Advertisement
১৯ মে ২০২৪
সবং হত্যা মামলা

আদালতে ভর্ৎসিত তদন্তকারী অফিসার

দিন কয়েক আগেই তাঁকে সতর্ক করেছিলেন মেদিনীপুরের সিজেএম মঞ্জুশ্রী মণ্ডল। বুঝিয়ে দিয়েছিলেন সবংয়ে ছাত্র খুনের মামলায় তদন্তকারী অফিসারের ভূমিকায় আদৌ সন্তুষ্ট নয় আদালত।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০০:৩৬
Share: Save:

দিন কয়েক আগেই তাঁকে সতর্ক করেছিলেন মেদিনীপুরের সিজেএম মঞ্জুশ্রী মণ্ডল। বুঝিয়ে দিয়েছিলেন সবংয়ে ছাত্র খুনের মামলায় তদন্তকারী অফিসারের ভূমিকায় আদৌ সন্তুষ্ট নয় আদালত। এ বার ভারপ্রাপ্ত সিজেএম শুভ্রসোম ঘোষাল কার্যত ভর্ত্‌সনাই করলেন সবং মামলার তদন্তকারী অফিসার বিশ্বজিত্‌ মণ্ডলকে। শনিবার অসম্পূর্ণ কেস ডায়েরি (সিডি) আদালতে জমা দেওয়ায় অসন্তুষ্ট হন বিচারক। তারপর বিশ্বজিৎবাবুর উদ্দেশে বলেন, ‘‘সব নথির ক্রমিক সংখ্যা নেই কেন? এ ভাবে অসম্পূর্ণ সিডি আদালতে জমা দেবেন না।’’ পুলিশ হেফাজতে থাকাকালীন ধৃতকে জিজ্ঞাসাবাদ করার নথি কেন কেস ডায়েরিতে নেই, তা-ও জানতে চান ভারপ্রাপ্ত সিজেএম। তদন্তকারী অফিসার সদুত্তর দিতে পারেননি।

দিন কয়েক আগেই এই মামলার তদন্তকারী অফিসার বিশ্বজিৎবাবুকে তাঁর দায়িত্ব মনে করিয়ে দিয়েছিলেন মেদিনীপুরের সিজেএম মঞ্জুশ্রী মণ্ডল। তাঁর মন্তব্য ছিল, ‘‘এখানে আইও-র (তদন্তকারী অফিসার) নামই ব্যাকফুটে চলে যাচ্ছে। ঊর্ধ্বতন পুলিশ অফিসারদের নাম সামনে চলে আসছে।” এ দিন ফের ওই তদন্তকারী অফিসারকে বিচারক ভর্ৎসনা করায় বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছে কংগ্রেস। শনিবার সবংয়ের কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়া বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী বলে দিয়েছেন। পুলিশ সুপার সেই মতো কাজ করছেন। এখানে আইও-র কোনও ভূমিকা নেই। পুলিশ সুপার যা বলছেন, উনি তাই করছেন।’’

সবং কলেজের ছাত্র পরিষদ (সিপি)পরিচালিত ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক সৌমেন গঙ্গোপাধ্যায়কে এই মামলায় গ্রেফতার করেছে পুলিশ। দু’দফায় ৮ দিন পুলিশ হেফাজতে থাকার পরে এ দিন ফের সৌমেনকে মেদিনীপুর সিজেএম আদালতে হাজির করা হয়। ধৃতের জামিনের আবেদন করেন আইনজীবী অলোক মণ্ডল এবং হরিসাধন ভট্টাচার্য। আদালতে অলোকবাবু বলেন, ‘‘ঘটনার পরে ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কলেজের অধ্যক্ষের কাছে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছিলেন সৌমেন। অধ্যক্ষ সেই অভিযোগপত্র সবং থানায় পাঠিয়ে দেন। তাই এফআইআর হিসেবে গণ্য হয়। নিশ্চয়ই অধ্যক্ষ ওই অভিযোগপত্রের বয়ানের সঙ্গে সহমত ছিলেন।’’ হরিসাধনবাবুর আবার বক্তব্য, “আদালতের নির্দেশ রয়েছে, আমার উপস্থিতিতে সৌমেনকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। অথচ আমার সামনে সৌমেনের কাছ থেকে যা জানা হয়েছে, আদালতে জমা দেওয়া কাগজপত্রে পুলিশ তার থেকে অন্য দাবি করছে।’’

এরপরই পুলিশ হেফাজতে থাকাকালীন ধৃতকে জিজ্ঞাসাবাদ সংক্রান্ত নথি দেখতে চান ভারপ্রাপ্ত সিজেএম। কেস ডায়েরি (সিডি) চেয়ে নেন। সিডি হাতে নিয়ে শুভ্রসোমবাবু দেখেন, সব নথির ক্রমিক নম্বর নেই। তখনই অসন্তুষ্ট হয়ে তদন্তকারী অফিসারের উদ্দেশে তাঁর প্রশ্ন, “জিজ্ঞাসাবাদের সময় রেজিস্ট্রার মেইন্টেন করা হয়েছে?” বিশ্বজিত্‌বাবু বলেন, ‘‘হয়েছে।’’ এরপর শুভ্রসোমবাবুর প্রশ্ন, “রেজিস্ট্রার কোথায়?’’ তদন্তকারী অফিসার বলে বসেন, ‘‘রেজিস্ট্রার কোতোয়ালি থানায় রয়েছে। ওঁকে তো কোতোয়ালি থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।” এ বার ভারপ্রাপ্ত সিজেএম জিজ্ঞাসা করেন, ‘‘রেজিস্ট্রার থানায় থাকে? আইও (তদন্তকারী অফিসার)-র কাছে থাকে না? জিজ্ঞাসাবাদের সময় যে রেজিস্ট্রার মেন্টেন করা হয়েছে, তার কোনও রিফ্লেকশন সিডিতে রয়েছে? দেখাতে পারবেন?” বিশ্বজিত্‌বাবুর জবাব, “পারব স্যার।’’ এরপর সিডি নিয়ে প্রয়োজনীয় নথি খুঁজতে বসেন তদন্তকারী অফিসার। অবশ্য প্রয়োজনীয় নথিটি পাননি। অন্য একটি নথি পেশ করেন। তা দেখে ভারপ্রাপ্ত সিজেএম বিরক্ত হন। বলেন, “যদি সিডিতে কোনও রিফ্লেকশন না থাকে, তাহলে লিখিত ভাবে জানিয়ে দেবেন যে রিফ্লেকশন নেই।’’

এ দিন আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে একটি আবেদন জমা দেন সৌমেন। তাঁর দাবি, পুলিশ তাঁকে ধরেছে এগরার পানিপারুল থেকে। তাঁর গ্রেফতারির নথিতে সাক্ষী হিসেবে সই রয়েছে রামপদ রাউতের। পুলিশের দাবি, খড়্গপুর লোকাল থানার আমবিবাটিটাকির বাসিন্দা রামপদ সৌমেনের মামা। কিন্তু সৌমেন ওই আবেদনে জানিয়েছেন, ওই নামে তাঁর কোনও মামা নেই। আদালত এ ব্যাপারে তদন্তকারী অফিসারের ব্যাখ্যা লিখিত ভাবে তলব করেছে। সরকারপক্ষের আইনজীবী দেবপ্রসাদ চন্দ্র এ দিন সৌমেনের জামিনের আবেদনের বিরোধিতা করেন। দু’পক্ষের বক্তব্য শুনে ভারপ্রাপ্ত সিজেএম সৌমেনকে ১৪ দিন জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Court investigation officer
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE