Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
COVID-19

৭৫ শতাংশ আক্রান্তই বাড়িতে, বাড়ছে বিপদ

স্বাস্থ্য দফতরের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, রাজ্যে অ্যাক্টিভ কেসের মধ্যে ৭৫ শতাংশ আক্রান্তই হোম আইসোলেশনে রয়েছেন।

ছবি: এএফপি।

ছবি: এএফপি।

সৌরভ দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০২০ ০২:৩১
Share: Save:

ভাবনায় গলদ ছিল তা নয়। কিন্তু আট মাস পরে সেই ভাবনার উল্টো ফল এখন ভাবাচ্ছে রাজ্য প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদের। সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের উপরে করোনা রোগীদের চাপ কমাতে একসময় ‘হোম আইসোলেশনে’র উপরে জোর দিয়েছিল রাজ্য সরকার। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, মৃত্যুহার আটকানোর ক্ষেত্রে ‘হোম আইসোলেশনে’ থাকা সেই রোগীরাই এখন উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

স্বাস্থ্য দফতরের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, রাজ্যে অ্যাক্টিভ কেসের মধ্যে ৭৫ শতাংশ আক্রান্তই হোম আইসোলেশনে রয়েছেন। উৎসবের মরসুমে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধির মধ্যে সেই পরিসংখ্যান ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে বলে খবর। গত ১২ অক্টোবর বঙ্গে অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যা ছিল ৩০৬০৪ জন। তার মধ্যে হোম আইসোলেশনে থাকা কোভিড রোগীর সংখ্যা ২২৩৬৬ জন। মঙ্গলবারের পরিসংখ্যান বলছে, রাজ্যে অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩৫১৭০ জন। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে হোম আইসোলেশনে রোগীর সংখ্যা। স্বাস্থ্য দফতরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০ অক্টোবর পর্যন্ত হোম আইসোলেশনে রয়েছেন ২৬৮২৪ জন। এখানেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিরা।

বুধবার স্বাস্থ্য দফতর কর্তৃক প্রকাশিত বুলেটিন অনুযায়ী, এদিন চব্বিশ ঘণ্টায় ৬৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। রাজ্যে এখন মৃত্যুর হার ১.৮৭ শতাংশ। জেলাস্তরে আক্রান্ত এবং মৃত্যুর পরিসংখ্যানের চুলচেরা বিশ্লেষণে প্রতি সপ্তাহে একটি অভ্যন্তরীণ রিপোর্ট প্রকাশ করে স্বাস্থ্য ভবন। সেই রিপোর্ট থেকে প্রাপ্ত সর্বশেষ (৮-১৪ অক্টোবর) তথ্য অনুযায়ী রাজ্যের আটটি জেলায় মৃত্যুর হার ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে।

আরও পড়ুন: রাজ্যে ফের দৈনিক সংক্রমণ ৪ হাজার পেরোল, মৃত ৬৪

আরও পড়ুন: করোনায় আক্রান্ত প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শাহনওয়াজ হুসেন​

রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তা জানান, কোভিড হাসপাতালে ভর্তির তিন-চারদিনের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে এমন রোগীর সংখ্যা ৩০ শতাংশ। মৃত ব্যক্তিদের সময়ে হাসপাতালে আনা হলে অনেককে বাঁচানো সম্ভব হত। কিন্তু তা না করে যে রোগীকে হাসপাতালে বা সেফ হোমে রাখা প্রয়োজন তাঁদেরও বাড়িতে রেখে বিপদ ডেকে আনছেন রোগীর আত্মীয়েরা। কোভিড চিকিৎসার পরিকাঠামো নেই এমন নার্সিংহোমে করোনা রোগীকে ফেলে রাখার কারণেও সমস্যা হচ্ছে। ওই কর্তা জানান, শুরুর দিকে হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন না থাকলেও আক্রান্তদের ভর্তির জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছিল। সকলে হাসপাতালে ভর্তি হতে চাইলে শয্যা দেওয়া সম্ভব ছিল না। সে জন্যই হোম আইসোলেশনে জোর দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তা বলে আক্রান্ত গুরুতর অসুস্থ হলে বা বাড়িতে রাখার মতো পরিকাঠামো না থাকলেও রোগীকে ঘরে রেখে দিতে হবে এ কথা কখনই বলা হয়নি। এখন সেটাই হচ্ছে। সংক্রমণের সংখ্যা বৃদ্ধির সেটিও একটি কারণ বলে মনে করেন তিনি।

রাজ্য প্রশাসনের কর্তা কেন এ কথা বলছেন তা কলকাতা এবং উত্তর ২৪ পরগনায় অবস্থিত সেফ হোম সংক্রান্ত পরিসংখ্যান থেকেই স্পষ্ট। ওই দুই জেলায় প্রতিদিনের আক্রান্তের সংখ্যা ৮০০ ছাড়িয়েছে। অথচ গত ২০ অক্টোবরের পরিসংখ্যান বলছে, রাজারহাটে দেড়শো শয্যার সেফ হোমে মাত্র ১০ জন রোগী রয়েছেন। কলকাতায় সায়েন্স সিটির কাছে অবস্থিত সেফ হোমে শয্যা সংখ্যা ২৪০। তার মধ্যে ২১৪টি শয্যাই খালি। হাওড়ার বালটিকুরিতে ৪০০ শয্যার মধ্যে একটি বেডেও রোগী নেই। ৮০০ শয্যার হজ হাউসে রোগী রয়েছেন মাত্র ১১ জন। একমাত্র ব্যতিক্রম আনন্দপুরে অবস্থিত সেফ হোমের পরিসংখ্যান। সেখানে ৩৮৫টি বেডের মধ্যে ২১৫টি বেডে রোগী আছেন।

(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।

• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE