয়বর্গীয় Social Media Telephonic Conversation Audio Clip
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy