পড়শি বাংলাদেশে অশান্তি শুরু হওয়ার পরেই এ পারে পরিস্থিতির ফায়দা তুলতে আসরে নেমে গিয়েছিল বিজেপি। এই প্রশ্নে সিপিএম কেন আরও সক্রিয় ভূমিকা নিয়ে পথে নামল না, সেই চর্চা শুরু হয়েছিল দলের নানা জেলা সম্মেলনে। ঢাকার ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের বাড়িতে নতুন করে ভাঙচুর হতেই এ বার সরব হল সিপিএম। এই নিয়ে বিজেপি ফের মেরুকরণের তাস খেলার আগেই মৌলবাদী তাণ্ডবের কড়া সমালোচনায় মুখর হলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম।
হুগলি জেলার ডানকুনিতে আগামী ২২ থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি সিপিএমের ২৭তম রাজ্য সম্মেলন হতে চলেছে। রাজ্য সম্মেলনের আগে দলের বিদায়ী রাজ্য কমিটির শেষ বৈঠক ছিল বুধ ও বৃহস্পতিবার। সেই বৈঠকের পরে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে স্বতঃপ্রণোদিত ভাবেই দলের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়ে সেলিম বলেছেন, “এই হামলা শুধু একটা বাসভবনের উপরে নয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের চিহ্নগুলির উপরে আক্রমণ চালানো হচ্ছে। যারা বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাসকে বিকৃত বা শেষ করতে চায়, তারাই এই হামলা চালাচ্ছে।’’ এ দেশের পরিস্থিতির প্রসঙ্গ টেনে তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘ইতিহাসের উপরে এই আক্রমণের চেহারা আমরা এই দেশেও দেখছি। উগ্র-দক্ষিণপন্থী আক্রমণে ইতিহাস মুছে ফেলা যায় না।”
এই সূত্রেই অযোধ্যায় রামমন্দিরে রামলালার মূর্তি প্রতিষ্ঠার দিন ভারত সত্যিকারের স্বাধীনতা পেয়েছিল বলে আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত যে মন্তব্য করেছিলেন, তারও তীব্র বিরোধিতা করেছেন সেলিম। তাঁর সংযোজন, “এখানেও নৈরাজ্য-বিভাজনের শক্তি বাংলাদেশকে দেখে উৎসাহিত হচ্ছে। ওখানে ভারত-বিদ্বেষের নাম করে সংখ্যালঘু বিদ্বেষ, প্রগতি-বিরোধী ও ঘৃণার প্রচার চলছে। ওখানে জামাত, এখানে আরএসএস-বিজেপি একই কাজ করছে।”
জেলা সম্মেলনে দলীয় নীতি মেনে চলার ক্ষেত্রে ‘ব্যতিক্রম’ নিয়ে রাজ্য কমিটির বৈঠকের প্রথম দিনেই প্রশ্ন উঠেছিল। সেলিম অবশ্য ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন, ‘অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা’ হিসেবে কিছু ব্যতিক্রম হয়েছে। এরই পাশাপাশি দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা কমিটির সঙ্কট মেটাতে হস্তক্ষেপ করছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। সিপিএম সূত্রের খবর, রাজ্য কমিটির জবাবি ভাষণে রাজ্য সম্পাদক জেলা নেতৃত্বকে বার্তা দিয়েছেন, দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা সম্মেলনে যে ১৭ জন প্রতিবাদ করে নতুন কমিটি থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন, তাঁদের কমিটিতে রাখতে হবে। জেলার যে চার জনকে কমিটি থেকে বাদ দেওয়া নিয়ে গোলমাল বেধেছিল, তাদের মধ্যে অন্তত দু’জনকে অন্তর্ভুক্ত করার কথাও বলা হয়েছে। সমস্যার মীমাংসা করতে রাজ্য সম্মেলনের আগেই দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে বসতে পারেন দলের রাজ্য নেতৃত্ব। প্রসঙ্গত, রাজ্য কমিটির শেষ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দলের তদন্তের মুখে পড়া পশ্চিম মেদিনীপুরের প্রাক্তন জেলা সম্পাদক সুশান্ত ঘোষ।
সেলিম জানিয়েছেন, নিহত চিকিৎসকের জন্মদিন এবং আর জি করের ঘটনার ছ’মাস পূর্তি উপলক্ষে আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি কলেজ স্কোয়ার থেকে শ্যামবাজার পর্যন্ত যে প্রতিবাদ মিছিলের ডাক দেওয়া হয়েছে নির্যাতিতার বাবা-মা ও ‘অভয়া মঞ্চে’র তরফে, তাতে পূর্ণ সমর্থন করে বিচারের দাবিতে শামিল হবেন বাম কর্মী-সমর্থকেরা।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)