আদালতে সবং কাণ্ডে ধৃত অনুপম আদক।
সবংয়ে ছাত্র খুনের ঘটনায় এফআইআর-এ যাদের নাম নেই, তাদের ধরতে পুলিশ অতি-তত্পর। অথচ, এফআইআর-এ যাদের নাম রয়েছে, তাদের ব্যাপারে কেন পুলিশ চুপ। ফের এক সিপি কর্মীকে পুলিশ গ্রেফতার করায় বৃহস্পতিবার মেদিনীপুর সিজেএম মঞ্জুশ্রী মণ্ডলের এজলাসে মামলার শুনানি চলাকালীন এই প্রশ্ন তোলেন ধৃত সিপি কর্মীর আইনজীবী হরিসাধন ভট্টাচার্য।
বুধবার রাতে হাওড়ার লিলুয়া থেকে অনুপম আদক নামে ওই সিপি কর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশের দাবি, সে লিলুয়ায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে ছিল। গত মঙ্গলবার মেদিনীপুর সিজেএম আদালতে ন’জন সিপি কর্মীর নামে পরোয়ানা জারি করার আবেদন জানায় পুলিশ। ওই আবেদন মঞ্জুর হয়। ওই ন’জনেরই একজন অনুপম। সবংয়ের ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ কয়েকজন সিপি কর্মীকে নোটিস পাঠায়। তাঁদের মধ্যে অনুপমকেও নোটিস পাঠানো হয়। যদিও তিনি জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হাজির হননি। ধৃতের পাঁচদিনের পুিলশি হেফাজতের নির্দেশ হয়।
এ দিন ধৃতের জামিনের আবেদন জানিয়ে অভিযুক্তপক্ষের আইনজীবী হরিসাধন ভট্টাচার্য আদালতে বলেন, “পুলিশ এ ক্ষেত্রে অতি- তত্পর। মঙ্গলবার পরোয়ানা জারি হল। আর বুধবার ধরে বৃহস্পতিবারই অনুপমকে আদালতে হাজির করল। অথচ, ওর নাম এফআইআর-এ নেই। যে ছ’জনের নাম (সকলেই টিএমসিপি কর্মী) এফআইআর-এ রয়েছে, তাদের মধ্যে তিনজন গ্রেফতার হয়েছে। বাকি তিনজনের ব্যাপারে আশ্চর্যজনক ভাবে পুলিশ চুপ। কেন?’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘ওদের কি নোটিস পাঠিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়েছে? পরোয়ানা জারির আবেদন জানানো হয়েছে? এ ব্যাপারে তদন্তকারী অফিসার কি রিপোর্ট দিচ্ছেন?” হরিসাধনবাবুর দাবি, “পুলিশি তদন্তের বিশ্বাসযোগ্যতা নেই। রাজনৈতিক উদ্দেশে এই মামলার অভিমুখ ঘুরিয়ে দিতে পুলিশ উঠেপড়ে লেগেছে। বেছে বেছে সিপি কর্মীদেরই গ্রেফতার করা হচ্ছে।” সরকারপক্ষের আইনজীবী দীপক সাহা অবশ্য আদালতে জানান, নির্দিষ্ট অভিযোগেই এই গ্রেফতার। তদন্তের স্বার্থেই ধৃতকে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। গত ৭ অগস্ট সবংয়ের সজনীকান্ত মহাবিদ্যালয়ে ছাত্র কৃষ্ণপ্রসাদ জানাকে পিটিয়ে খুনের অভিযোগ ওঠে। ওই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত সাত জন গ্রেফতার হলেন। এরমধ্যে তিন জন টিএমসিপি- র। চার জন সিপি- র।
অন্য দিকে, সবংয়ের ঘটনায় ধৃত সিপি কর্মী পল্টু ওঝা এবং সিপি পরিচালিত সবং কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক সৌমেন গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘ভয়েস স্যাম্পেল’ সংগ্রহ করতে চেয়ে এদিন মেদিনীপুর সিজেএম আদালতে আবেদন জানায় পুলিশ। ওই আবেদন মঞ্জুর হয়। পুলিশের দাবি, ওই দুই ছাত্রনেতার কথোপকথনের একটা অংশ তাদের কাছে রয়েছে। কথোপকথনের এই অংশ মামলার তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। এ ক্ষেত্রে কন্ঠস্বর মিলিয়ে দেখা জরুরি। তাই কন্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ করা দরকার।
এ দিনই জেলা পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষের অপসারণ চেয়ে বৃহস্পতিবার কালেক্টরেটে স্মারকলিপি দেয় ছাত্র পরিষদ। সংগঠনের এক প্রতিনিধি দল এ দিন অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) আর অর্জুনের সঙ্গে দেখা করে। জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনার উদ্দেশে তাঁর কাছে একটি স্মারকলিপি দেয়। সিপি’র রাজ্য সহ-সভাপতি মহম্মদ সইফুল বলেন, “পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের নেতাদের বাঁচাতে আসরে নেমে পড়েছেন। মিথ্যা অভিযোগে ছাত্র পরিষদের কর্মীদের গ্রেফতার করছেন, হয়রান করছেন এবং পুলিশি ঘেরাটোপে অত্যাচার করছেন।”তাঁর দাবি, যা হচ্ছে পুলিশ প্রশাসনের প্রত্যক্ষ মদতে। ছাত্র পরিষদ তাই জেলা পুলিশ সুপারের অপসারণ দাবি করছে। সবং কাণ্ডে প্রকৃত দোষীদের আড়াল করার প্রতিবাদে আজ, শুক্রবার মেদিনীপুর শহরের গাঁধীমূর্তির পাদদেশের সামনে অবস্থানে বসবে জেলা কংগ্রেস।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy