Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
CPM

মনোভাব অপছন্দ, অধীরের প্রস্তাবে তবু সমর্থন সিপিএমের

বাম ও কংগ্রেসের আসন সমঝোতায় মুর্শিদাবাদ বরাবরই কাঁটা। বিধানসভার ২০১৬ ও ২০২১ সালের ভোটে ওই জেলার একাধিক আসনে দু’পক্ষেরই প্রার্থী ছিল।

Picture of Biman Bose and Adhir Chowdhury.

বিমান বসু এবং অধীর চৌধুরী। ফাইল চিত্র।

সন্দীপন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৫:৪৭
Share: Save:

বালিগঞ্জে যা হয়নি, তা-ই হতে চলেছে সাগরদিঘিতে। কংগ্রেসের প্রস্তাব মেনে মুর্শিদাবাদের ওই বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে প্রার্থী না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সিপিএম। আগামী বছরের লোকসভা নির্বাচনের আগে স্বয়ং প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর জেলার ক্ষেত্রে এমন পদক্ষেপ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। তবে আগে আলোচনা করেই যে সমঝোতার পথে যাওয়া বাঞ্ছনীয়, প্রদেশ সভাপতিকে চিঠি দিয়ে তা মনে করিয়ে দিতে চলেছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট।

প্রাক্তন মন্ত্রী সুব্রত সাহার মৃত্যুতে সাগরদিঘি বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন হবে আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি। তৃণমূল কংগ্রেস সেখানে দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিজেপি দিলীপ সাহাকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। ওই কেন্দ্রে কংগ্রেসের প্রার্থী ব্যারন বিশ্বাসকে সমর্থন এবং সক্রিয় ভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য বামেদের জেলা নেতৃত্বকে যেন তিনি বলেন, এই অনুরোধ জানিয়ে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুকে চিঠি দিয়েছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীরবাবু। প্রার্থী ব্যারনের নামে বৃহস্পতিবার এআইসিসি-ও সিলমোহর দিয়ে দিয়েছে। এ ভাবে প্রার্থী ঠিক করে ফেলে সমর্থন চাওয়ার পদ্ধতি নিয়ে রাজ্য সিপিএম নেতৃত্বের বড় অংশেরই আপত্তি আছে। কিন্তু বিজেপি ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াইকে ‘দুর্বল’ করা ঠিক হবে না, এই যুক্তিতে কংগ্রেসের প্রস্তাব মেনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিপিএম।

কয়েক মাস আগে বালিগঞ্জ কেন্দ্রে বিজেপি ছেড়ে আসা বাবুল সুপ্রিয় যখন তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছিলেন, তখন এনআরসি-বিরোধী আন্দোলনের স্বার্থে সিপিএম প্রার্থী সায়রা শাহ হালিমকে সমর্থন করেছিল বিভিন্ন বিরোধী দল ও সংগঠন। কংগ্রেসের অন্দরেও একাংশ চেয়েছিল, বিরোধী ভোট বিভাজন রুখতে বালিগঞ্জে প্রার্থী না দিয়ে সিপিএমকেই সমর্থন করা হোক। কিন্তু প্রদেশ কংগ্রেস সেখানে শেষ পর্যন্ত আলাদা প্রার্থী দিয়েছিল। ঘটনা হল, সাগরদিঘির ক্ষেত্রে বিমানবাবুকে লেখা চিঠিতে অধীরবাবু যুক্তি দিয়েছেন, দু’পক্ষ একসঙ্গে লড়াই করলে ভোটের মেরুকরণ এবং বিরোধী ভোটের বিভাজন আটকানো যাবে! তাঁর মতে, ‘লুটেরা, চোর, দুর্নীতিগ্রস্তদের হাত থেকে বাংলাকে বাঁচানো’ যেখানে উদ্দেশ্য, তাতে যৌথ লড়াইয়ে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।

সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, ‘‘গত বছর বিধানসভা ভোটের সময়ে মুর্শিদাবাদেই বিমানদা’র একাধিক প্রস্তাব ওঁরা (কংগ্রেস) মানেননি। অথচ লোকসভা ভোটে সমঝোতা না হওয়া সত্ত্বেও আমরা কিন্তু স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে বহরমপুর ও মালদহ দক্ষিণ কেন্দ্রে প্রার্থী দিইনি। এ বারও সাগরদিঘির ব্যাপারে জেলা স্তরে কথা বলার সময়ে ওঁরা স্পষ্ট করে কিছু জানাননি। পরে প্রার্থীর নাম জানিয়ে সমর্থন চেয়েছেন। তবু বিজেপি ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের স্বার্থে আমরা জটিলতা চাইছি না।’’ এই যুক্তি প্রদেশ কংগ্রেসকে লিখিত ভাবেও জানিয়ে দেওয়া হবে বলে বাম সূত্রের খবর।

বাম ও কংগ্রেসের আসন সমঝোতায় মুর্শিদাবাদ বরাবরই কাঁটা। বিধানসভার ২০১৬ ও ২০২১ সালের ভোটে ওই জেলার একাধিক আসনে দু’পক্ষেরই প্রার্থী ছিল। সূত্রের খবর, এ বার সাগরদিঘির ক্ষেত্রে সিপিএমের জেলা সম্পাদক জামির মোল্লা কংগ্রেসের মনোভাব আগে জানতে চেয়েছিলেন, কংগ্রেস জেলা সভাপতি আবু হেনা তখন স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি। জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য এবং এরিয়া কমিটির এক সম্পাদকের মধ্যে কাউকে প্রার্থী করা হবে বলে প্রস্তুতি চলছিল সিপিএমে। প্রদেশ কংগ্রেসের চিঠির পরে রাজ্য সিপিএম দলের জেলা নেতৃত্বকে বার্তা দিয়েছে, প্রার্থী দেওয়ার দরকার নেই।

প্রদেশ কংগ্রেসের এক নেতার বক্তব্য, ‘‘বৃহত্তর স্বার্থে লড়তে গেলে কিছু অসুবিধাকে অগ্রাহ্য করেই এগোতে হবে। আমন্ত্রণ পেয়েও সিপিএম ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’য় আসেনি! তার পরেও তো আমরা সমঝোতা চাইছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

CPM Congress Adhir Ranjan Chowdhury
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE