Advertisement
১৬ জুন ২০২৪

ডাক্তারির বাড়তি আসনেও বিতর্কের কাঁটা

চিকিৎসকের অভাব মেটাতে আসন বাড়ুক ডাক্তারিতে, সকলেই চায়। কিন্তু আসন বাড়ানো সত্ত্বেও রয়ে গিয়েছে ক্ষোভ-বিতর্কের গেরো।যারপরনাই ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন বিধানচন্দ্র রায় শিশু হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০১৭ ০৩:২৫
Share: Save:

চিকিৎসকের অভাব মেটাতে আসন বাড়ুক ডাক্তারিতে, সকলেই চায়। কিন্তু আসন বাড়ানো সত্ত্বেও রয়ে গিয়েছে ক্ষোভ-বিতর্কের গেরো।

যারপরনাই ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন বিধানচন্দ্র রায় শিশু হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ। কারণ, তাঁদের প্রতিষ্ঠানে স্নাতকোত্তরে একটিও আসন বাড়েনি। তাঁরা চেয়েছিলেন, অন্তত পাঁচটি আসন বাড়ুক। কিন্তু তা হয়নি। কেননা সেখানে পর্যাপ্ত শিক্ষক-চিকিৎসকই যে নেই!

বাড়তি আসন না-পেয়ে ক্ষুব্ধ বি সি রায় হাসপাতাল। আবার নতুন আসন পেয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করছে অনেক মেডিক্যাল কলেজ। কারণ, যে-বিভাগে আসন বাড়ানো দরকার, তার বদলে সেটা বেড়েছে অন্য বিভাগে। প্রয়োজন আর বণ্টনে সমতার অভাব ক্ষুব্ধ করে তুলেছে বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজকে।

বিশেষজ্ঞের আকাল মেটাতে কেন্দ্র বিভিন্ন রাজ্যের মেডিক্যাল কলেজে স্নাতকোত্তর (এমডি, এমএস) শাখায় আসন বাড়িয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে ন’টি মেডিক্যালে বেড়েছে ১৮৪টি আসন। কিন্তু যে-কলেজে যে-শাখায় আসন বাড়ানো দরকার, সেখানে তা বাড়েনি বলে অভিযোগ।

অধিকাংশ মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষই এর জন্য দোষ দিচ্ছেন রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের অযৌক্তিক ও অদূরদর্শী শিক্ষক-চিকিৎসক বণ্টন নীতিকে। মেডিক্যাল কলেজের কর্তাদের অভিযোগ, কখনও রাজনৈতিক নেতাদের সুপারিশ, কখনও ব্যক্তিগত স্তরে ধরাধরিতে মেডিক্যাল কলেজগুলিতে শিক্ষক বণ্টনে সামঞ্জস্য নষ্ট হচ্ছে। অনেক সময় স্নাতক স্তরে মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া বা এমসিআইয়ের পরিদর্শনের জন্য শিক্ষক-চিকিৎসকদের অন্যত্র তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, কিন্তু পরে আর ফিরিয়ে আনা হচ্ছে না। ফলে যেখানে যে-বিষয়ের যত শিক্ষক থাকার কথা, সেটা থাকছে না। এবং কেন্দ্রও সেই কারণে সেখানে আসন বাড়াচ্ছে না।

শিশু চিকিৎসায় রাজ্যের একমাত্র ‘রেফারেল’ হাসপাতাল বি সি রায়ে পেডিয়াট্রিক্সে স্নাতকোত্তর স্তরে আসন মাত্র চারটি। আরও পাঁচটি আসন চেয়েছিল তারা। একটিও পায়নি। ক্ষুব্ধ কর্তৃপক্ষ বলছেন, ‘‘স্নাতক স্তরের পরিদর্শনের সময় আমাদের শিক্ষক-চিকিৎসকদের নীলরতন, ন্যাশনাল, মেদিনীপুর মেডিক্যালে পাঠানো হচ্ছে। তাঁদের আর ফেরত পাচ্ছি না।’’

আরও পড়ুন: প্রসূতির বিরল রোগ, বাঁচিয়ে নজির জেলার

চিত্তরঞ্জন সেবা সদনে স্ত্রীরোগ বিভাগে আটটি আসন বাড়লেও পেডিয়াট্রিক্সে বেড়েছে মাত্র দু’টি। অথচ তাদের পিকু (পেডিয়াট্রিক কেয়ার ইউনিট), নিকু (নিওনেটাল কেয়ার ইউনিট) রয়েছে। পেডিয়াট্রিক্সে অন্তত আরও ছ’টি আসন দরকার। সেখানকার কর্তৃপক্ষেরও অভিযোগ, ‘‘শিক্ষক চেয়ে হন্যে হয়ে স্বাস্থ্য ভবনে আবেদন জানিয়েও লাভ হয়নি।’’

অ্যানেস্থেশিয়া ছাড়া আর কোনও বিভাগে আসন বাড়েনি উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে। এসএসকেএমের মতো সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে স্ত্রীরোগ, সার্জারি, অ্যানেস্থেশিয়া ও অর্থোপেডিক্সে যথেষ্ট শিক্ষক নেই বলে আসন বাড়েনি। নীলরতনে সার্জারি-স্ত্রীরোগে মাত্র ১০টি করে এবং মেডিসিনে ১২টি আসন

রয়েছে। অথচ আসন বেড়েছে রেডিও ডায়াগনসিস, রেডিওথেরাপি, অপথালমোলজির মতো বিভাগে।

সার্জারি, স্ত্রীরোগ, পেডিয়াট্রিক্সে আসন বাড়ানোর জন্য দিল্লিতে চিঠি লিখছে এনআরএস।

আসন বণ্টনে অসামঞ্জস্যের জন্য চিকিৎসক মহলের একাংশ অনুযোগ করছেন কেন্দ্রের বিরুদ্ধেও। কোথায় কোন বিষয়ে বাড়তি আসন দরকার, তা খতিয়ে না-দেখে আসন বাড়ানো হবেই বা কেন, প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Medical Doctor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE