Advertisement
E-Paper

‘ভোট হাজার দুয়ারি’, বাড়ল জোট জল্পনা

কংগ্রেসের সঙ্গে নির্বাচনী বোঝাপড়া নিয়ে গৌতম দেবের মতের সমর্থক সংখ্যা ক্রমশই বাড়ছে সিপিএমে। যদিও প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন না দলের কোনও শীর্ষ নেতাই। কারণ, দলের সদ্যসমাপ্ত পার্টি কংগ্রেসেই যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, কংগ্রেসের সঙ্গে প্রাক্ নির্বাচনী জোট করবে না সিপিএম।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০১৫ ০৩:৪৭
—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

কংগ্রেসের সঙ্গে নির্বাচনী বোঝাপড়া নিয়ে গৌতম দেবের মতের সমর্থক সংখ্যা ক্রমশই বাড়ছে সিপিএমে। যদিও প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন না দলের কোনও শীর্ষ নেতাই। কারণ, দলের সদ্যসমাপ্ত পার্টি কংগ্রেসেই যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, কংগ্রেসের সঙ্গে প্রাক্ নির্বাচনী জোট করবে না সিপিএম।

কিন্তু সেই সিদ্ধান্তের উল্লেখ করেও দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শ্যামল চক্রবর্তী শনিবার তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে মন্তব্য করেছেন, ‘‘নির্বাচন হাজার দুয়ারির মতো। হাজারটা পথ খোলা আছে।’’ গৌতম দেবের মতকে সমর্থন করেছেন লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। সোমনাথবাবু এখন আর সিপিএমের সদস্য না হলেও আলিমুদ্দিনের সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্ক অজানা নয়। পরমাণু চুক্তি নিয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে দলের বিবাদের সময় সোমনাথবাবু যে অবস্থান নিয়েছিলেন, সিপিএমের বঙ্গ ব্রিগেড তার সমর্থক। তাঁর মতামত এখনও গুরুত্ব পায় দলের অন্দরে। ফলে ‘‘পশ্চিমবঙ্গে গণতন্ত্র বিপন্ন। এই পরিস্থিতিতে শাসক দলের বিরুদ্ধে যদি একাধিক দল জোট করে ভালই হয়’’— সোমনাথবাবুর এই মন্তব্য জানার পরে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা গতি পেয়েছে সিপিএম মহলে।

প্রকাশ্য অবশ্য দলের লাইনই আওড়াচ্ছেন সিপিএম নেতারা। সিপিএমের দলীয় মুখপত্রে এ দিন কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের প্রসঙ্গে গৌতমের বক্তব্য ছাপাই হয়নি। দলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, ‘‘গৌতমের বক্তব্য দলের মত নয়। তাই ছাপা হয়নি।’’ দলের পলিটব্যুরো সদস্য বিমান বসু শনিবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘‘এ ব্যাপারে কে কী বলেছেন, তা আমি বলতে পারব না। গৌতম দেব বলেছেন, তাঁকেই জিজ্ঞাসা করুন। পার্টি কংগ্রেসে দু’টি পুস্তিকা প্রকাশিত হয়েছে। তাতে এই বিষয়টির উল্লেখ আছে। সেই পুস্তিকা দু’টি পড়ে নিলে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে।’’

কিন্তু সিপিএমের একাংশই মনে করছে, পার্টি কংগ্রেসে যে সিদ্ধান্তই হোক, ১৯৬৭ সালে কংগ্রেসকে হারাতে যে ভাবে বাংলা কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করা হয়েছিল, এ বার তৃণমূলকে হারাতেও সেই ভাবেই কংগ্রেসের সঙ্গে জোট গড়া উচিত। সেই নির্বাচনে সিপিএম এবং বাংলা কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে ক‌ংগ্রেস–বিরোধী অন্য দলগুলি কিন্তু প্রথমে এক মঞ্চে আসতে পারেনি। তারা আলাদা দু’টো ফ্রন্ট তৈরি করে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে লড়াই করে। ভোটের পরে সব ক’টি অ-কংগ্রেসি দল একত্রিত হয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠন করে এবং বাংলায় প্রথম অ-কংগ্রেসি সরকার তৈরি হয়।

এ বারও এক জোট হয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়লে সাফল্যের আশা দেখার কারণ অঙ্কের হিসেব। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল ভোট পেয়েছিল ৩৯.০২ শতাংশ। বামেরা ২৯.০৬ শতাংশ। কংগ্রেসের ঝুলিতে ছিল প্রায় দশ শতাংশ ভোট। বিরোধী শিবিরের রাজনীতিকদের মতে, এর পর পুরভোটে দেখা গিয়েছে বামেদের ভোটের অবক্ষয় বন্ধ হয়েছে। কংগ্রেসও তার তীব্র দুর্দিনেও মোটের উপর দশ শতাংশ ভোট ধরে রাখে। ফলে এই দুই ভোট এক হলে শাসক দলের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলা সম্ভব। তৃণমূলের শীর্ষ নেতাদেরও অনেকে একান্তে স্বীকার করছেন, শেষ পর্যন্ত কংগ্রেস-সিপিএম হাত মেলালে তাঁদের পক্ষে চিন্তার কারণ হবে।

বস্তুত, সিপিএমের একটি অংশ তৃণমূলকে সরাতে বেশ কিছু দিন ধরেই কংগ্রেসের হাত ধরার পক্ষপাতী। গৌতমবাবু তা প্রকাশ্যে এনে বিতর্ক সৃষ্টি করায় অনেকেই আড়ালে তাঁকে সমর্থন করছেন। দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর দুই সদস্য সুজন চক্রবর্তী এবং অশোক ভট্টাচার্যও অনেকাংশেই এই মতের পক্ষে। যে কারণে প্রতারিত আমানতকারীদের টাকা ফেরত বা রাজ্যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা দাবির আন্দোলনে বার বার কংগ্রেস নেতাদের পাশে সুজনবাবুকে দেখা গিয়েছে। আর শিলিগুড়ি-মডেল প্রয়োগ করে ‘তৃণমূলের ভোট-লুঠ’ রুখে দেওয়ার পরে অশোকবাবু দলীয়

স্তরে বার বার কংগ্রেসের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার উপরে জোর দিচ্ছেন। বিষয়টি অবশ্য আলোচনার প্রাথমিক স্তরে। বস্তুত, আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্যের বাড়িতে তাঁর সঙ্গে কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নানের আলোচনার পরেই বিষয়টি প্রকাশ্যে আনার সিদ্ধান্ত নেন গৌতমবাবু।

কিন্তু সিপিএম যে হেতু প্রকাশ্যে কিছু বলছে না, তাই সরকারি ভাবে মুখে কুলুপ কংগ্রেসেরও। অন্য দিকে প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, ‘‘এটা কংগ্রেসের মত নয়।’’ কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে অধীরবাবু বলেন, ‘‘সিপিএমে যাঁরা জোটের কথা বলছেন, তাঁরা ব্যক্তিগত মত দিয়েছেন। কংগ্রেসে যাঁরা বলছেন, তাঁরাও ব্যক্তিগত মত দিচ্ছেন। কিন্তু কোনও দলের পক্ষ থেকেই এ ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি।’’

দলীয় স্তরে অধীরবাবুর বিভিন্ন সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করলেও বিধায়ক মানস ভুঁইয়া এ ব্যাপারে একই সুরে কথা বলেছেন। তাঁর মন্তব্য, ‘‘এমন কোনও প্রস্তাব সিপিএমের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে বলে জানা নেই। দু’দলের মধ্যেও কোনও কথা হয়েছে বলেও জানা নেই।’’ তিনি যে এই জোটের পক্ষে নেই, তা জানিয়ে মানসবাবু বলেন, ‘‘বামফ্রন্টের ৩৪ বছরে ১৭ হাজার কংগ্রেস কর্মী সিপিএমের হাতে খুন হয়েছে। আমাদের বহু মা-বোনেদের ইজ্জত গিয়েছে।’’ কংগ্রেসের অন্দরমহল অবশ্য বলছে, প্রকাশ্যে যা-ই বলা হোক, ভিতরে ভিতরে দলের অনেক নেতাই সিপিএমের হাত ধরার পক্ষপাতী। ফলে আলিমুদ্দিনের মতো জোট নিয়ে জোর জল্পনা চলছে বিধান ভবনের অন্দরেও।

জল্পনা চলছে তৃণমূল এবং বিজেপিতেও। দুই দলের বহু নেতাই এ দিন একান্তে জোট সম্পর্কে খোঁজ নিয়েছেন। জানতে চেয়েছেন, এমন সম্ভাবনা আছে কি না। কথা আদৌ এগিয়েছে কি!

প্রকাশ্যে অবশ্য তাঁরা জোট-ভাবনাকে কটাক্ষই করছেন। রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র রীতেশ তিওয়ারি এ দিন বলেন, ‘‘সিপিএম করার জন্য যাঁদের মা-বোনেরা ধর্ষিত হয়েছেন, তাঁরা কি এই জোট মেনে নেবেন?’’ রীতেশবাবুর মতে, ‘‘দুই দলেরই পায়ের তলায় মাটি সরে গিয়েছে বলে তাঁরা এখন এ কথা বলছেন।’’ আর তৃণমূল নেতা তথা খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের মন্তব্য, ‘‘গৌতম দেব প্র্যাকটিক্যাল লোক। তিনি ঠিক কথাই বলেছেন। ৮০ বছরের মানুষের কোমর ভেঙে গেলে তাকে বিছানায় শুইয়ে দিতে হয়। সিপিএমেরও কোমর ভেঙেছে! তাই কংগ্রেসের হাত ধরার কথা বলছেন!’’ কংগ্রেসকে ‘ক্ষয়িষ্ণু দল’ বলে কটাক্ষ করে তাঁর মন্তব্য, ‘‘তিন মাস পর কংগ্রেসেরও কঙ্কাল দেখতে পাবেন!’’

alliance issue Controversy Goutam Deb CPM
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy