প্রতীকী ছবি।
বিধানসভা ভোটে বেনজির ভরাডুবির পরেও তাঁরা আগ বাড়িয়ে জোট ভাঙতে চান না বলে রাজ্য কমিটিতে জানিয়ে দিয়েছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। সিপিএমের অন্দরে প্রশ্ন অবশ্য মূলত উঠেছে আব্বাস সিদ্দিকীর ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টকে (আইএসএফ) নিয়ে। কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতার ব্যাপারে পূর্ব বর্ধমানের মতো জেলা ছাড়া রাজনৈতিক আপত্তি সিপিএমে তেমন কারও নেই। এই পরিস্থিতিতে ভবিষ্যতের পথ ঠিক করতে ‘ধীরে চলো’র নীতি নিয়ে এগোতে চাইছে জোট শিবির।
রাজ্যে আগামী দিনের কৌশল ঠিক করার আগে আরও বিশদে নির্বাচনী পর্যালোচনা চায় সিপিএম। সেই লক্ষ্যেই আগামী ১৯-২০ জুন পরবর্তী রাজ্য কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছে। এলাকা ধরে বুথ ও শাখা স্তরের পর্যালোচনা রিপোর্ট তৈরি করতে বলা হয়েছে জেলা নেতৃত্বকে। প্রদেশ কংগ্রেস অবশ্য এখনও ভোট-পরবর্তী কোনও প্রক্রিয়া শুরু করতে পারেনি। নির্বাচনের পর্যালোচনার জন্য মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অশোক চবনের নেতৃত্বে যে কমিটি গড়েছে এআইসিসি, তারা চলতি সপ্তাহে প্রদেশ নেতৃত্বের সঙ্গে অনলাইন আলোচনা শুরু করবেন বলে সূত্রের খবর। এরই মধ্যে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলতে চেয়ে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট থেকে বার্তা পাঠানো হয়েছিল প্রদেশ কংগ্রেসের কাছে। কিন্তু প্রদেশ কংগ্রেস আপাতত সেই প্রয়াস পিছিয়ে দিয়েছে। কার্যত লকডাউনের বিধিনিষেধ ওঠার পরে আলোচনার কথা ভাবা যাবে বলে কংগ্রেস নেতারা সিপিএম নেতৃত্বকে বলে রেখেছেন।
বস্তুত, ভবিষ্যতের প্রশ্নে কংগ্রেসের অন্দরে টানাপড়েন এখন তীব্র। এআইসিসি নেতৃত্বের একটি বড় অংশই মনে করেন, আগামী ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন ও মোদী-বিরোধী লড়াইয়ের কথা মনে রেখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশেই কংগ্রেসের দাঁড়ানো উচিত। স্বয়ং কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী তৃণমূল নেত্রীর প্রতি যথেষ্ট নমনীয়। কিন্তু কংগ্রেসের মধ্যে অন্য মত হল, অতীতে যখনই দু’দলের জোট হয়েছে, প্রাধান্য পেয়েছে তৃণমূল। এ বারের বিধানসভা ভোটের ফলের নিরিখে রাজ্যের কোনও আসনেই, এমনকি বহরমপুরেও কংগ্রেস এগিয়ে নেই। এমতাবস্থায় কংগ্রেস দর কষাকষি করবে কী ভাবে? তৃণমূলই বা তাদের জায়গা দেবে কেন? প্রদেশ কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতার কথায়, ‘‘পরিস্থিতি খুবই জটিল। দ্রুত কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়াই সম্ভব নয়। সতর্ক হয়ে এগোতে হবে। তার পরে তো এআইসিসি-র সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।’’
বিধানসভা ভোটের ফল বিশ্লেষণ করেই সিপিএমের রাজ্য কমিটিতে পেশ করা রিপোর্টে এ বার দেখানো হয়েছে, ২০১৬ সালে বাম ও কংগ্রেসের জেতা ৭৬টি আসনের মধ্যে ৫২টিই এ বার তৃণমূলের দিকে চলে গিয়েছে। এর মধ্যে গত বার বামেদের জেতা ২৩ ও কংগ্রেসের ২৯টি আসন রয়েছে। আবার বিজেপি এ বার যে ৭৭টি আসন পেয়েছে, তার মধ্যে ৪৭টি ছিল আগে তৃণমূলের দখলে। সিপিএম নেতৃত্বের মতে, বাম ও কংগ্রেসের ভোটের বড় অংশই এ বার তৃণমূলকে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ফিরতে সাহায্য করেছে।
এমন সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আসা সরকারের সঙ্গে অকারণ সংঘাতে না গিয়ে ‘গঠনমূলক’ সমালোচনার পথে থাকার বার্তাই রাজ্য কমিটিতে দিয়েছেন সূর্যবাবু। করোনা মোকাবিলা ও কেন্দ্রের ‘অন্যায়ের’ বিরুদ্ধে রাজ্যের পাশেই এখন দাঁড়াবে সিপিএম। তার পরবর্তী পথ ঠিক হবে বিশদ পর্যালোচনার পরে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy